সম্পত্তি হাতিয়ে নিলেন মেয়ের জামাই, শাশুড়ির মানববন্ধন

শনিবার (১৪ অক্টোবর) দুপুর সাড়ে ১২টায় মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবের সামনে এ মানববন্ধন হয়।

সম্পত্তি হাতিয়ে নিলেন মেয়ের জামাই, শাশুড়ির মানববন্ধন

প্রথম নিউজ, মৌলভীবাজার: মৌলভীবাজারে মেয়ের জামাই মো. জাকারিয়ার বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছেন শাশুড়ি রাজিয়া হক। ভূসম্পত্তি আত্মসাৎ, নির্যাতন ও প্রাণনাশের হুমকির প্রতিবাদে স্বজনদের নিয়ে তিনি এ মানববন্ধন করেন।

শনিবার (১৪ অক্টোবর) দুপুর সাড়ে ১২টায় মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবের সামনে এ মানববন্ধন হয়। রেজাউল হক, রেশমা আক্তার, সাইফুল ইসলাম, তাহমিনা, ফাতেমা আক্তার, মুক্তা, বদরুল ইসলামসহ তার পরিবারের প্রায় ১৫-২০ জন আত্মীয়স্বজন ওই মানববন্ধনে অংশ নেন।

রাজিয়া হক তার বক্তব্যে বলেন, আমি রাজিয়া হক ৮৭ মধ্যপাড়া, সিকান্দার আলী সড়ক, ৪নং ওয়ার্ড মৌলভীবাজারের বাসিন্দা। জন্ম থেকে ওই ঠিকানায়, মায়ের নামে রেজিস্ট্রিকৃত বাসায় আমার বাবা, মা, স্বামী ও দুই সন্তান মো. রেজাউল হক ও উম্মে সালমা হকসহ বসবাস করে আসছি। ২০১৫ সালে বড় মেয়ে ঘোড়াখাল নিবাসী মরহুম মনোর মিয়া ছোট ছেলে মো. জাকারিয়াকে ভালোবাসে বিয়ে করলে তাদের দুজনকে আমার বাসায় আশ্রয় দেই।

তিনি আরও বলেন, আমার অসুস্থতা ও দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে মেয়ে ও মেয়ের জামাই মো. জাকারিয়া সম্পত্তি দখলের লোভে এক গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়।   একমাত্র ছেলেকে আমার কাছে নেশাখোর, জুয়াড়ি ও সন্ত্রাসী হিসেবে প্রমাণে লিপ্ত হয়। আমিও সরল মনে তাদের কথা ও ষড়যন্ত্রে বিশ্বাস করে ছেলেকে ভুল বুঝি। পরে তার সঙ্গে খারাপ আচরণ করে তাকে বাসা থেকে বের করে দেই। ছেলের অনুপস্থিতিতে আমার শরীর আরও খারাপ হতে থাকলে ও পরবর্তীতে আমার খাবার/পানীয় দ্রব্যের সঙ্গে চেতনানাশক মিশিয়ে ও ভুল বুঝিয়ে  ১২ দশমিক ৩৫ শতক ভূমির শূন্য দশমিক ৫ শতক ছাড়া বাকি পুরো সম্পত্তি আমার মেয়ে আমার কাছ থেকে হেবা দলিল করে নেয়। যা আমি পরবর্তীকালে জানতে পারি। ওই হেবা ঘোষণাকালে মেয়ে ও মেয়ের জামাই ও তাদের ষড়যন্ত্রে সহায়তাকারী ছাড়া কোনো আত্মীয়, প্রতিবেশী, স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর, গণ্যমান্য ব্যক্তিরা এমন কি আমার বড় মেয়ে ও একমাত্র ছেলে মো. রেজাউল হক উপস্থিত ছিল না। যা হেবা ঘোষণার পরিপন্থী।

শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের প্রসঙ্গ তিনি বলেন, পরবর্তীকালে বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহে আমার মেয়ে ও মেয়ের জামাই মো. পুরো সম্পত্তি দখল করে নিতে চাইলে আমি বাধা দিলে আমার ওপর বিভিন্ন প্রকারের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করে। মেয়ের জামাই মো. জাকারিয়া ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায় থাকায় তার বিরুদ্ধে খুব বেশি প্রতিবাদ করতে পারিনি। তবে বিভিন্ন সময় আমি স্থানীয় এমপি, পৌর মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস-চেয়ারম্যান ও স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও শহরের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের কাছে আমার দুরবস্থার বিবরণ দিয়ে বিচারপ্রার্থী হই। কিন্তু সমস্যার কোনো সমাধান হয়নি। উল্টো নিপীড়নের মাত্রা বাড়তে থাকে।

তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি আমি আমার মেয়ের জামাই জাকারিয়া মৌলভীবাজার জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি পদপ্রার্থী হলে আমি অপরাগ হয়ে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ ও স্বেচ্ছাসেবকলীগের নেতাদের কাছে আমার দুরবস্থার বিবরণ তুলে ধরি এবং মো. জাকারিয়াকে কমিটিতে কোনো পদ-পদবি না দেওয়ার অনুরোধ করি।

‘মানবেতর জীবনযাপন’ এর প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমার একটি ভিডিও বার্তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপলোড হলে এতে চরমভাবে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে আমার মেয়ে উম্মে সালমা হক ও মেয়ের জামাই জাকারিয়া। তারা আমাকে মারধর করে,  হুমকি-ধামকি প্রদানসহ আমার খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেয়। এমনি আমি খেতে বসলে মেয়ে আমার হাত থেকে খাবার প্লেট কেড়ে নিয়ে আমাকে ধাওয়া দেয়। বর্তমানে আমি নিজ বাড়ি থেকে আমার ছেলে ও প্রতিবেশীর বাড়িতে খাওয়া-দাওয়া করে মানবেতর জীবনযাপন করছি।

রাজিয়া হকের ছেলে রেজাউল হক মানববন্ধনে বলেন, আমার মা রাজিয়া হক একজন সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে। আওয়ামী পরিবারের মেয়ে। আমার মায়ের সঙ্গে যে অন্যায় আচরণ জাকারিয়া করেছে আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই। আমার মায়ের এ সম্পত্তিটা ছিল আমার নানির। নানি মারা যাওয়ার পর আমার মা এ সম্পত্তির মালিক হন। মা এ সম্পত্তি আমরা এক ভাই এক বোনের কারো মধ্যে ভাগভাটোয়ারা করে দেননি। ছলনা করে জাকারিয়া এ সম্পত্তি হাতিয়ে নেয়।

মৌলভীবাজার জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি পদপ্রার্থী মো. জাকারিয়া বলেন, আমাকে রাজনৈতিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করার উদ্দেশে এ মানববন্ধন করা হয়েছে।