৩২ নম্বর বাড়ি গুঁড়িয়ে দিল ছাত্র-জনতা

শেখ হাসিনার বাসভবন সুধা সদনেও আগুন ► গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো খুলনার ‘শেখবাড়ি’, বরিশালে সাদিক আবদুল্লাহ ও আমির হোসেন আমুর বাড়ি এবং কুষ্টিয়ায় হানিফের বাড়ি ► ভোলায় তোফায়েল আহমেদের বাসায় আগুন ► সিলেট ও চট্টগ্রামে শেখ মুজিবের ম্যুরাল ভাঙচুর ► রাবিতে চার হলের নামফলক পরিবর্তন

৩২ নম্বর বাড়ি গুঁড়িয়ে দিল ছাত্র-জনতা

প্রথম নিউজ, অনলাইন :  রাজধানীর ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের পর এক্সকাভেটর-ক্রেন দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে ক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। আগুন দেওয়া হয়েছে ধানমণ্ডি ৫/এ সড়কে শেখ হাসিনার বাসভবন সুধা সদনেও। খুলনায় এক্সকাভেটর-ক্রেন দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে শেখ মুজিবুর রহমানের ভাইয়ের বাড়ি, যা ‘শেখবাড়ি’ নামে পরিচিত। বরিশালে বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর বাসভবন।
সাদিক আবদুল্লাহ শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই হাসানাত আবদুল্লাহর ছেলে। 

একইভাবে এক্সকাভেটর-ক্রেন দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে কুষ্টিয়ায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা মাহবুবউল আলম হানিফের পরিত্যক্ত বাড়ি এবং সিলেটে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে থাকা শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল। বরিশাল নগরে বুলডোজার দিয়ে ভাঙচুর করা হয় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমুর বাসভবন। ভোলা সদরে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের বাড়িতে আগুন দেয় ক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা।
অন্যদিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মীয়মাণ দুটি হলসহ মোট চারটি হলে শেখ মুজিব এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের নাম থাকা ফলকগুলো ভেঙে নতুন নাম দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ এবং নগরের জামাল খান এলাকায় শেখ মুজিবের ম্যুরাল ভাঙচুর করা হয়েছে। রাজধানীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নামফলক থেকে ‘বঙ্গবন্ধু’ শব্দটি তুলে ফেলা হয়েছে। শেখ মুজিবের ম্যুরাল ভাঙচুর করা হয়েছে রংপুরেও।
  

ভারত থেকে শেখ হাসিনার অনলাইন ভাষণের প্রতিবাদে গতকাল বুধবার রাতে এসব ঘটনা ঘটে। এমন এক দিনে এই ঘটনাপ্রবাহ চলেছে, যেদিন গণ-আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশত্যাগের ছয় মাস পূর্ণ হলো। 

গত রাত ৮টার পর থেকেই বিপুলসংখ্যক মানুষ ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে জড়ো হয়। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড়ও বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে ভাঙচুর শুরু করে ছাত্র-জনতা।
লাঠিসোঁটা ও শাবল হাতে ভাঙচুরে যোগ দেয় অনেকে। কেউ কেউ বাড়ির দেয়াল ভাঙার চেষ্টা করে। জানালার গ্রিল, কাঠ ও ফটকের অংশ ভেঙে নিয়ে যেতে দেখা যায় কাউকে কাউকে। এ সময় ভেতর থেকে ‘নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবর’, ‘স্বৈরাচারের আস্তানা, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’—এসব স্লোগানের পাশাপাশি ‘দিল্লি না ঢাকা, আবু সাঈদ-মুগ্ধ শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘জনে জনে খবর দে, মুজিববাদের কবর দে’ ইত্যাদি স্লোগানও শোনা যায়। এই ভিড়ের মধ্যে দর্শকের সংখ্যাও কম নয়। তারা বাড়ির সামনের পরিস্থিতি দেখছে, মোবাইল ফোনে ছবি তুলছে বা ভিডিও করছে, আবার চলেও যাচ্ছে। ভাঙচুরের এক পর্যায়ে রাত ৯টার দিকে শেখ মুজিবের স্মৃতিবিজড়িত বাড়ির তৃতীয় তলায় প্রথমে আগুন দেওয়া হয়। এর মধ্যে চলে ভাঙচুরও।

