জনগণের আস্থা ফেরাতে নির্বাচন ও সংস্কারের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ দাবি জামায়াত আমিরের

জনগণের আস্থা ফেরাতে নির্বাচন ও সংস্কারের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ দাবি জামায়াত আমিরের

প্রথম নিউজ, অনলাইন: জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আমরা সরকারের কাছে সংস্কার ও নির্বাচনের রোডম্যাপ দাবি করেছিলাম। সুস্পষ্ট রোডম্যাপ না থাকায় জনগণের মধ্যে সংশয় তৈরি হয়েছে। জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা সরকারের প্রতি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ দাবি করছি। এরপর আমাদের দাবি ছিল ফ্যাসিবাদের সুষ্ঠু বিচার। এ বিচার প্রক্রিয়া অনেক দীর্ঘ। তবে জাতির কাছে বিশ্বাসযোগ্য বিচারকার্য অনতিবিলম্বে দৃশ্যমান হতে হবে। শনিবার সকালে রাজধানী ঢাকার মগবাজারস্থ আল-ফালাহ মিলনায়তনে এক অধিবেশনে তিনি এসব কথা বলেন।

শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে সংগঠনের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীরবৃন্দ, ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেলবৃন্দসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এবং কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার (পুরুষ ও মহিলা) সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন। সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান মজলিসে শূরার অধিবেশনে উদ্বোধনী বক্তব্য পেশ করেন। 

উদ্বোধনী বক্তব্যে জামায়াতের আমির নিজ দলের দায়িত্বশীলদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, সকল ক্ষেত্রে আমাদের দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। সকল ব্যাপারে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে। সংগঠনের সর্বস্তরের নেতাকর্মীকে সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার ব্যাপারে দিক নির্দেশনা দিতে হবে। 

সেনাবাহিনী প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সেনাবাহিনী আমাদের গর্বের বিষয়। ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ বাঁকে তাদের মর্যাদাপূর্ণ অবদান রয়েছে। সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করা উচিত নয়। জাতির প্রত্যাশা সেনাবাহিনী স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার মাধ্যমে দেশ ও জাতির সেবা করবে এবং দেশের রাজনৈতিক দলগুলো ও সেনাবাহিনী যার যার অবস্থান থেকে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের দিকে নজর দিবে। 

জামায়াতের আমির বলেন, প্রধান উপদেষ্টা একাধিকবার বলেছেন জাতীয় নির্বাচন তিনি এ বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে সম্পন্ন করতে চান। এতে আমাদের আস্থা রয়েছে। এব্যাপারে আমরা সরকারকে সব ধরনের সহযোগিতা করতে চাই। 

তিনি বলেন, বর্তমানে আমরা জাতির একটি গুরুত্বপূর্ণ বাঁকে অবস্থান করছি। এই বাঁক সফলভাবে উত্তরণ করতে হবে। বিশেষ করে গত কয়েক দিনের ঘটনা প্রবাসীসহ দেশবাসীকে বিচলিত করেছে। এব্যাপারে জামায়াতে ইসলামী একটি দায়িত্বশীল সংগঠন হিসেবে সতর্ক দৃষ্টি রাখছে। আমরা দ্রুততম সময়ে কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের জরুরি সভা করে দেশের চলমান বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আলোচনায় আমরা বলেছি সংঘাত-সংঘর্ষ এবং কাদা ছোড়াছুড়ি করে জাতিকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দেওয়া একেবারেই সমীচীন হবে না। 

জামায়াতের আমির বলেন, জামায়াতের রাজনীতি দেশ ও জনগণের কল্যাণে। জামায়াত সবসময় জনগণের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে দলীয় পরিকল্পনা-কর্মসূচি রচনা ও পরিচালনা করে। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে কতিপয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। এই অনিশ্চয়তা উত্তরণে আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকে সর্বদলীয় ডায়ালগ করার আহ্বান জানিয়েছি। আমরা বিশ্বাস করি সকলের সন্তোষজনক আলোচনার মাধ্যমে জাতির আতঙ্ক ও আশঙ্কা দূর হবে এবং এ সংকটের উত্তরণ ঘটবে ইনশাআল্লাহ। 

তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি দুটি স্পর্শকাতর বিষয় জাতির সামনে এসেছে। মানবিক করিডর ও চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর ব্যবস্থাপনা। এব্যাপারে সিকিউরিটি এক্সপার্ট এবং দেশের সকল পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে যথাযথ সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। অথবা নির্বাচিত পার্লামেন্ট-এর জন্য রেখে দেওয়া যেতে পারে।

ফিলিস্তিন প্রসঙ্গে আমীরে জামায়াত শান্তিকামী বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ফিলিস্তিনের জনগণ দশকের পর দশক ধরে নির্যাতিত এবং নিষ্পেষিত হচ্ছে। গাজা ও ফিলিস্তিনে মানবতাবিরোধী যুদ্ধ চলছে। আমরা জাতিসঙ্ঘসহ শান্তিকামী ও মানবতাবাদী বিশ্বসম্প্রাদায়কে যুদ্ধ বিরতি নয়, স্থায়ীভাবে যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানাচ্ছি। সিরিয়াকে সে দেশের জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী চলতে দেওয়া উচিত বলেও তিনি মন্তব্য করেন। আরাকান প্রসঙ্গে আমীরে জামায়াত বলেন, আরাকানের রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিয়ে সম্মান ও নিরাপত্তার সঙ্গে পুনর্বাসিত করতে হবে। এব্যাপারে জাতিসংঘকেই প্রধান ভূমিকা পালন করতে হবে।  

সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা সমাজের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। আপনাদেরকে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ বলা হয়। আমাদের প্রত্যাশা আপনাদের ইতিবাচক ভূমিকা সমাজকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আসুন আমরা কালোকে কালো এবং সাদাকে সাদা বলি। 

সবশেষে তিনি বলেন, বাংলাদেশকে জনপ্রত্যাশার জায়গায় পৌঁছে দেয়ার জন্য আমাদের প্রিয় সংগঠন অতীতে অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছে; ভবিষ্যতের জন্যও আমরা প্রস্তুত। আল্লাহ তায়ালার বিধানে বিশ্ব মানবতার কল্যাণ নিশ্চিত করা হয়েছে। এই বিধানের মাধ্যমেই সব ধর্মের মানুষের জীবন-সম্পদ ও ইজ্জতের নিরাপত্তা এবং তাদের নিজ নিজ অধিকার নিশ্চিত করার আমাদের লড়াই-সংগ্রাম, চেষ্টা-প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। আসুন আমরা একটি শান্তিপূর্ণ, দুর্নীতিমুক্ত মানবিক কল্যাণ রাষ্ট্র গড়ার প্রত্যয়ে ঐক্যবদ্ধ হই। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন প্রিয় দেশকে সকল ধরনের ক্ষতি ও ষড়যন্ত্রের হাত থেকে রক্ষা করুন। অনৈক্য ও বিভাজন তৈরি না করি। দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে দেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দেই।