গোপালগঞ্জে মাঠ দখলে আওয়ামী লীগ চুপচাপ বিএনপি
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) গোপালগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি রবীন্দ্রনাথ অধিকারী বলেন, গোপালগঞ্জে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের তৎপরতা নেই।
প্রথম নিউজ, গোপালগঞ্জ : রাজনৈতিকভাবে গোপালগঞ্জে আওয়ামী লীগ মাঠ দখলে রেখেছে। আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলটি আরও চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। ইতিমধ্যেই গোপালগঞ্জের ১টি পৌর, ২টি উপজেলা ও জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত ১লা ডিসেম্বরে জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে পূর্বের কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলী খানকে সভাপতি ও জিএম শাহাবুদ্দিন আজমকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে দলের মধ্যে গোপনীয় গ্রুপিং সৃষ্টি হলেও সেটি কখনোই প্রকাশ্যে আসেনি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বর্তমান সভাপতি শেখ হাসিনার নিজ জেলা হওয়ায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকাকালেও বহু চেষ্টা করেও কখনো এই জেলাটিকে নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেনি বিএনপি। তৈরি হয়নি শক্তিশালী অবস্থান। জেলায় ৩টি সংসদীয় আসন রয়েছে। প্রতিটি আসনে রয়েছে আওয়ামী লীগের এমপি। বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রীও গোপালগঞ্জ-৩ (টুঙ্গিপাড়া-কোটালীপাড়া) আসনের এমপি।
অপরদিকে বর্তমান গোপালগঞ্জ জেলা বিএনপি’র কোনো নিয়মিত কমিটি নেই। ২ বছর আগে শরীফ রাফিকুজ্জামানকে আহ্বায়ক করে জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। রে বিএনপি’র প্রবীণ নেতা সাবেক জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক মরিনুজ্জামান পিনু দল থেকে পদত্যাগ করেন ও আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব এম মুনছুর আলী ইন্তেকাল করেন। বর্তমানে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিএনপি ঘরোয়া পরিবেশে ছোটখাটোভাবে নিয়ম রক্ষার রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করলেও খোলা মাঠে একদম চুপচাপ। ঘরোয়াভাবে ছোটখাটো যে প্রোগ্রামগুলো হচ্ছে সেগুলোর নেতৃত্ব দিচ্ছে জেলা যুবদল। মূলত গোপালগঞ্জে বিএনপিকে টিকিয়ে রাখতে যুবদলের কয়েকজন নেতাই সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে অন্য জেলায় বিএনপি যে ধরনের দলীয় কর্মসূচি পালন করছে গোপালগঞ্জে তার ছিটেফোঁটাও নেই। এদিকে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন দলীয় ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে ফেস্টুন, ব্যানার, তোরণ তৈরি করে সাজ সাজ পরিবেশ সৃষ্টি করলেও বিএনপি শুধু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্বল্পপরিসরে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে কোনো রকম টিকে থাকার চেষ্টা করছে।
অপরদিকে জাতীয় পার্টি গঠনের পর গোপালগঞ্জে এই সংগঠনের শক্ত একটি অবস্থান তৈরি করেও নেতৃত্বের দুর্বলতার কারণে বেশি দিন ধরে রাখতে পারেনি। বর্তমানে জাতীয় পার্টির জেলা উপজেলা পর্যায়ের দৃশ্যমান কোনো অফিস বা কার্যক্রম নেই। পূর্বে এই জেলায় জামায়াত গোপনীয়ভাবে সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনা করলেও বর্তমানে সেটিও বন্ধ। গোপালগঞ্জে শুধু আওয়ামী লীগের শরিকদল হাসানুল হক ইনুর জাসদ জেলা সদরে একটি অফিস টিকিয়ে রেখেছে। অপরদিকে গোপালগঞ্জে কমিউনিস্ট পার্টি নামমাত্র থাকলেও দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রম নেই। অন্য রাজনৈতিক দল কখনোই গোপালগঞ্জ জেলায় শক্তিশালী কোনো কমিটি গঠন করে দলীয় অফিস প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। গোপালগঞ্জে আওয়ামী লীগের মূল দলের সম্মেলনের পর সহযোগী সংগঠনের কমিটি তৈরির দিকে নজর দিচ্ছে। ইতিমধ্যে সহযোগী সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। এদিকে কেন্দ্র থেকে বিএনপি’র মূল দলসহ তাদের অঙ্গ সহযোগী সংগঠনগুলোকে ঢেলে সাজানোর নির্দেশনা থাকলেও এখন পর্যন্ত জেলা উপজেলায় তার কোনো প্রভাব পড়েনি। জেলা আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত সভাপতি মাহাবুব আলী খান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ ফজলুল করিম সেলিম-এর নেতৃত্বে গোপালগঞ্জে আওয়ামী লীগ সবসময়ই শক্ত একটি অবস্থানে রয়েছে। দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে আমরা তৃণমূল থেকে শুরু করে সকল পর্যায়ে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছি।
আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলকে আরও শক্তিশালী করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যাচ্ছি। গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি ও জেলা যুবদলের সভাপতি শিকদার শহিদুল ইসলাম লেলীন জানান, আমাদের দলের মধ্যে কোনো কোন্দল নেই। আমরা তৃণমূল থেকে দলকে সুসংগঠিত করার চেষ্টা করছি, ছোট করে হলেও কেন্দ্রঘোষিত প্রোগ্রামগুলো বাস্তবায়ন করছি। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে গোপালগঞ্জের মতো জেলায় ইচ্ছা থাকলেও প্রকাশ্যে সকল প্রোগ্রাম করা সম্ভব হচ্ছে না। আগামী নির্বাচনকে ঘিরে আমরা আরও সক্রিয় হবো। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) গোপালগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি রবীন্দ্রনাথ অধিকারী বলেন, গোপালগঞ্জে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের তৎপরতা নেই।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: