সুপ্রিম কোর্টে সাংবাদিকদের উপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ

সুপ্রিম কোর্টে সাংবাদিকদের উপর হামলার প্রতিবাদে রাজধানীতে সাংবাদিকদের বিক্ষোভ : ব্যর্থ সরকারের পদত্যাগ দাবি  

সুপ্রিম কোর্টে সাংবাদিকদের উপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ
সুপ্রিম কোর্টে সাংবাদিকদের উপর হামলার প্রতিবাদে রাজধানীতে সাংবাদিকদের বিক্ষোভ : ব্যর্থ সরকারের পদত্যাগ

প্রথম নিউজ, ঢাকা : সুপ্রিম কোর্টে দায়িত্বপালনরত সাংবাদিকদের উপর পুলিশী হামলার প্রতিবাদে রাজধানীতে সাংবাদিকরা বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে। বিক্ষুব্দ সাংবাদিকরা প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে মিছিল নিয়ে নগরীর  কদমফুল ফোয়ারা, তোপখানা রোড এলাকা প্রদক্ষিণ শেষে প্রেস ক্লাবে এসে প্রতিবাদ সমাবেশে করে। সমাবেশে সাংবাদিক নেতারা বলেন, নির্যাতিত নাগরিকরা সুপ্রিমকোর্টে গিয়ে আশ্রয় চায়।আজ সুপ্রিম কোর্টও নিরাপদ নয়।সেখানে সাংবাদিকরা নির্বিচারে পেটানো হচ্ছে। আইনজীবীরা মার খাচ্ছে। মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেয়া হচ্ছে। সুপ্রিমকোর্ট আর মানুষের ভরসাস্থল থাকছে না। সাংবাদিক আজ অসহায়। দেশের নাগরিকরা আজ অসহায়। সরকার রাষ্ট্রের অর্গাণ গুলোকে ধবংস করে দিয়েছে। দেশকে তারা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। সমাবেশ থেকে সরকারের বিরুদ্ধে দেশ পরিচালনায় ব্যর্থতার অভিযোগ এনে পদত্যাগ দাবি করা হয়। ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজে এ বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে।

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএফইউজের সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন গাজী , বিএফইউজের সাবেক মহাসচিব এম এ আজিজ, একুশে পদক প্রাপ্ত ছড়াকার ও সিনিয়র সাংবাদিক আবু সালেহ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সহসভাপতি বাছির জামাল, রাশেদুল হক, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সহসভাপতি আমিরুল ইসলাম কাগজী, জাতীয় প্রেস ক্লাব ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য কাজী রওনাক হোসেন, শাহনাজ বেগম পলি,সিনিয়র সাংবাদিক মিজানুর রহমান ভূঁইয়া, মহসিন হোসাইন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্মসম্পাদক শাহজান সাজু, সাংগঠনিক সম্পাদক দিদারুল আলম, দপ্তর সম্পাদক ডিএম অমর, রফিক লিটন, জেসমিন জুঁই প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

রুহুল আমিন গাজী বলেন, সুপ্রিম কোর্টে গতকাল আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মহড়া হয়ে গেল। আগামী জাতীয় নির্বাচন কেমন হবে সেটি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন থেকেই অনুমেয়।মানুষের শেষ ভরসাস্থল আদালতেও আজ মানুষের নিরাপত্তা নেই। আদালত পাড়ায় আজ আইনজীবীদের ভোটাধিকার কেড়ে নেয়া হচ্ছে।সাংবাদিকদের নির্মমভাবে পেটানো হচ্ছে।বিচারকরা বসে বসে তামাশা দেখছেন,কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।আদালতের যদি এ অবস্থা হয়,মানুষ কার কাছে যাবে? কোথায় বিচার পাবে? আজ দেশের নাগরিকরা পুরোপুরি অসহায়। 
তিনি বলেন, নাগরিকদের জান,মালের নিরাপত্তা দিতে এসরকার ব্যর্থ হয়েছে। দেশ আজ খুনি,লুটেরাদের স্বর্গভূমিতে পরিণত হয়েছে। মানুষের জীবন বিপন্ন। গণতন্ত্র নেই। মানবাধিকার ভুলুন্ঠিত।ভোটাধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে।ভিন্নমতের লোকদের ধরে নিয়ে গায়েব করে দেয়া হচ্ছে। মানুষের স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি নেই। এসরকার দেশকে মনুষ্য বসবাসে অযোগ্য করে ফেলেছে। সাংবাদিকদের এনেতা দেশ পরিচালনায় সরকারের সীমাহীন ব্যর্থতার অভিযোগ এনে সরকারের পদত্যাগ দাবি করে করেন।

এম এ আজিজ বলেন,দেশে চরম ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন চলছে। গণতন্ত্র আজ নির্বাসিত। প্রবল দুর্নীতি, লুটপাট, অনিয়ম এবং সরকারের গণবিরোধী পদক্ষেপের বিরুদ্ধে যাতে কোন আন্দোলন গড়ে উঠতে না পারে তার জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন তৈরি করেছে। এই আইন সাংবাদিকতাকে শেষ করে দিয়েছে। 
তিনি বলেন,স্বাধীন বিচার বিভাগ হল জনগণের মৌলিক অধিকারসমূহ প্রয়োগের শক্তি। অথচ স্বাধীন বিচার বিভাগের অনুপস্থিতিতে আইনের শাসনের পরিবর্তে আমলাতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা শক্তি অর্জন করে চলছে। বিচারের নামে পুলিশি বিচার চলবে কিনা তাই দেখতে হবে। ফ্যাসিবাদী শাসনের কারণে দিন দিনদুর্বল হচ্ছে জনগণ। অধিকার হারাচ্ছে জনগণ। জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার গঠনের ব্যবস্থা বিলীন হয়ে গেছে। শাসনতন্ত্রে বলা আছে, প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিতরা সরকার গঠন করবে। প্রতিদ্বন্দ্বিতা না থাকলেও বিনা ভোটে তাদের নির্বাচিত বলা যাবে কিনা সে সম্পর্কে প্রশ্ন তোলা যেতে পারে। কারণ প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকলে বলা যাবে না যে ভোটাররা তাকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করেছে। শাসনতন্ত্র তো বলেছে ভোটারদের ভোটে নির্বাচিত হতে হবে। গত সংসদ নির্বাচনে সরকার ‘নির্বাচিত’ হয়েছে ভোটারদের ভোট ছাড়াই।দিনের ভোট আগেত রাতেই হয়ে গেছে। গতকাল সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনেও একই দৃশ্য দেখলাম।নিশীরাতের সরকারের অধীন পুনরায় সংসদ নির্বাচন করতে দখলদাররা মরিয়া।আসন্ন নির্বাচন কেমন হবে গতকাল জনগন টের পেয়ে গেছে।

সাংবাদিকদের এনেতা বলেন,জনগণের ভোটের সরকার নির্বাচিত না হওয়ার অর্থই হচ্ছে জনগণের কাছে সরকারের কোনো দায়বদ্ধতা স্বীকার না করা। জনসমর্থন ছাড়া ক্ষমতায় থাকতে হলে তো আইন-কানুন বা শাসনতন্ত্র মেনে চলা সম্ভব নয়। তাই তাদের দুর্নীতির শক্তির ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। সুবিধাবাদী লোকদের খোঁজা হচ্ছে। জনস্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করার জন্য জনগণের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভাগাভাগি করা হচ্ছে।সমগ্র জাতি আজ অন্যায়-অবিচারের কাছে অসহায়। 

কাদের গনি চৌধুরী বলেন, সাংবাদিকরা কোনো পক্ষ নয়, তারা শুধু সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়েছিল। কিন্তু গণমাধ্যম কর্মীদের পরিচয়পত্র এবং মাইক্রোফোন এবং ক্যামেরা থাকা স্বত্তেও তাদের টার্গেট করে এ হামলা চালানো হয়। যা অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক।বিরোধী মতের আইনজীবীদের উপর হামলা ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ভোট ডাকাতির ছবি ও নিউজ যাতে সংগ্রহ করতে না পারে সে জন্য পরিকল্পিতভাবে এই হামলা করা হয়েছে।
তিনি বলেন বিচারালয়ে সাংবাদিকদের উপর এমন হামলা এবং এভাবে ভোট ডাকাতির মেনে নেয়া যায় না। সাংবাদিকদের এভাবে পেটাল বিচারপতিরা চেয়ে চেয়ে দেখলেন এটা সহ্য করি কিভাব? 
পুলিশ নির্দয়ভাবে পিটিয়ে আহত করেছে জাগো নিউজের সিনিয়র রিপোর্টার ফজলুল হক মৃধা, এটিএন নিউজের রিপোর্টার জাবেদ আক্তার, আজকের পত্রিকার রিপোর্টার এস এম নূর মোহাম্মদ, মানবজমিনের মাল্টিমিডিয়া রিপোর্টার আব্দুল্লাহ আল মারুফ, এটিএন বাংলার ক্যামেরাপার্সন হুমায়ুন কবির, সময় টিভির ক্যামেরাপারসন সোলাইমান স্বপন, ডিবিসির ক্যামেরাপারসন মেহেদী হাসান মিম ও বৈশাখী টিভির ক্যামেরাপারসন ইব্রাহিমসহ আরো অনেক সংবাদিককে। এসময় মনে হলো এটা আদালত পাড়া নয়, একটা টর্চারসেল। বিচারালয়ে এমন অপকর্ম করে অভিযুক্ত পুলিশগুলো চাকরিতে থাকে কি করে?

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: