আদালত পাড়া থেকে তুলে নিয়ে অসুস্থ তরুণীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ
৯৯৯ এ এক পথচারীর ফোন পেয়ে সদর থানার পুলিশ শহরের বাহারছড়া এলাকায় গিয়ে ওই নারীকে উদ্ধার করে।
প্রথম নিউজ, কক্সবাজার: কক্সবাজারের আদালত পাড়া থেকে অস্ত্র ঠেকিয়ে তুলে নিয়ে একটি বাড়িতে আটকে রেখে অসুস্থ এক তরুণীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় সোমবার (১৪ মার্চ) রাতে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় চারজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও পাঁচজনকে আসামি করে এজাহার দিয়েছেন ভুক্তভোগী ওই তরুণী।
অভিযুক্তরা হলেন- কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার পোকখালী ইউনিয়নের মধ্যম পোকখালীর রমজান আলী মেম্বারের ছেলে বর্তমানে ঈদগাঁওর ফকিরাবাজার এলাকায় বসবাসকারী ফিরোজ আহমদ (৪৭), লোদা মিয়ার দুই ছেলে রাসেল উদ্দিন (৩৮) ও নুরুল ইসলাম এবং ঈদগাঁও ইসলামপুর ইউনিয়নের ফকিরা বাজার এলাকার মৃত আব্দুল গণির ছেলে মো. শরীফ। তাদের সহযোগী হিসেবে আরও চার-পাঁচজন এ ঘটনায় অংশ নেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ঈদগাঁওর ঢালার দুয়ার এলাকার ভুক্তভোগী ওই নারীকে ফিরোজ আহমদ ও মো. শরীফ বিভিন্ন সময় উত্ত্যক্ত করে আসছিলেন। তাদের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তাকে ধর্ষণ ও হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিলেন তারা।
সোমবার (১৪ মার্চ) দুপুর ২টার দিকে কক্সবাজার আদালত পাড়ায় অ্যাডভোকেট একরামুল হুদার চেম্বার থেকে বের হওয়ার সময় তারা তরুণীকে ঘিরে ফেলেন। এক পর্যায়ে ফিরোজ ও শরীফ তাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। বাধা দিলে অজ্ঞাতপরিচয় আরও কয়েকজন এসে তরুণীকে হাত-পা ও মুখ চেপে ধরে একটি নোহা গাড়িতে তুলেন। এ সময় ফিরোজ মেয়েটির গলায় থাকা ১২ আনা ওজনের স্বর্ণের চেইন এবং সঙ্গে থাকা টাকা নিয়ে নেন।
পথচারীরা তাকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে অভিযুক্তরা গাড়ি নিয়ে কক্সবাজার ল্যাবরেটরি স্কুল সংলগ্ন (বাহারছড়া) ফিরোজের আত্মীয় ফজল কাদেরের টিনশেড বাসায় নিয়ে একটি রুমে আটকে রাখেন। এরপর ফিরোজ ও শরীফ তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যার ভয় দেখিয়ে ধর্ষণ করেন। পরে একইভাবে নুরুল ইসলামও তাকে ধর্ষণের পর তরুণীর মোবাইল ফোন ও টাকা নিয়ে চলে যান।
কিছুক্ষণ পর রাসেল উদ্দিন রুমে এসে নিজেকে পুলিশ কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে বিষয়টি কাউকে জানালে এবং বেশি বাড়াবাড়ি করলে মানবপাচার মামলায় চালান করে দিবে বলে হুমকি দেন। একপর্যায়ে রাসেল উদ্দিনও তাকে ধর্ষণ করেন। একপর্যায়ে তরুণীর গোপনাঙ্গ দিয়ে রক্তপাত শুরু হলে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন। এরপর রাসেল ও শরীফ তাকে টানা হেছড়া করে গেটের বাইরে রাস্তায় রেখে আসেন। এমন দৃশ্য দেখে রাস্তায় থাকা এক ব্যক্তি তাৎক্ষণিক জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ কল দিলে অভিযুক্তরা পালিয়ে যান। পরে পুলিশ এসে তরুণীকে উদ্ধার করে।
ভুক্তভোগী তরুণী জানান, গত বছর বর্ষায় এক রাতে তার বাড়িতে দুর্বৃত্তরা হামলা করে। এ সময় তারা ক্ষুর দিয়ে তার নাক, ঠোঁট কেটে নিয়ে শরীরের নানা জায়গায় তাকে ছুরিকাঘাত করে। এ ঘটনায় দীর্ঘ কয়েক মাস চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন থাকার পর সম্প্রতি বাড়ি ফিরেন তিনি। এ ঘটনায় মামলা হলে চিহ্নিত ডাকাত মোরশেদ আত্মসমর্পণ করেন। ১৫ মার্চ সেই মামলার ধার্য তারিখ। তার জামিনের বিরোধিতা ও ন্যায় বিচার পেতে আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করতে আদালত পাড়ায় আসেন তিনি। সোমবারের ঘটনা সংঘটনকারীরা মোরশেদসহ অপরাধীদের নিয়ন্ত্রক। তার জামিনের যেন বিরোধিতা না করতে পারি এজন্যই এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলেও ধারণা তার।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, এমন একটি ঘটনার বিষয়ে এক নারী কল করেছিলেন। ৯৯৯-এ কল দেওয়ার পর পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েছিল জেনে এজাহার নিয়ে থানায় যেতে ভুক্তভোগীকে পরামর্শ দেওয়া হয়। ওসিকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, গুরুত্ব সহকারে যেন এ ঘটনায় ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এজাহার জমা হয়েছে, নিয়মমতো আইনি ব্যবস্থা হবে।
তবে মঙ্গলবার সকালে কক্সবাজার সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সেলিম উদ্দিন বলেন, ৯৯৯ এ এক পথচারীর ফোন পেয়ে সদর থানার পুলিশ শহরের বাহারছড়া এলাকায় গিয়ে ওই নারীকে উদ্ধার করে। তাকে আটকে রাখার অভিযোগ ওঠা বাড়িতে ঢুকলে তারা জানায় ঘটনাটি পারিবারিক কলহ। এরপর কোনো অভিযোগ থাকলে ওই নারীকে থানায় আসতে বলে পুলিশ চলে যায়। সন্ধ্যার পর ওই নারী থানায় গেলেও ডিউটি কর্মকর্তা লিখিত এজাহার আনতে বলার পর বেরিয়ে আর আসেনি। এখনো পর্যন্ত এজাহার পাইনি।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:
https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews