অস্থির আটা-চিনির বাজার
প্রথম নিউজ, অনলাইন : নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি মানুষকে স্বস্তি দিচ্ছে না। প্রতিনিয়তই কোনো না কোনো পণ্যের দাম বাড়ছে। সঙ্গে বাড়ছে মানুষের নাভিশ্বাস। ব্যয় কমিয়েও আয়ের সঙ্গে সমন্বয় করতে হিমশিম খাচ্ছে মানুষ। বর্তমানে আটা আর চিনি নতুন করে অস্থিরতা তৈরি করছে। বাজারের সব দোকানে চিনি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বিক্রি হচ্ছে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়েও বেশিতে। আটার দামও বেড়েছে কেজিতে ১০-১৫ টাকা পর্যন্ত। নিত্যপ্রয়োজনীয় এসব পণ্যের ঊর্ধ্বমুখিতে মানুষের কষ্ট বাড়ছে। ক্রেতারা জানান, বাজার করতে এসে তাদের হিসাব মিলছে না।
এভাবে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি হতে থাকায় তাদের জীবন আরও দুর্বিষহ হয়ে পড়ছে। গতকাল সরজমিন রাজধানীর খিলগাঁও ও মালিবাগ বাজার ঘুরে দেখা যায়, সব দোকানেই প্যাকেটজাত ও খোলা আটার দাম বেড়েছে। এখন প্রতিকেজি খোলা আটা বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা। যা আগে ছিল ৫০-৫৫ টাকা কেজি। আর দুই কেজি ওজনের প্যাকেটজাত আটা বিক্রি হচ্ছে ১৪৫-১৫০ টাকা। যা আগে ছিল ১২৫-১৩৫ টাকা। মালিবাগ বাজারের মুদি দোকানি সুমন বলেন, হঠাৎ করেই আটার দাম বেড়ে গেছে। কেজিতে ১০-১৫ টাকা করে বাড়ছে। তেলের দাম বাড়ানোর সময়ই আটার দামও বাড়ছে। মোবারক হোসেন নামের এক ক্রেতা বলেন, মানুষ এক বেলা রুটি খাবে তাও উপায় নাই।
চাল-ডালের দাম তো বেশিই, এখন আটার দামও বাড়ছে। জোবায়দা বেগম বলেন, সকালে রুটি বানিয়ে সন্তানকে টিফিন দেই। এখন তাও দেখি দেওয়া যাবে না। আগে আটা মানুষ খেতো না। আর এখন ৬৫ টাকা হয়ে গেছে। সবকিছুর দাম বাড়ে মানুষের দাম বাড়ে না। ব্যবসায়ীদের দাবির প্রেক্ষিতে চিনির দাম নির্ধারণ করে দেয় সরকার। প্রতি কেজি খোলা চিনি ১০২ ও প্যাকেটজাত চিনি ১০৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়। তবে বাজারে সেই নির্ধারিত দামে চিনি বিক্রি হচ্ছে না। এমনকি সব দোকানেও চিনি বিক্রি হচ্ছে না। সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি করতে না পরায় চিনি বিক্রি বন্ধ রেখেছেন বলে জানান খুচরা ব্যবসায়ীরা। বাজারে এখন সব ধরনের চিনি বিক্রি হচ্ছে ১১৫-১২০ টাকা কেজিতে। খিলগাঁও বাজারের ব্যবসায়ী জুবায়ের হোসেন বলেন, বাজারে চাহিদামতো চিনি পাওয়া যায় না। আমাদের চিনি কেনাই পড়ে ১১২ টাকা। আমরা সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি করবো কীভাবে। তাই চিনি কিনিও না বিক্রিও করি না। এদিকে বাজারে আগের মতোই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে চাল। বাজারে প্রতিকেজি সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ৭০-৭৪ টাকায়। মাঝারি আকারের চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৬-৬০ টাকায় আর মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৮-৫৪ টাকায়।
খুচরা চাল ব্যবসায়ীরা জানান, সম্প্রতি নতুন করে সরু চালের দাম কমেনি কিংবা বাড়েনি। তবে মাঝারি আকারে চালের দাম কিছুটা বেড়েছে। খিলগাঁও বাজারের এক খুচরা চাল ব্যবসায়ী বলেন, চালের দাম আগে থেকেই বেশি। সামনে বাড়বে না কমবে বলা যাচ্ছে না। নতুন ধানের চাল আসলে দাম কমার কথা। বাজারে এখন শীত মৌসুমের সবজি ভরপুর। গত সপ্তাহের চেয়ে সবজির দাম কিছুটা কমলেও তা চড়া। বাজারে এখন প্রতিকেজি নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজিতে। এছাড়া শিম বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকা কেজি, শালগম ৫০ টাকা, টমেটো ১২০ টাকা, বেগুন ৪০-৫০ টাকা, গোল বেগুন ৬০-৭০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, দেশি গাজর ৭০-৮০ টাকা, চায়না গাজর ১২০ টাকা, মুলা ৪০ টাকা, করলা ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে প্রতিপিস ফুলকপি ৪০ টাকা এবং লাউ ৫০-৬০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। খিলগাঁও বাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা হনুফা বেগম বলেন, এখন খেয়ে বাঁচাই যায় না। ঘর ভাড়া, বাজার খরচ সব দিয়া সংসার চালানো যায় না। আমাদের মতো গরিবের কষ্ট কেউ বোঝে না। যাদের টাকা আছে তারাই ভালো আছে না। বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম কিছুটা কমেছে। এখন প্রতি কেজি ১৭০ টাকা থেকে ২০ টাকা কমে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সোনালি মুরগির কেজি ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা, কক প্রতি কেজি ২৮০ থেকে ২৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে আগের মতো সাধারণ মানুষের সাধ্যের বাইরে রয়েছে গরু ও খাসির মাংসের দাম। বাজারে প্রতিকেজি গরুর মাংস ৭০০ টাকা ও খাসির মাংস ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:
https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews