সরকার গঠনে অচলাবস্থার দায় নওয়াজের দলের ওপর চাপালেন বিলাওয়াল

সরকার গঠনে অচলাবস্থার দায় নওয়াজের দলের ওপর চাপালেন বিলাওয়াল

প্রথম নিউজ, আন্তর্জাতিক ডেস্ক: পাকিস্তানে নির্বাচনের দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এখনও সরকার গঠন করা সম্ভব হয়নি। দেশটির দুই রাজনৈতিক দল পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) ও পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) মাঝে জোট সরকার গঠনের আলোচনা চললেও কোনও সমাধানে পৌঁছাতে পারেনি। রাজনৈতিক এই অচলাবস্থার পেছনে দল দুটির নেতারা পরস্পরকে দায়ী করেছে। মঙ্গলবার ইসলামাবাদে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে পিপিপির চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, সরকার গঠনের বিষয়ে ‘‘কেউই’’ তাদের অবস্থান পরিবর্তন না করলে বিপজ্জনক অচলাবস্থা তৈরি হতে পারে।

পিএমএল-এনের নাম উচ্চারণ না করেই বিলাওয়াল বলেছেন, ‘‘(আলোচনায়) অগ্রগতি কেবল তখনই ঘটতে পারে, যখন ‘কেউ’ তাদের অবস্থান পরিবর্তন করতে আগ্রহী হয় (...) আমরা আমাদের অবস্থানে আছি এবং এই অবস্থানের কোনও পরিবর্তন হবে না।’’ জুলফিকার আলী ভুট্টোর মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্টের রেফারেন্সের শুনানি শেষে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব মন্তব্য করেছেন তিনি।

বিলাওয়াল এমন এক সময়ে এসব মন্তব্য করেছেন, যখন পিএমএল-এন এবং পিপিপির সমন্বয় কমিটিগুলো আগামী সরকার গঠনের বিষয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য মঙ্গলবারে ষষ্ঠবারের মতো বৈঠকে বসছে। দেশটিতে সরকার গঠনের জন্য জাতীয় পরিষদে উভয় দলই পর্যাপ্তসংখ্যক আসন নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হওয়ায় দফায় দফায় জোট সরকার গঠনের জন্য এসব বৈঠক করছে।

পিপিপি প্রধানমন্ত্রী পদের প্রার্থীকে সমর্থন জানাতে রাজি হলেও পিএমএল-এনের মন্ত্রিসভায় যোগ দেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। যে কারণে দুই দলের মাঝে একের পর এক বৈঠক হলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পৌঁছাতে পারেনি। তবে পিএমএল-এনের প্রতি সমর্থনের বিনিময়ে বিলাওয়ালের নেতৃত্বাধীন দলটি আসিফ আলি জারদারিকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করাসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক পদের দিকে নজর রাখছে।

দেশটির কারান্তরীণ সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সমর্থিত প্রার্থীরা গত ৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আসনে জয় পেয়েছে। দেশটির সংসদের ৩৩৬ আসনের নিম্নকক্ষে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় ১৬৯টি আসনে পৌঁছানোর প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো স্বতন্ত্র প্রার্থীদের দলে টানার চেষ্টা করছে। ৯৪টি আসনে জয় নিয়ে জাতীয় পরিষদে সর্ববৃহৎ দল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে পিটিআই। এরপরে পিএমএল-এন এবং পিপিপি যথাক্রমে ৭৯ ও ৫৪টি আসনে জয় পেয়েছে।

বিলাওয়াল বলেছেন, আলোচনা নিয়ে এই অচলাবস্থা গণতন্ত্র বা অর্থনীতির জন্য উপকারি হবে না। দেশটির সামরিক বাহিনীর সাথে পিপিপি যোগাযোগ করেছে কি না, সাংবাদিকদের এমন এক প্রশ্নের জবাবে বিলাওয়াল বলেন, ‘‘আমি যে সামরিক বাহিনীর সাথে সংশ্লিষ্ট তার প্রমাণ কোথায়? আমাকে অভিযুক্ত করার আগে প্রমাণ দিন।’’

তিনি বলেন, দেশের জনগণ একক কোনও দলকে সংখ্যাগরিষ্ঠতা দেয়নি। জনগণ এমন একটি সিদ্ধান্ত দিয়েছে, যার বিষয়ে সকল অংশীদারদের ঐকমত্যে আসতে হবে। ‘‘"রাজনৈতিক অংশীদারদের একসাথে বসে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমাকে যদি পিএমএল-এনকে ভোট দিতে হয়, আমি আমার শর্ত অনুযায়ী তা করব।’’

এর আগে, দেশটির সংবাদমাধ্যম জিও নিউজের সাথে আলাপকালে পিপিপির তথ্যবিষয়ক সম্পাদক ফয়সাল করিম কুন্দি ভবিষ্যতের সরকারের ফেডারেল মন্ত্রিসভার অংশ হওয়ার বিরুদ্ধে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্তের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

কোনও দলের প্রার্থীর তিন বছর এবং দুই বছরের জন্য প্রধানমন্ত্রী পদে থাকার ফর্মুলা নেই উল্লেখ করে কুন্দি বলেন, ‘‘১৬ মাসের জোটের সময় পিএমএল-এনের সাথে (আমাদের) অভিজ্ঞতা সুখকর ছিল না। তবে আজকের (মঙ্গলবার) বৈঠকে দুই পক্ষের মধ্যে ঐকমত্য হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।