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের দিন শেখ মুজিবুর রহমানের এই বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছিল। গতকাল ব্যাপক ভাঙচুরের পর ভেতরে পোড়ার মতো যা কিছু আছে, তাতে আবারও আগুন দেওয়া হয়। এ সময় নারকেলগাছের পাতাও জ্বলতে দেখা যায়। আগুন জ্বলতে দেখা যায় ৩২ নম্বরের ওই বাড়ির পাশের একটি ভবনেও।

ঐতিহাসিক এই বাড়ি ঘিরে মানুষের বিক্ষোভের মধ্যে রাত পৌনে ১১টার দিকে সেখানে বুলডোজার-ক্রেন পৌঁছে। মানুষের উল্লাসধ্বনির মধ্যে সেটি মূল সড়ক থেকে ৩২ নম্বরের সড়কে ঢোকে। বুলডোজারের ওপরে উঠে স্লোগান দিতে থাকে অনেকে।

এই পরিস্থিতির মধ্যে ৩২ নম্বর বাড়ির উল্টো পাশে খোলা জায়গায় প্রজেক্টরে জুলাই অভ্যুত্থানের প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হচ্ছিল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এই আয়োজন করে। সেখানে মাইকে ঘোষণা দিয়ে বলা হয়, ‘আমরা আন্দোলনের প্রামাণ্যচিত্র দেখাচ্ছি। আপনাদের যাঁদের ভাঙার ইচ্ছা আছে, তাঁরা সামনে গিয়ে ভেঙে আসেন। এখানে যাঁরা প্রামাণ্যচিত্র দেখতে চান, তাঁদের সুযোগ দিন।’

এসব কর্মসূচির কারণে ধানমণ্ডি এলাকার নিরাপত্তা বাড়ানোর কথা বলা হলেও রাস্তার ওপর দুটি পুলিশ ভ্যান ছাড়া আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর তেমন কোনো অবস্থান ওই এলাকায় দেখা যায়নি। ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে এই পরিস্থিতি চলার মধ্যেই আগুন দেওয়া হয় ধানমণ্ডি ৫/এ শেখ হাসিনার বাসভবন সুধা সদনে।

শেখ হাসিনার সরকার পতনের ছয় মাস পূর্ণ হয় গতকাল। আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজে ঘোষণা দেওয়া হয়, রাতে ভার্চুয়াল এক অনুষ্ঠানে ভাষণ দেবেন তাদের নেত্রী শেখ হাসিনা। বিষয়টি নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া আসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে, যারা গত বছরের জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়।

সংগঠনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ এক ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘হাসিনাকে বক্তব্য প্রকাশের সুযোগ দেওয়াকে বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদবিরোধী জনগণের বিরুদ্ধে ভারতের যুদ্ধ হিসেবে দেখি।’ পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ফেসবুকে আরেক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘আজ রাতে বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদের তীর্থভূমিমুক্ত হবে।’

এর আগেই গতকাল বিকেলে আলোচিত অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ইলিয়াস হোসাইন ও পিনাকী ভট্টাচার্য ফেসবুকে ‘ধানমণ্ডি ৩২ অভিমুখে বুলডোজার মিছিল’ ঘোষণা করেন। একটি ফটোকার্ডও শেয়ার করেন তাঁরা। তাতে বলা হয়, ‘হাজারো ছাত্র-জনতার ওপর গণহত্যা চালিয়ে দিল্লি পালিয়ে গিয়ে সেখান থেকেই খুনি হাসিনার বাংলাদেশবিরোধী তৎপরতার প্রতিবাদে ২৪-এর বিপ্লবী ছাত্র-জনতার উদ্যোগে আজ (বুধবার) রাত ৯টায় এই কর্মসূচি পালিত হবে।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬১ সালের ১ অক্টোবর থেকে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর সড়কের এই তিনতলা বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। এই বাড়িতে থেকেই তিনি পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। ১৯৬২ সালের আইয়ুববিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৬৬ সালের ছয় দফা, ১৯৭০ সালের নির্বাচন, একাত্তরের শুরুতে অসহযোগ আন্দোলনসহ বাংলাদেশের ইতিহাসের নানা চড়াই-উতরাইয়ের সাক্ষী এই বাড়ি। এই বাড়ি থেকেই একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে শেখ মুজিবকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে এই বাড়িতেই সপরিবারে তাঁকে হত্যা করা হয়।

