২৮ অক্টোবরের মানবতা বিরোধীদের বিচারের দাবিতে রাজধানীতে জামায়াতের বিক্ষোভ
রাজধানীতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর ও দক্ষিণ আয়োজিত ২০০৬ সালে ২৮ অক্টোবর আওয়ামী লগি-বৈঠার তাণ্ডব নির্মম ও নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে এবং অবিলম্বে খুনীদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তির দাবিতে এক বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে হয়।
প্রথম নিউজ, ঢাকা: রাজধানীতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর ও দক্ষিণ আয়োজিত ২০০৬ সালে ২৮ অক্টোবর আওয়ামী লগি-বৈঠার তাণ্ডব নির্মম ও নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে এবং অবিলম্বে খুনীদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তির দাবিতে এক বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে হয়। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তরের সমাবেশ পরবর্তী বিক্ষোভ মিছিলটি মহাখালী গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সামনে থেকে শুরু হয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে নাবিস্কোর সামনে এসে শেষ হয়। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারি সেক্রেটারি লস্কর মুহাম্মদ তাসলিম, মাহফুজুর রহমান, নাজিম উদ্দীন মোল্লা ও ডাঃ ফখরুদ্দিন মানিক, মহানগরী উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য হেমায়েত হোসাইন, ইয়াছিন আরাফাত ও জামাল উদ্দিন, মহানগরী উত্তরের মজলিসে শূরা সদস্য মেসবাহ উদ্দীন নাঈম ও মু. আতাউর রহমান সরকার, ছাত্রনেতা আব্দুল্লাহ আল মামুম ও জাকির হোসেন প্রমূখ।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ২৮ অক্টোবরের আওয়ামী লগি-বৈঠার তাণ্ডব এবং পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড অতীতের সকল নির্মমতা ও নিষ্ঠুরতাকে হার মানিয়েছে। যা হালাকু খানের বাগদাদ ধ্বংসের নির্মমতা ও হত্যাযজ্ঞকেই স্মরণ করিয়ে দেয়। আর সে দেশ ও জাতি স্বত্তাবিরোধী ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবে কথিত বিডিআর বিদ্রোহের নামে ৫৭ জন চৌকস ও মেধাবী সেনা কর্মকর্তা ও সাবেক আমীরে জামায়াত মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীসহ জামায়াতের শীর্ষনেতাদের হত্যা করে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে অরক্ষিত করা হয়েছে। মূলত, এই হত্যাকাণ্ড কোন তাৎক্ষণিক বা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল না বরং তা ছিল দেশ, জাতি, দেশের স্বাধীনতা-স্বার্বভৌমত্ব, ইসলাম ও ইসলামী মূল্যবোধ ধ্বংসের গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ। যড়যন্ত্রকারীরা উপলব্ধি করতে পেরেছিল স্বাভাবিক, নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক পন্থায় তথা জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে তারা কখনোই ক্ষমতায় যেতে পারবে না। সে জন্যই তারা দেশের গণতান্ত্রিক ধারা ধ্বংস করার জন্যই এই নারকীয় হত্যাকাণ্ডের পথ বেছে নিয়েছিল। কিন্তু হত্যাকাণ্ডের পর দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হলেও অপরাধীদের এখনো বিচারের আওতায় আনা হয়নি বরং হত্যাকারীদের রাষ্ট্রীয়ভাবে পুরুষ্কৃত ও পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া হয়েছে। তাই এই ব্যর্থ ও জুলুমবাজ সরকারের কাছে এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়ে কোন লাভ নেই বরং দেশে ন্যায়-ইনসাফের প্রতিষ্ঠা করেই পল্টন শহীদ মুজাহিদ-শিপনদের হত্যাকাণ্ডের বদলা নেয়া হবে বলে তিনি দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
এদিকে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর পল্টন হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে এবং খুনি ও সন্ত্রাসীদের বিচারের দাবীতে আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ। কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিলটি রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা রায়সাহেব বাজার মোড় থেকে শুরু হয়ে আশেপাশের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রতিবাদ সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ ও সমাবেশ থেকে ফেরার পথে সম্পুর্ন বিনা উস্কানিতে ২ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বিক্ষোভ মিছিলে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরীর দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারী যথাক্রমে এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন ও মু. দেলওয়ার হোসেন, কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক মোকাররম হোসাইন, আব্দুস সালাম, আব্দুর রহমান, মোবারক হোসাইন, ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা মহানগরী পুর্বের সভাপতি আরিফুর রহমান, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সভাপতি আব্দুল কাইউম মুরাদ সহ ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের বিভিন্ন থানা আমীর, সেক্রেটারি ও বিভিন্ন পর্যায়ের জামায়াত-শিবির নেতৃবৃন্দ।
বিক্ষোভ মিছিল পরবর্তী প্রতিবাদ সমাবেশে ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে এক কলঙ্কিত দিন। সেদিন ঢাকার পল্টন সহ সারাদেশে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ন্যাক্কারজনক মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেছিল বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। পল্টনে ২০০৬ সালের ২৮ শে অক্টোবর আওয়ামী লীগ যে দূর্বৃত্তায়ন ও অপরাজনীতি শুরু করেছিল তার ধারাবাহিকতা আজও অব্যাহত রেখেছে। এ নির্মম হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত সন্ত্রাসীদের বিচারের দাবিতে জামায়াতের পক্ষ থেকে মামলা করা হলেও এই পর্যন্ত সেই হত্যাকারীদের বিচার করা হয়নি। বরং বর্তমান সরকার ক্ষমতায় বসে সেই মামলা প্রত্যাহার করে খুনিদের রক্ষা করে এবং ক্রসফায়ার, হত্যা, খুন, গুম ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের লাইসেন্স দেয়। তারই ধারাবাহিকতায় দেশে ক্রসফায়ার, হত্যা, খুন, গুম ও সন্ত্রাস মানবতাবিরোধী অপরাধ অব্যাহতভাবে বেড়েই চলেছে। সরকার অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকার জন্যই দেশের গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করেছে। এমতাবস্থায় ব্যর্থ ও জুলুমবাজ সরকারকে ক্ষমতা থেকে বিদায় করে নিরপেক্ষ কেয়ারটেকার সরকারের অধিনে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করে সকল হত্যার বিচার নিশ্চিত করা হবে।
বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ থেকে ফেরার পথে সম্পুর্ন বিনা উস্কানিতে ২জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারের এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ। তিনি বলেন, সভা-সমাবেশ ও মিছিলের মাধ্যমে প্রতিবাদ করা প্রত্যেক নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার। পুলিশ এ অধিকারে বাধা দিয়ে এবং নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে সংবিধান লঙ্ঘন করেছে। আমরা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিতে চাই, জুলুম-নিপীড়ন চালিয়ে গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে ব্যাহত করা যাবে না। আমরা সকল ধরনের বাড়াবাড়ি বন্ধ করে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করার এবং গ্রেফতারকৃতদের অবিলম্বে মুক্তি দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:
https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews