৩২ বছরের পুরোনো বিদ্যালয় এখন অস্তিত্বহীন, ভোগান্তিতে শিক্ষার্থীরা

৩২ বছরের পুরোনো বিদ্যালয় এখন অস্তিত্বহীন, ভোগান্তিতে শিক্ষার্থীরা

প্রথম নিউজ, যশোর: যশোর সদর উপজেলার করিচিয়া গ্রাম। এ গ্রামে ভোটার সংখ্যা প্রায় ২৯০০। স্কুল পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা পাঁচ শতাধিক। তবে এই গ্রামে সবকিছুই থাকলেও নেই কোনো বিদ্যালয়। ফলে করিচিয়া গ্রামের স্কুলপড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীদের দুই কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে পাশের গ্রামের বিদ্যালয়ে যেতে হয়। গ্রামবাসীর উদ্যোগে এ গ্রামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হলেও ৩২ বছরের মাথায় স্কুলটি এখন অস্তিত্বহীন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯১ সালে গ্রামবাসী উদ্যোগ নিয়ে এক বিঘা জমির ওপর করিচিয়া মধ্যপাড়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তখন ওই স্কুলে শিক্ষার্থী ছিল ৩০০ জন। শিক্ষক ছিলেন ৪ জন। বিনা বেতনে তারা প্রায় ১৪ বছর ওই স্কুলের শিক্ষার্থীদের পড়ান। তবে দিনে দিনে স্কুলের অবকাঠামো দুর্বল হয়ে পড়ায় চেয়ার, টেবিল ও বেঞ্চগুলো নষ্ট হয়ে যায়। এভাবে ২০০৫ সাল পর্যন্ত স্কুলটি টিকে থাকলেও আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে যায়। এখন ফাঁকা মাঠ ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। 

এলাকাবাসীরা জানান, তৎকালীন সময়ে স্কুল নির্মাণের জন্য জমি দান করেছিলেন ওই গ্রামের আক্কেল আলী বিশ্বাস। তিনি আর বেঁচে নেই। উদ্যোক্তাদের অনেকেই মারা গেছেন। স্কুলের শিক্ষকরাও জীবিকার তাগিদে বিভিন্ন পেশা বেছে নিয়েছেন। স্কুল না থাকায় করিচিয়া গ্রামের ছেলে মেয়েরা বাধ্য হয়ে আড়াই কিলোমিটার দূরের স্কুলে যায়।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা কুতুবউদ্দিন বিশ্বাস বলেন, অনেক আগে করিচিয়া গ্রামে একটা স্কুল ছিল। সেটি গ্রামবাসীর উদ্যোগে হয়েছিল। নানা জটিলতায় সেটি বন্ধ হয়ে যায়। সেখানে আর স্কুল নেই। আছে ফাঁকা মাঠ। ওই গ্রামে পাঁচশতাধিক ছাত্র-ছাত্রীকে পাশের গ্রামে স্কুলে যেতে হয়। 

তিনি বলেন, আমি ইউপি সদস্য থাকাকালীন অনেক সরকারি কর্মকর্তাদের কাছে বিষয়টি জানিয়েছি। তারা সরজমিনে দেখে গেছে, কিন্তু তারা কোনো সুরাহা করতে পারেনি।

তাইজেল হোসেন নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ১৯৯১ সালের দিকে গ্রামবাসী করিচিয়া গ্রামে যে স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেছিল সেটি গ্রামবাসী এবং রাজনৈতিক দলাদলিতে অস্তিত্বহীন হয়ে গেছে। এখন আমাদের বাচ্চাদের নিয়ে পাশের গ্রামে স্কুলে যেতে হয়। স্কুলে যাওয়ার সময় রাস্তা পারাপারের সময় যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে, তখন এ দায়ভার কার?

 গোয়ালদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় যায়

অন্যদিকে করিচিয়া গ্রামে বিদ্যালয় না থাকলেও পাশের গ্রামে দুই কিলোমিটার দূরে রুদ্রপুর মৌজায় করিচিয়া ও গোয়ালদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়। তিন গ্রামের ছাত্র-ছাত্রীদের একমাত্র বিদ্যালয় এখন এটাই।

করিচিয়া গোয়ালদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ইয়ামিন হাসান রাফি বলে, আমরা ভ্যানে, সাইকেলে করে এতো দূরে স্কুলে আসি। আমাদের গ্রামে কোনো স্কুল নাই। আমরা একটা স্কুল চাই।

পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী আল-জোবায়ের মিরাজ বলে, স্কুলে আসতে হলে আমাদের একটি ব্যস্ততম সড়ক পার হতে হয়। যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। বৃষ্টির সময় আরও কষ্ট হয় এতদূরে স্কুলে আসতে। কখনো কখনো আসতে ইচ্ছা করে না।

রুদ্রপুর মৌজায় অবস্থিত করিচিয়া গোয়ালদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জিএম হুমায়ুন বলেন, করিচিয়া গ্রামে কোনো স্কুল নেই। এই গ্রাম থেকে দুই কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে আমার স্কুলে ছোট ছোট শিশুরা পড়তে আসে। আসার পথে তাদের ব্যস্ততম সড়কও পার হতে হয়। 

তিনি বলেন, এই স্কুলে মোট তিনটি গ্রামের ছাত্র-ছাত্রীরা আসে। শিক্ষার্থীদের তুলনায় বিদ্যালয়ে শিক্ষকের সংখ্যায় কম। ফলে পড়াশোনার মান নিয়ন্ত্রণ রাখাও কষ্টসাধ্য। করিচিয়া গ্রামে দ্রুত একটি স্কুল প্রয়োজন।

এ বিষয়ে যশোর সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেন বলেন, রুদ্রপুরে করিচিয়া গোয়ালদহর নামে স্কুল থাকায় আমরা এতোদিন জানতাম করিচিয়া গ্রামে স্কুল রয়েছে। তবে ইদানীং জানলাম যে ওই গ্রামে কোনো স্কুল নেই। বিষয়টি আমরা খোঁজ খবর নিচ্ছি। 

তিনি বলেন, সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী করিচিয়া গ্রামে একটি স্কুল থাকার কথা। এখন ওই গ্রামের কোনো ব্যক্তি জমি দান করলে এবং এলাকাবাসী একযোগে আবেদন করলে স্কুল বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।