অধ্যাপক তাহের হত্যা: দুই আসামির ফাঁসি কার্যকর হতে পারে আজ রাতেই
মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) রাজশাহী জেলা কারাগারের একটি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
প্রথম নিউজ, রাজশাহী: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস তাহের আহমেদ হত্যা মামলায় দুই আসামি সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও কেয়ারটেকার জাহাঙ্গীর আলমের ফাঁসি আজ রাত ১০টা ১ মিনিটে কার্যকর করা হতে পারে।
মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) রাজশাহী জেলা কারাগারের একটি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। সূত্র জানিয়েছে, দুদিন ধরে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসির ট্রায়াল অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো তথ্য জানায়নি রাজশাহী কারা কর্তৃপক্ষ।
এদিকে অধ্যাপক তাহের আহমেদ হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি ড. মিয়া মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীর আলমের পরিবারকে সাক্ষাতের জন্য ডেকেছে কারা কর্তৃপক্ষ। তবে মহিউদ্দিনের পরিবারের কেউ দেখা করতে আসেননি। তবে দুপুর ১টার দিকে জাহাঙ্গীর আলমের পরিবারের ৩৫ জন সদস্য কারাগারে প্রবেশ করেছেন। বিকেল ৩টা পর্যন্ত তারা কারাগারের ভেতরেই ছিলেন।
জাহাঙ্গীর আলমের ছোট ভাই মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমার বাবা আজিম উদ্দিনসহ ৩৫ জন শেষ দেখা করতে এসেছি। কারা কর্তৃপক্ষ আমাদের দেখা করার সুযোগ দিয়েছে। রোববার কারা কর্তৃপক্ষ আমাদের চিঠি দিয়েছিল। আজ আমরা দেখা করতে এসেছি। অধ্যাপক তাহের হত্যা মামলায় রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করেন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা। তবে তা নাকচ করে দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।
গত ২ মার্চ দুই আসামির ফাঁসি এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত এক আসামির রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন খারিজ করে দেন সর্বোচ্চ আদালত। পরে দণ্ডিত এ দুজনের ফাঁসি কার্যকর স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে গত ৭ মে ফের রিট আবেদন করেন তাদের স্বজনরা। সেই আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন বিচারপতি মো. জাফর আহমেদ ও মো. বশির উল্ল্যার হাইকোর্ট বেঞ্চ।
২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টারের ম্যানহোল থেকে উদ্ধার করা হয় অধ্যাপক তাহেরের মরদেহ। পদোন্নতি সংক্রান্ত বিষয়ের জের ধরে নৃশংস হত্যার শিকার হন তিনি। ৩ ফেব্রুয়ারি নিহত অধ্যাপক তাহেরের ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ রাজশাহী মহানগরীর মতিহার থানায় অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। এ মামলায় ২০০৭ সালের ১৭ মার্চ ছয়জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। বিচার শেষে ২০০৮ সালের ২২ মে রাজশাহীর দ্রুত বিচার আদালত চারজনকে ফাঁসির আদেশ ও দুজনকে খালাস দেন।
ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, নিহত অধ্যাপক ড. তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার জাহাঙ্গীর আলম, জাহাঙ্গীর আলমের ভাই নাজমুল আলম ও নাজমুল আলমের স্ত্রীর ভাই আবদুস সালাম। খালাস পাওয়া চার্জশিটভুক্ত দুই আসামি হলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের তৎকালীন সভাপতি মাহবুবুল আলম সালেহী ও আজিমুদ্দিন মুন্সী।
২০০৮ সালে বিচারিক আদালতের রায়ের পর নিয়ম অনুযায়ী ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) হাইকোর্টে আসে। পাশাপাশি আসামিরা আপিল করেন। শুনানি শেষে ২০১৩ সালের ২১ এপ্রিল অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যা মামলায় দুই আসামির ফাঁসির দণ্ডাদেশ বহাল এবং অন্য দুই আসামির দণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন হাইকোর্ট। ফাঁসির দণ্ডাদেশ বহাল রাখা দুই আসামি হলেন অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও কেয়ারটেকার জাহাঙ্গীর আলম। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া দুই আসামি হলেন নাজমুল আলম ও আবদুস সালাম।
পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়, ‘আসামিদের স্বীকারোক্তি পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, হত্যার এই ষড়যন্ত্রে মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিনই মুখ্য এবং সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন। আমাদের এটা বলতে দ্বিধা নেই যে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. মহিউদ্দিন শুধু প্রফেসর হিসেবে পদোন্নতি পেতেই ড. তাহেরকে এই পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেন। তার ধারণা ছিল, ড. তাহের বেঁচে থাকলে অধ্যাপক হিসেবে তার পদোন্নতি পাওয়া সম্ভব না। আমাদের এও বলতে দ্বিধা নেই যে, আপিলকারী জাহাঙ্গীর আলম এবং আবেদনকারী আবদুস সালাম ও নাজমুল আর্থিক সুবিধাসহ অন্যান্য সুবিধা পাওয়ার জন্য অধ্যাপক তাহের আহমেদকে হত্যার জন্য ড. মহিউদ্দিনের প্রস্তাব গ্রহণ করেছিলেন।’