সরকার বেসামাল হয়ে পড়েছে, কখন কী বলে বুঝা যায় না: মির্জা ফখরুল

আজ সোমবার বিকেলে বগুড়া শহরের সেন্ট্রাল হাইস্কুল মাঠে ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল আয়োজিত তারুণ্যের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। 

সরকার বেসামাল হয়ে পড়েছে, কখন কী বলে বুঝা যায় না: মির্জা ফখরুল

প্রথম নিউজ, রফিক মৃধা, বগুড়া : ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও মন্ত্রীদের কথা শুনে ঘোড়া হাসে এমন মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকার বেসামাল হয়ে পড়েছে। কখন কী বলে বুঝা যায় না। তিনি বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার নয়, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন হতে হবে। তবে তার আগে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও ৪০ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। আমাদের দফা এক দাবি এক শেখ হাসিনার পদত্যাগ।

আজ সোমবার বিকেলে বগুড়া শহরের সেন্ট্রাল হাইস্কুল মাঠে ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল আয়োজিত তারুণ্যের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের দাবিতে চলমান আন্দোলনে তরুণ প্রজন্মকেও জাগ্রত করতে দেশের ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে তরুণ সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপির তিন সংগঠন। যা গত বুধবার চট্টগ্রাম বিভাগে সমাবেশের আয়োজনের মাধ্যমে শুরু হয়েছে। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বিকেল চারটায় পবিত্র কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে সমাবেশ শুরু হয়।

স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এসএম জিলানীর সভাপতিত্বে সমাবেশ পরিচালনা করেন যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল। আজ সোমবার বিকেলে বগুড়া শহরের সেন্ট্রাল হাইস্কুল মাঠে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের এই "তারুণ্যের সমাবেশ" হয়। তরুণ সমাবেশে বক্তব্য দেন বিএনপির রাজশাহী বিভাগের  সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, রংপুর বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক  আসাদুল হাবিব দুলু, বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা, যুবদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সিনিয়র সহ-সভাপতি মামুন হাসান, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসান, ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, বগুড়া জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নূরে আলম সিদ্দিকী রিগ্যান, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসান, জেলা যুবদলের সাবেক নেতা মাহফুজুর রহমান রিটন, জাহাঙ্গীর হোসেন, রাকিবুল ইসলাম শুভ প্রমুখ।এছাড়াও তরুণ সমাজের কয়েকজন প্রতিনিধি তথা চাকুরি থেকে বঞ্চিত ছাত্র মওদুদ আহমেদ, এইচএম ফজলে রাব্বি, জাতীয় ফুটবল দলের খেলোয়াড় মাকসুদুল আলম, গত তিনটি নির্বাচনে ভোট দিতে না পারা ফারজানা ইয়াসমিন তুলি, নির্বাচন কমিশন থেকে চাকুরি হারানো উপজেলা নির্বাচনী অফিসার নাজমুল ইসলাম সুমন, বক্তব্য রাখেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজকে তরুণ-যুবকদের বুঝতে হবে যে, তোমরা দেশের পরবর্তী প্রজন্ম। দেশের গণতন্ত্র, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব আজ বিপন্ন। এসব পুনরুদ্ধার করতে হলে তোমাদেরকে নেতৃত্ব দিতে হবে। দেশ আজ চরম বিপদের সম্মুখীন। এমন সংকটে বাংলাদেশ কখনো পড়েনি। আমরা এই সংকটকালে তরুণ প্রজন্মের ওপর আস্থা রাখতে চাই। আজকে কে আছো জোয়ান হও আগুয়ান হাঁকিছে ভবিষ্যত। যেটা আমাদের জাতীয় ও বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখে গেছেন।

তিনি বলেন, আজকে রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে ব্যবহার করে দেশ পরিচালনা করছে সরকার। আবার তারাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে। তারা ২০০৮ সালে ছলচাতুরীর মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে ২০১৪ ও ২০১৮ সালে একতরফা ও ভোটারবিহীন নির্বাচন করেছে। আজকে সরকার রাজনৈতিক কারণে মেধাবী শিক্ষার্থীদের চাকরি দিতে পারে না। কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারে না। আসলে তারা করবে কীভাবে তারা তো লুটপাট ও বিদেশে টাকা পাচার এবং বেগম পাড়ায় বাড়ি বানাতে ব্যস্ত। তাদের লক্ষ্য হলো লুট করা।

তিনি সরকারের উন্নয়নের সমালোচনা করে বলেন, কয়েকটা ফ্লাইওভার ও কয়েকটা সেতু বানালেই কী উন্নয়ন? উন্নয়ন হলো যখন দেশের সব মানুষ সুখে শান্তিতে বসবাস করে। কিন্তু এখন সরকার নিজেরা শুধু বড় লোক হচ্ছে। তারা দশ টাকা কেজি চাল ও ঘরে ঘরে চাকরি দেওয়ার কথা বলেছিল। কিন্তু সেটা দিতে পারেনি। আসলে তারা প্রতারণা করে আসছে। টাকা ছাড়া এখন চাকরি হয় না।

