সরকার সংঘাত পথ পরিহার না করলে পরিণতি ভয়াবহ হবে: মঈন খান

বুদ্ধিজীবী দিবসে পেশাজীবী পরিষদের আলোচনা

সরকার সংঘাত পথ পরিহার না করলে পরিণতি ভয়াবহ হবে: মঈন খান

প্রথম নিউজ, ঢাকা: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেছেন, সরকার হয়তো পুলিশ দিয়ে, বোমা দিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে ক্ষমতায় থাকবেন (সব সরকারের উদ্দেশে)। কিন্তু আমার প্রশ্ন আগামী প্রজন্মের কাছে আপানার কোন বাংলাদেশ রেখে যাচ্ছেন? আসুন সংঘাতের রাজনীতি পরিহার করে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের নীতি ব্যাবহার নিশ্চিত করি। তা না হলে বাংলাদেশের জন্য ভয়াবহ খারাপ পরিণতি অপেক্ষা করছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

‘মহান মুক্তিযুদ্ধ, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের অবদান ও গণতন্ত্র‘ শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ (বিএসপিপি)। 

বিএসপিপির সাবেক আহ্বায়ক রুহুল আমিন গাজীর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব কাদের গণি চৌধুরীর সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএসপিপির আহ্বায়ক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল হাই শিকদার, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, ইউট্যাবের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাদা দলের অধ্যাপক লুৎফর রহমান, ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদ, এসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ-এ্যাব‘র প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিএইউজে‘র সভাপতি মো. শহীদুল ইসলাম, কৃষিবিদ রাশিদুল হাসান হারুন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শামসুল আলম, অধ্যাপক কামরুল আহসান, জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের প্রকৌশলী মাহবুব আলম, নার্সেস এসোসিয়েশনের জাহানারা সিদ্দিকী, এ্যামট্যাবের বিপ্লবুজ্জামান বিপ্লব প্রমুখ।
এসময় বিভিন্ন পেশাজীবী ও বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রকৌশলী মো. মোস্তাফা-ই জামান সেলিম, প্রকৌশলী একেএম আসাদুজ্জামান চুন্নু, সাংবাদিক রাশেদুল হক,আমিরুল ইসলাম কাগজী,সাঈদ খান, প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম, প্রকৌশলী কামরুল হাসান খান সাইফুল, প্রকৌশলী মুসলিম উদ্দিন, প্রকৌশলী এমএইচ পাটোয়ারী মিলন, অধ্যাপক মো. নুরুল ইসলাম, অধ্যাপক ডা. আবদুল কুদ্দুস, ডা. জহিরুল ইসলাম শাকিল, কৃষিবিদ মো. এমদাদুল হক দুলু, বিএনপির শিরিন সুলতানা, অধ্যক্ষ সেলিম মিয়াসহ বিভিন্ন পেশাজীবী নেতারা।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, এই সরকার মনে করছে তারা উন্নয়নের গল্প শুনিয়ে টিকে থাকবে। কিন্তু সেটি না। স্বাধীনতার বিজয়ের প্রাক্কালে দেশের মানুষ ভেবেছিল বাংলাদেশ হবে একটি স্বাধীন দেশ। কিন্তু তার ঠিক আগ মুহূর্তে রাজাকার আলবদররা এক হয়ে দেশের মেধাস্বত্তকে হত্যা করেছে। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মেধাবী বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছে। তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশকে মেধাাশুন্য করে ফেলা। সেজন্যই মেধাবী বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছে। যা বিশ্বে বিরল ঘটনা। আমরা তাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশে বাস করছি।
তিনি বলেন, বুদ্ধিজীবী ও মুক্তিযোদ্ধারা চেয়েছিলেন গণতান্ত্রিক স্বাধীন বাংলাদেশ। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে, বাংলাদেশে গণতন্ত্র মৃত। এখানে নতুনভাবে একদলীয় বাকশাল কায়েম করা হয়েছে।
ড. মঈন খান বলেন, আজকে আমরা কোন বাংলাদেশে আছি এখানে ভিন্নমতের কথা বলার সুযোগ নেই। আজকে বর্তমান সরকার দেশে বাকশাল কায়েম করতে মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দিচ্ছে। গুম খুন করছে। তবে বাংলাদেশের মানুষ অতীতে বাকশাল শাসন মানেনি। কখনো মানবেনা। দেশের মানুষ চায় তারা ৫ বছরে একবার ভোট দিতে। তারা নিজেরা জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করতে চায়। কিন্তু সেই ভোটাধিকার গেলো কোথায়? তারাই তো বলেছিলো আমার ভোট আমি দেব যাকে খুশি তাকে দিবো! আজকে তারাই কেনো বলে আমার ভোট আমি দেব দিনের ভোট রাতে দিব!
তিনি বলেন, আজকে আওয়ামী লীগ নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি হিসেবে পরিচয় দেন। তাহলে একদলীয় বাকশাল শাসন কেনো? 
মঈন খান আরো বলেন, অনেকেই বলেন নতুনভাবে বাংলাদেশে কেনো স্যাংশন আসেনি। এজন্য বিএনপি নাকি হতাশ? তাহলে কি আরো স্যাংশন এলে আওয়ামী লীগ দেশের গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিত? কেনো স্যাংশন দিয়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে হবে?
বিএনপির এই নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ নাকি জনগণের দল! তাহলে তারা আওয়ামী লীগ কেনো? নাকি উর্দু প্রেম ভুলতে পারেনি? এই প্রশ্ন তো আমি করতেই পারি!
ড. মঈন খান বলেন, আমরা দেশের মানুষের ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করার জন্য শান্তিপূর্ণ আন্দোলন কর্মসূচি পালন করে আসছি। ইতিমধ্যে বাংলাদেশের  জনগণ এই সরকারকে প্রত্যাখান করেছে।
তিনি বলেন, ৭ জানুয়ারি নির্বাচন হবে না। আওয়ামী লীগ নির্বাচন করে ফেলেছে। ৭ জানুয়ারি শুধু ফলাফল ঘোষণা করবে। তপশিল নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। আমরা সত্যের পথে আছি। জনগণের সঙ্গে আছি। আমাদের বিজয় হবেই ইনশাআল্লাহ।

ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, আসুন আমরা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে সম্পৃক্ত হই। এবার ফ্যাসিবাদ পরাজিত হবে দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষ বিজয়ী হবে ইনশাআল্লাহ।

অধ্যাপক ড. আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী বলেন, একাত্তর সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রামে বুদ্ধিজীবীদের ভুমিকা অনস্বীকার্য। সেসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ বুদ্ধিজীবীরা নেপথ্যে কাজ করেছেন। কিন্তু পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকায় বুদ্ধিজীবী ও শিক্ষকদের বেছে বেছে নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। শহীদ গিয়াস উদ্দিন, আনোয়ার পাশা তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
তিনি বলেন, আজকেও বাংলাদেশের যে পরিস্থিতি তা আমাদেরকে ৭১ সালের জুন মাসের মতো। আমাদেরকে কথা বলতে দেয়না। এখন এক ব্যক্তির কথা ছাড়া কিছুই হচ্ছে না দেশে। যিনি দেশের গণতন্ত্র ও জনগণের ভোটাধিকার হরণ করেছে। এটাকে বলা হয় ফ্যাসিবাদী। আজকে বিরোধী দলের অসংখ্য নেতাকর্মী আজকে নির্যাতন নিপীড়ন উপেক্ষা করে রাজপথে আন্দোলন করছে। এটাকে বিজয় পর্যন্ত চালিয়ে যেতে হবে। যেমনটা আমরা করেছিলাম ১৯৭১ সালে। বাংলাদেশকে আবার স্বাধীন করতে হবে।

অধ্যাপক ওবায়দুল ইসলাম বলেন, আজকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন চলছে। আমরা অবিলম্বে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তপশিল বাতিল করে সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেওয়ার আহ্বান জানাই।

ডা. হারুন আল রশিদ বলেন, একাত্তর সালে যে চেতনা ও উদ্দেশ্য নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিলো সেই গণতন্ত্র আজ নেই। আমরা আজও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য আন্দোলন করছি। এই আন্দোলনে জয়ী না হলে দেশের সার্বভৌমত্ব বলে কিছু থাকবেনা।

প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু বলেন, বর্তমান সরকার গণতন্ত্র সম্পূর্ণ ধ্বংস করেছে। দেশের গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করেছে। ৭১ সালে যেসব বুদ্ধিজীবী ও মুক্তিযোদ্ধা জীবন দিয়েছেন বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার তাদের সঙ্গে বেইমানি করেছে।

সভাপতির বক্তব্যে রুহুল আমিন গাজী বলেন, দেশে গণতন্ত্র ও কথা বলার স্বাধীনতা নেই। আওয়ামী লীগের শাসনামলে দেশে ৩৯ জন সাংবাদিককে হত্যা করেছে এটা কি বুদ্ধিজীবী হত্যা করেছেন। এটা কি বুদ্ধিজীবী হত্যা নয়? আসুন মানুষের মৌলিক অধিকার ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ি। এটার কোনো বিকল্প নেই। যেমনটি একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশের সমগ্র মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে দেশ স্বাধীন করেছিল।