১৯৮১ সালে তাঁর মেয়ে শেখ হাসিনা দেশে ফিরলে শুরুতে তাঁকে ওই বাড়িতে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। পরে ওই বছরের ১০ জুন ঋণের কিস্তি পরিশোধ করার পর শেখ হাসিনা বাড়ির মালিকানা পান। তবে তিনি সেখানে থাকেননি। শেখ হাসিনা বাড়িটিকে জাদুঘরে রূপান্তরের জন্য বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের কাছে হস্তান্তর করেন। বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট বাড়িটিকে জাদুঘরে রূপান্তরিত করে এবং নাম দেয় ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর’।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। কয়েক ঘণ্টা পর গণভবন এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ঢুকে পড়ে হাজারো মানুষ। ঢাকায় শেখ মুজিবের বেশ কিছু ভাস্কর্য গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর সেদিন ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে হামলা চালিয়ে লুটপাট ও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পুড়ে যায় তিনতলা বাড়ির প্রতিটি কক্ষ। জ্বালিয়ে দেওয়া হয় ভবনের সামনের দিকে শ্রদ্ধা নিবেদনের অংশে রাখা শেখ মুজিবের প্রতিকৃতিও।

 

শেখ হাসিনার বাসভবন সুধা সদনেও আগুন

ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের পর ধানমণ্ডি ৫/এ সড়কে শেখ হাসিনার বাসভবন সুধা সদনে আগুন দেওয়া হয়েছে। রাত সাড়ে ১০টার পর সেখানে আগুন দেওয়া হয় বলে কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছে।

ওই এলাকায় দায়িত্বরত ধানমণ্ডি সোসাইটির নিরাপত্তারক্ষীরা জানান, রাত সাড়ে ১০টার পর ১০ থেকে ১২টি ছেলে এসে সুধা সদনে আগুন দেয়। আগুন ভবনটিতে ছড়িয়ে পড়লে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের লোকেরা এসে এসব সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন। পরে আশপাশের ভবনের বাসিন্দারা এসে পানি দিয়ে নিচতলার আগুন কিছুটা কমিয়েছেন। রাত ১২টার সময় ভবনের দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ তলার বিভিন্ন কক্ষে আগুন জ্বলতে দেখা গেছে।

 

গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো খুলনার ‘শেখবাড়ি’

খুলনায় শেখ হাসিনার চাচার বাড়ি ‘শেখবাড়ি’ বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে উত্তেজিত ছাত্র-জনতা। রাত ৯টার দিকে নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল করে বাড়িটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এর আগে রাত পৌনে ৯টায় ‘শেখবাড়ি’ গুঁড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। নগরীর শেরেবাংলা রোডের ‘শেখবাড়ি’ শেখ মুজিবের চাচাতো ভাই শেখ আবু নাসেরের বাড়ি। এখানে শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই বাগেরহাট-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দীন, খুলনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল, শেখ সোহেল, শেখ রুবেল ও শেখ বাবু এবং শেখ হাসিনার ভাইপো বাগেরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ সারহান নাসের তন্ময় বসবাস করতেন। গত বছরের ৪ ও ৫ আগস্ট এই বাড়িটি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করে বিক্ষুব্ধ জনতা। এর বাড়িটিতে শুধু ইট-পাথরের কাঠামোই অবশিষ্ট ছিল।  

 

বরিশালে পুড়িয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো সাদিক আবদুল্লাহর বাড়ি

মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর বাসভবনে আবারও হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের পর গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। রাত সাড়ে ১২টার দি‌কে ছাত্র-জনতা বাসভব‌নে হামলা, ভাঙচুর আর অ‌গ্নিসং‌যো‌গে পাশাপা‌শি বুল‌ডোজার দি‌য়ে ভবন গুঁ‌ড়ি‌য়ে দেওয়া শুরু করে।