সরকার ঘোষিত বাজেটের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, হীরক রাজার দেশে যেমন ইচ্ছে তেমনভাবে দেশ চালাতো। কিন্তু পরে জনগণ বিদ্রোহ ঘোষণা করে বললো দড়ি ধরে মারো টান রাজা হবে খান খান। এই সরকারও তেমন। সময় এসেছে এদেরও খান খান করে দিতে হবে।

তিনি বলেন, এই সরকার এতো কাপুরুষ ও ভীত যে সমাবেশে আসার জন্য গাড়ি ঘোড়া বন্ধ করে দিয়েছে। আজকে প্রধানমন্ত্রী আবোল তাবোল বলছেন। তিনি নাকি কাউকে ভয় পাননা। আবার প্রধানমন্ত্রী বিদেশ থেকে ফিরে এসে বলেন, তাকে নাকি আমেরিকা ক্ষমতায় দেখতে চান না। আসলে ক্ষমতাসীনদের কথা শুনে ঘোড়া হাসে। তারা বেসামাল হয়ে পড়েছে। কখন কী বলে বুঝা যায় না।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা দেশে দুর্নীতি বন্ধ করতে চাই। এই সরকার দশ/বারো বছরে তিস্তা নদীর পানি আনতে পারেনি। সীমান্ত হত্যা বন্ধ করতে পারে নি। কিন্তু দেশের মানুষের জন্য এনেছে ঋণ। আজকে মোবাইলে ১০০ টাকা ভরলে ৩০ টাকা আওয়ামী লীগের পকেটে চলে যায়। বিদ্যুতের প্রিপেইড মিটারে ১০০০ টাকা রিচার্জ করলে ৩ শ টাকা কেটে নেয়।

তিনি বলেন, আজকে সরকার বিদ্যুৎ নাকি তারা খুবই উত্পাদন করেছে। তাহলে বিদ্যুৎ গেলো কোথায়। আসলে এরা পুরো দেশটাকে খেয়ে ফেলেছে। তাই বলবো আজকে সময় হলো তরুণদের। তরুণ প্রজন্মকে আবারো ভোটাধিকার, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও ভাতের অধিকার আন্দোলন সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধভাবে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন আমাদের বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারুণ্যের অহংকার তারেক রহমান।

মির্জা ফখরুল বলেন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের মাধ্যমে নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। এর ফয়সালা হবে রাজপথে। আমরা এই ফ্যাসিস্ট সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবো না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন হবে এবং ওই নির্বাচনে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা হবে। তার আগে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও ৪০ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
সমাবেশে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু, আব্দুল খালেক, শাহিন শওকত, আবু বকর সিদ্দিক, আব্দুল মতিন, আমিনুল ইসলাম, ফজলুর রহমান খোকনসহ স্থানীয় ও বিভিন্ন জেলা থেকে আগত নেতাকর্মী ছাড়াও মুক্তিযোদ্ধা দলের কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা ইমরানুল হক চাকলাদারের পক্ষ থেকে দুই শতাধিক মানুষের একটি প্রতিনিধিদলও উপস্থিত হন।

উল্লেখ্য যে, স্কুলের শিক্ষার্থীদের অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা থাকায় সমাবেশস্থলে নেতাকর্মীরা দুপুর আড়াইটা থেকে মাঠে প্রবেশ করেন। রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬ টি জেলার প্রায় সব জেলার নেতাকর্মীরা এই সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন।

তরুণ সমাবেশের আয়োজকেরা জানান, রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের বেশ কয়েকটি জেলার বেশকিছু উপজেলা থেকে রিজার্ভ করা গাড়ি সমাবেশে আসতে দেওয়া হয়নি। বগুড়ায় এই তারুণ্যের সমাবেশের জন্য প্রথমে বগুড়া শহরের আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠে আয়োজনের অনুমতি চাওয়া হয়েছিল। একইদিনে জেলা যুবলীগ শহরের সাতমাথায় শান্তি সমাবেশের ঘোষণা দিলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। যুবলীগ আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠে গাড়ি পার্কিংয়ে সমাবেশের সিদ্ধান্ত নেয়। পরে তারুণ্যের সমাবেশ সেন্ট্রাল হাইস্কুল মাঠে আয়োজনের অনুমতি দেওয়া হয়। যুবলীগও সোমবারের বদলে রোববার শান্তি সমাবেশ করেছে।

যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বলেন,বর্তমান সরকারের আমলে প্রায় ৪ কোটি ৭০ লাখ নতুন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। আওয়ামী লীগ না করার কারণে অনেক মেধাবীদের চাকুরি হচ্ছে না। তাদের বিরুদ্ধে কথা বললে গুম খুন করা হচ্ছে। জামালপুরে একজন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। কারণ তিনি আওয়ামী লীগের সত্য ঘটনা প্রকাশ করেছেন। আওয়ামী লীগ দিনের ভোট রাতেই করে। খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সরকারের পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত কেউ ঘরে ফিরবো না মর্মে উপস্থিত সব নেতাকর্মীকে শপথবাক্য পাঠ করান টুকু।

স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান বলেন, আমাদের তরুণ সমাবেশ ঘিরে সারাদেশে তরুণ প্রজন্মের মাঝে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। কোনো বাধা বিপত্তি তরুণদেরকে দমাতে পারেনি। ইনশাআল্লাহ তরুণ প্রজন্মের হাত ধরেই বর্তমান অবৈধ সরকারের পতন ঘটাবে।