ঢাকায় মহাসমাবেশের চিন্তা শ্রমিক সংগঠনগুলোর

শ্রমিক সংগঠনগুলোর একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, কনভেনশনে ৪ ঘণ্টা শ্রমজীবী মানুষের দাবি-দাওয়ার কথা শোনা হবে।

ঢাকায় মহাসমাবেশের চিন্তা শ্রমিক সংগঠনগুলোর

প্রথম নিউজ, অনলাইন: সরকার পতনের আন্দোলনের গতি বাড়াতে এবার শ্রমজীবীদের ঐক্যবদ্ধ করছে বিএনপি। এরই অংশ হিসেবে ঢাকায় শ্রমজীবী কনভেনশন করবে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলসহ সরকার বিরোধী ১৫টি শ্রমিক সংগঠন। এই কনভেনশন থেকে শ্রমিক মহাসমাবেশের ডাক দিবে তারা। আগামী মাসে যেকোনো সময় ঢাকায় মহাসমাবেশ করার চিন্তা-ভাবনা করছে সংগঠনগুলো। এজন্য প্রতিনিয়তই শ্রমিক সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক করছেন জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের শীর্ষ নেতারা। ইতিমধ্যে কর্মসূচির সকল ধরনের প্রস্তুতিও সম্পূর্ণ হয়েছে। আগামী শনিবার বেলা ২টায় ঢাকা মহানগর নাট্যমঞ্চে শ্রমজীবী কনভেনশন অনুষ্ঠিত হবে। এতে ১৫টি শ্রমিক সংগঠনের প্রায় ১০ হাজার প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করবেন।

শ্রমিক সংগঠনগুলোর একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, কনভেনশনে ৪ ঘণ্টা শ্রমজীবী মানুষের দাবি-দাওয়ার কথা শোনা হবে। তাদের সব কথা ও দাবি শুনে একদফা ‘দাবিতে’ মহাসমাবেশের ঘোষণা দেয়া হবে। এজন্য সরকার পতনে একদফা দাবিতে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলকে আগে থেকেই রাজপথে সক্রিয় করেছে বিএনপি।

সংগঠনটিতে শ্রমিক শ্রেণির অংশগ্রহণ আগের চেয়ে অনেক বেশি বেড়েছে। সমপ্রতি শ্রমিক দল ৭টি বিভাগে এবং জেলা শহরে শ্রমিক সমাবেশ ও পদযাত্রা করেছে। আর সামনের রাজপথের আন্দোলনে শ্রমিকদের অংশগ্রহণ আরও বাড়াতে শ্রমিক দলকে সংগঠিত করা হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে শ্রমজীবী কনভেনশন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

এবার সরকারবিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমর্থনপুষ্ট এবং নির্দলীয় শ্রমিক সংগঠনকে নিয়ে মাঠে নামার পরিকল্পনা করছে বিএনপি। এর মধ্যে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল ছাড়াও বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশন, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক জোট, বাংলাদেশ শ্রমিক অধিকার পরিষদ, বিপ্লবী শ্রমিক সংহতি, বাংলাদেশ বহুমুখী শ্রমজীবী ও হকার সমিতি, শ্রমিক আন্দোলন, সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক জোট, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ মজলিস, জাতীয় শ্রমিক পার্টিসহ আরও অনেকে রয়েছে। 

সূত্র জানায়, সারা দেশে শ্রমজীবী মানুষকে সংঘবদ্ধ করতে এবং তাদের রুটি-রুজির বিষয়ে সচেতন করতে ১০ বিভাগ ছাড়াও ৩৫টি জেলায় বৈঠক করেছেন শ্রমিক দলের নেতারা। এবারে তারা সকল দলমতনির্বিশেষে মধ্য, ডান, বাম শ্রমিক সংগঠন মিলে কনভেনশন করার উদ্যোগ নিয়েছেন। শ্রমিক কনভেনশনের স্লোগান হচ্ছে- ‘মজুরি, নিরাপদ কর্মপরিবেশ, ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার ও গণতান্ত্রিক শ্রম আইন প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে ঐক্যবদ্ধ হোন’। এই কনভেনশনকে মুক্তির লড়াইয়ে নতুন মাত্রা হিসেবে দেখছেন শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা। তারা বলছেন, এই কনভেনশন বাংলাদেশের শ্রমিকের অধিকার এবং চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ করবে। 

এদিকে কর্মসূচির ভেন্যু নিয়ে দেখা দিয়েছিল জটিলতা। আয়োজকরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এবং ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে কনভেনশন করতে চাইলেও ভেন্যু দুটি আগেই বুকিং থাকায় তা পাওয়া যায়নি। পরে বাধ্য হয়ে শ্রমিক সংগঠনগুলো ঢাকা মহানগর নাট্যমঞ্চে কর্মসূচি পালন করছে বলে জানা গেছে।

কনভেনশন আয়োজনের সমন্বয়কারী শ্রমিক নেতা এডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস মানবজমিনকে বলেন, একটি বৃহত্তর জাতীয় শ্রমিক ঐক্য গড়ে তোলাই জাতীয় শ্রমিক কনভেনশনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। বর্তমানে শ্রমিক শ্রেণি মনে করে বাংলাদেশের এক ঐতিহাসিক রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পূর্ব মুহূর্তে তাদেরও দায়বদ্ধতা রয়েছে। সেই দায় থেকেই বাংলাদেশের শ্রমিক আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী সংগঠনগুলোর মধ্যে যারা মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার, ভোটের অধিকার, শ্রমিক অধিকার এবং মানবাধিকারে বিশ্বাস করে তারা ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। রাজনীতির এই উত্তেজনাকর মুহূর্তে জাতীয় কনভেনশন নিঃসন্দেহে মানুষের মুক্তির লড়াইকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনের এ এক নতুন মাত্রা।

প্রায় চল্লিশ বছর পর ৩০শে সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর নাট্যমঞ্চে দ্বিতীয় বারের মতো দেশে শ্রমিক কনভেনশন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এদিন জাতীয় কনভেনশনে মধ্য, বাম, ডান মিলে ১৫টি শ্রমিক সংগঠন এবং শ্রমিক দল অংশ নিবে। যৌথভাবেই এই কনভেনশন আয়োজন করা হচ্ছে। এর আগে ১৯৮৪ সালে প্রথম শ্রমিক কনভেনশন হয়। ওই কনভেনশনের মাধ্যমে শ্রমিক কর্মচারী ঐক্যপরিষদ (স্কপ) গঠিত হয়। এই স্কপ সামরিক স্বৈরাচার (হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ) বিরোধী আন্দোলনে রাজপথে অত্যন্ত শক্তিশালী ভূমিকা পালন করে।