৮ দফা দাবিতে পরিছন্নতাকর্মীদের মানববন্ধন 

 ৮ দফা দাবিতে পরিছন্নতাকর্মীদের মানববন্ধন 

প্রথম নিউজ, রংপুুর : রংপুর সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের ওপর হামলার বিচার ও দেশের সব পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের বেতন বৃদ্ধিসহ আট দফা দাবিতে মানববন্ধন ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে বাংলাদেশ হরিজন ঐক্য পরিষদ।

মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এ মানববন্ধন করে সংগঠনটি।

স্মারকলিপিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে সংগঠনের সভাপতি কৃষ্ণলাল এবং মহাসচিব নির্মল চন্দ্র দাস বলেন, আপনি নিশ্চয়ই অবগত আছেন যে- বাংলাদেশে বংশপরম্পরায় একটি জনগোষ্ঠী পেশাজীবী হিসেবে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর পেশার সঙ্গে জড়িত থেকে তাদের জীবন-জীবিকা হাজারো সমস্যার মধ্যে অতিবাহিত করে আসছে। স্বাধীনতার ৫২ বছর পার করেও তাদের নাগরিক অধিকারের জন্য দাবি জানাতে হচ্ছে। এ পেশার কারণে এ জনগোষ্ঠীর সঙ্গে মানুষের বৈষম্য, অস্পৃশ্যতা ও ঘৃণার চোখে দেখা হয়। এদেশের নাগরিক হিসেবে সব নাগরিকের সাংবিধানিক সব সমান সুযোগের কথা বলা থাকলেও এ জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে দৃশ্যহীন। বাংলাদেশের স্বাধিকার যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেও তারা শিক্ষার অভাবের কারণে আজ অবহেলিত। এ জনগোষ্ঠীর মধ্যে শিক্ষার আলো ছিল না বলে তারা তাদের বিকল্প কোনো পেশা গ্রহণ করতে পারেনি। নানা বৈষম্যের কারণে কোনো ব্যবসা-বাণিজ্যও করতে পারছে না জনগোষ্ঠীটি।

তারা বলেন, বাংলাদেশের পৌরসভার সৃষ্টিলগ্ন হতে নগরের সুচিতা আনার পবিত্র দায়িত্ব আমরাই পালন করছি, অথচ সব সুযোগ-সুবিধা থেকে আমরাই বঞ্চিত হচ্ছি। বর্তমানে বাজারের ঊর্ধ্বগতিতে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের নুন আনতে পানতা ফুরায়। এখনো বিভিন্ন পৌরসভার বেতন পনেরশ টাকা । এ বেতনে একটি পরিবার চলতে পারে না। পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জীবন-জীবিকা এতই কষ্টের মাধ্যমে চলছে যা সরেজমিনে না দেখলে বুঝা মুশকিল। তাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকেছে, তারা আর পারছে না। তারা বেঁচে থাকার অধিকার চেয়ে রংপুর সিটি কর্পোরেশনের কাছে বেতন বৃদ্ধির দাবি করলে তাদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়। আমরা এ সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানাই।

তারা আরও বলেন, ঘৃণার সঙ্গে বলতে হয়- যারা এ নিরীহ পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের ওপর হামলা করেছে, তারা ভুলে যায় কীভাবে এ পরিচ্ছন্নতাকর্মীরাই সবার সুরক্ষার জন্য নিজের জীবনবাজি রেখে করোনার সময় আপনাদের অক্সিজেন হিসেবে কাজ করেছে।

তাদের দাবিসমূহ

১) বর্তমান বাজারের সঙ্গে মিল রেখে দেশের প্রতিটি পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের বেতন (পরিবার চলার মতো) বৃদ্ধি করতে হবে।

২) রংপুর সিটি কর্পোরেশনে হামলার শিকার আহত পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক চিকিৎসার খরচ দিতে হবে।

৩) রংপুর সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের ওপর হামলাকারীদের আইনের আওতায় নিয়ে উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে।

৪) রংপুর সিটি কর্পোরেশনের আন্দোলনে চাকরিচ্যুত পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের অবিলম্বে চাকরি ফিরিয়ে দিতে হবে।

৫) প্রত্যেক পৌরসভায় পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের আবাসন করে দিতে হবে। অন্যান্য সরকারি জায়গায় বসবাসরত যেমন, রেলওয়ে, হাসপাতাল, বিভিন্ন হাটবাজারে বসবাস করা পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের আবাসন উচ্ছেদ আতঙ্কের পূর্বেই আশ্রয়ণ প্রকল্পের অন্তর্ভুক্তি করে স্থায়ী আবাসন দিতে হবে।

৬) পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের কর্মক্ষেত্রে জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

৭) উৎসব বোনাস দিতে হবে। মাতৃকালীন নারী পরিচ্ছন্নতাকর্মীর ছয় মাসের ছুটিসহ বেতন দিতে হবে।

৮) সব পৌরসভা সিটি কর্পোরেশনে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের স্থায়ী করতে হবে এবং প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক পোষ্য কোটা দিতে হবে।