অধিকারকর্মী ও ভিন্ন মতাবলম্বীদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়ায় নিকারাগুয়ার ৩ বিচারকের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা

অধিকারকর্মী ও ভিন্ন মতাবলম্বীদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়ায় নিকারাগুয়ার ৩ বিচারকের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা

প্রথম নিউজ ডেস্ক:ভিন্ন মতাবলম্বীদের কণ্ঠকে স্তব্ধ করে দেয়ার চেষ্টা করছেন নিকারাগুয়ার প্রেসিডেন্ট দানিয়েল ওর্তেগা। এ সময়ে ভিন্ন মতাবলম্বীদের নাগরিকত্ব বাতিল করেছেন কয়েকজন বিচারক। এ কর্মকাণ্ডের জন্য তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এমন বিচারকের সংখ্যা তিনজন। তারা হলেন বিচারক নাদিয়া ক্যামিলা তারডেনসিলা রড্রিগো, আর্নেস্ট লিওনেল রড্রিগো মেজিয়া এবং অক্টাভিও আর্নেস্তো রোথশাহ অ্যান্ডিনো। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। তার ওপর ভিত্তি করে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে অনলাইন আল জাজিরা। 
এতে বলা হয়, ওই তিন বিচারক কয়েক শত অধিকারকর্মী এবং রাজনৈতিক ভিন্ন মতাবলম্বীর নাগরিকত্ব কেড়ে নিয়েছেন। তারা এ কাজ করেছেন এমন এক সময়ে যখন বিরোধীদের কণ্ঠ টুঁটে ধরেছে দেশটির সরকার। বুধবার এ বিষয়ে বিবৃতি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন। তিনি বলেছেন, এসব অধিকারকর্মী ও রাজনৈতিক ভিন্ন মতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে সরকারের নিষ্পেষণ চালানোর প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করেছেন ওই বিচারকরা।
তারা কমপক্ষে ৩০০ নিকারাগুয়ানের নাগরিকত্ব বাতিল করেছেন। ব্লিনকেন তার বিবৃতিতে বলেন, নিকারাগুয়ার শাসকগোষ্ঠীর যারা এই অপরাধের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আরও পদক্ষেপ নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। 
এখানে উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্ট দানিয়েল ওর্তেগা এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট রোজারিও মুরিলোর নেতৃত্বাধীন নিকারাগুয়ান সরকারের কড়া সমালোচনা করেছে জাতিসংঘ এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতো মানবাধিকার বিষয়ক গ্রুপগুলো। কারণ, তারা বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক বিরোধীদের টার্গেট করছে। তাই অ্যান্টনি ব্লিনকেন বলেছেন, আমাদের হাতে থাকা কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক হাতিয়ার ব্যবহার করে ওর্তেগা-মুরিলো শাসকগোষ্ঠীর নিয়ম লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে অব্যাহতভাবে কাজ করে যাবো। 
ফেব্রুয়ারিতে ২২২ জন রাজনৈতিক বন্দিকে মুক্তি দেয় দেশটি। তাদেরকে যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাসনে পাঠিয়ে দেয়। এরপর তাদের নাগরিকত্ব বাতিল করতে ভোট দেন আইন প্রণেতারা। এর মধ্য দিয়ে তাদেরকে রাষ্ট্রহীন করে দেয়ার চেষ্টা করা হয়। এর মাত্র এক সপ্তাহ পরে নিকারাগুয়ার একটি কোর্ট নির্বাসনে থাকা ৯৪ জন ভিন্ন মতাবলম্বীর নাগরিকত্ব বাতিল করে। আদালতের এমন সিদ্ধান্তকে অবৈধ আখ্যায়িত করে এর নিন্দা জানায় জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক এজেন্সি। এবার ওই বিচারকদেরকে যুক্তরষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন বিতর্কিত সিদ্ধান্তের জন্য সরাসরি দায়ী বলে আখ্যায়িত করেছেন। কারণ, তাদের এই সিদ্ধান্তের কারণে ওইসব মানুষ রাষ্ট্রহীন হয়েছেন। 
মঙ্গলবার অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। তাতে ওর্তেগা সরকারকে নানা উপায়ে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য অভিযুক্ত করেছে। এর মধ্যে আছে অতিরিক্ত শক্তিপ্রয়োগ, অধিকারকর্মী ও ভিন্ন মতাবলম্বীদের অপরাধী দেখাতে ক্রিমিনাল বিষয়ক আইন ব্যবহার এবং নাগরিক সমাজের ওপর আক্রমণ। তাদেরকে নির্বাসনে যেতে বাধ্য করছে। ২০১৮ সালে নিকারাগুয়াজুড়ে প্রতিবাদ বিক্ষোভ হয়। তার পঞ্চম বার্ষিকী উপলক্ষে এই রিপোর্ট প্রকাশ করেছে অ্যামনেস্টি। ওই বছরে সরকারের কৃচ্ছ্রতা বিষয়ক পদক্ষেপ এবং সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা কমিয়ে দেয়ার কারণে সারাদেশে বিক্ষোভ হয়। এর বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী দমনপীড়ন চালায় সরকার। এতে কয়েক শত মানুষ নিহত হন।