বিক্ষুব্ধ জনতার একটি অংশ দোতলা ভবনটিতে ঢুকে কিছু আসবাব ছু‌ড়ে নি‌চে ফেলে দেয়। নি‌চে থাকা লোকজন তাতে আগুন দেয়। পরে বুলডোজার এনে ভবনটি গুঁড়িয়ে দেওয়া শুরু করে ছাত্র-জনতা। রাত দেড়টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত গুঁড়িয়ে দেওয়ার কাজ চলছিল।

এর আগে ৫ আগস্ট সন্ধ্যায় নগরের কালীবাড়ি রোডে সাদিক আবদুল্লাহর পৈতৃক বাড়িতে ভাঙচুর করে আগুন দেওয়া হয়। এতে দোতলা বাসভবনের অনেকাংশ পুড়ে যায়। এ সময় সাদিক আবদুল্লাহ বাড়িতে ছিলেন না। সাদিক আবদুল্লাহ শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই হাসানাত আবদুল্লাহর ছেলে। 

 

কুষ্টিয়ায় গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো হানিফের বাড়ি

বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মাহবুবউল আলম হানিফের বাড়ি। গত রাত ১০টার দিকে কুষ্টিয়া শহরের পিটিআই সড়কে তিনতলা বাড়িটি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার ব্যানারে ভাঙা শুরু হয়।

এর আগে গত ৪ ও ৫ আগস্ট এই বাড়িতে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। চলে লুটপাট। এই ঘটনার পর বাড়িটিতে ইট ছাড়া কিছুই ছিল না। তবে ৫ আগস্ট থেকে হানিফ আত্মগোপনে রয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, একটি বুলডোজার নিয়ে প্রথমে বাড়ির প্রধান ফটক ও সীমানাপ্রাচীর গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এর আগে উপজেলা মোড় থেকে একটি মশাল মিছিল নিয়ে ছাত্র-জনতা হানিফের বাড়ির সামনে আসে। রাত ১০টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত হানিফের বাড়িতে ভাঙচুর চালায় বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা।

বরিশালে আমুর বাসভবনে বুলডোজার 

নগরীর বগুড়া রোডে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমুর বাসভবনে বুলডোজার নিয়ে হামলা চালিয়েছে ক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। রাত ২টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ভাঙচুর চলছিল।

ভোলায় তোফায়েল আহমেদের বাড়িতে আগুন

রাত পৌনে ১টার দিকে ভোলা সদরের গাজীপুর রোডে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের ‘প্রিয় কুটির’ নামের বাড়িটিতে আগুন দেয় ক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। ভোলায় এসে এই বাড়িতে বসেই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতেন তিনি।

নাটোরে সাবেক এমপি শিমুলের বাসভবনে আগুন

রাত সাড়ে ১২টার দিকে একটি মিছিল নিয়ে ছাত্র-জনতা নাটোর শহরের কান্দিভিটুয়া এলাকায় সাবেক এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুলের বাসভবনে আগুন দেয়।

সিলেটে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে শেখ মুজিবের ম্যুরাল

জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থাকা শেখ মুজিবুর রহমানের ভাঙচুর হওয়া ম্যুরালটি এবার বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে ছাত্র-জনতা। রাত সাড়ে ১০টার দিকে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এর আগে রাত সাড়ে ৯টার দিকে নগরের কিনব্রিজ এলাকা থেকে সিলেট সিটি করপোরেশনের একটি বুলডোজার (হুইল এক্সকাভেটর) নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে যায়। পরে তারা ম্যুরালটি গুঁড়িয়ে দেওয়া শুরু করে।

৩২ নম্বর বাড়ি গুঁড়িয়ে দিল ছাত্র-জনতা

গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে খুলনা নগরের ময়লাপোতায় শেখ হাসিনার চাচার বাড়ি ‘শেখবাড়ি’, বরিশাল নগরীর কালীবাড়ি রোডে সাদিক আবদুল্লাহর বাড়ি এবং কুষ্টিয়ায় আওয়ামী লীগ নেতা হানিফের বাড়ি।   

ছবি : কালের কণ্ঠ