সচল হচ্ছে জিয়া পরিবারের সব দুর্নীতি মামলা

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, তার স্ত্রী জোবায়দা রহমান ও বেগম খালেদা জিয়ার ভাই শামীম এস্কান্দারের দুর্নীতি মামলা সচলের জন্য আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে দুদক।

সচল হচ্ছে জিয়া পরিবারের সব দুর্নীতি মামলা
ফাইল ফটো

প্রথম নিউজ, ঢাকা: দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকা জিয়া পরিবারের সদস্যদের দুর্নীতির মামলা সংক্রান্ত রিট ও লিভ টু আপিল শুনানির উদ্যোগ নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এর অংশ হিসেবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, তার স্ত্রী জোবায়দা রহমান ও বেগম খালেদা জিয়ার ভাই শামীম এস্কান্দারের দুর্নীতি মামলা সচলের জন্য আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে সংস্থাটি।

এছাড়া জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ১০ বছরের সাজার বিরুদ্ধে বেগম খালেদা জিয়ার লিভ টু আপিল করেছেন। এটিও শুনানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক। বিএনপির আইনজীবীরা বলছেন, সরকার ব্যর্থতা ঢাকার জন্য রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে দুদককে ব্যবহার করে জিয়া পরিবারের সবার মামলা সচলের উদ্যোগ নিচ্ছে।

তবে দুদকের আইনজীবী এমন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, জিয়া পরিবারকে টার্গেট করে মামলা সচলের কোনো সম্পর্ক নেই। দীর্ঘদিন  ধরে পড়ে থাকা কিছু রিট মামলা এবং কিছু লিভ টু আপিল আমরা শুনানির উদ্যোগ নিয়েছি। কারণ, যারা রিট করেছেন, লিভ টু আপিল করেছেন, তারা শুনানির কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেন না। দুদক নিজেই এখন এসব মামলা শুনানির উদ্যোগ নিচ্ছে। এটি অব্যাহত থাকবে।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ১০ বছরের সাজা হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার। এ সাজার বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেন তিনি। এটি দ্রুত শুনানির জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ১০ বছরের সাজা হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার। এ সাজার বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেন তিনি। এটি দ্রুত শুনানির জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ প্রসঙ্গে দুদক আইনজীবী খুরশিদ আলম খান বলেন, ‘দীর্ঘদিন হয়েছে বেগম খালেদা জিয়া সাজার বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেছেন। কিন্তু তার আইনজীবীরা শুনানির জন্য কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেন না। এভাবে তো বছরের পর বছর লিভ টু আপিল পড়ে থাকতে পারে না। আর কিছুদিন অপেক্ষা করব। যদি তারা শুনানির উদ্যোগ না নেন তাহলে দুদকের পক্ষ থেকে আমরা বেগম খালেদা জিয়ার লিভ টু আপিল শুনানির উদ্যোগ নেব।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি অরফানেজ ট্রাস্টের নামে সরকারি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। এ মামলায় বেগম খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানসহ মামলার অপর পাঁচ আসামির প্রত্যেককে ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পাশাপাশি ছয় আসামির প্রত্যেককে দুই কোটি ১০ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত- ৫ এর বিচারক আখতারুজ্জামান এ রায় দেন।

বিচারিক আদালতের ওই রায়ের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে হাইকোর্টে আপিল করেন বেগম খালেদা জিয়া, কাজী সালিমুল হক কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ। ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ বেগম খালেদা জিয়ার সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করেন। হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেন বেগমখালেদা জিয়া।

১৫ বছর পর তারেক-জোবায়দার মামলা প্রশ্নে রুল শুনানির উদ্যোগ: ২০০৭ সালে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও হিসাব বিবরণীতে সম্পদ গোপন করার অভিযোগে মামলা দায়ের ও এর প্রক্রিয়ার বৈধতা নিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমানের বিরুদ্ধে পৃথক রিট করা হয়। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ওই বছরের নভেম্বরে হাইকোর্ট রুল দেন। রুল শুনানির জন্য হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে দুদক।

হাইকোর্ট তারেক রহমান ও ডা. জোবায়দা রহমানের রিট মামলার রুল শুনানির জন্য আগামী ২৯ মে দিন ধার্য করেছেন। গত ১৯ এপ্রিল বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের বেঞ্চ এদিন ধার্য করেন।

মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ঘোষিত আয়ের বাইরে চার কোটি ৮১ লাখ ৫৩ হাজার ৫৬১ টাকার মালিক হওয়া এবং সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে রাজধানীর কাফরুল থানায় মামলা করে দুদক। মামলায় তারেক রহমান, তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান ও শাশুড়ি ইকবাল মান্দ বানুকে আসামি করা হয়। একই বছর তারেক রহমান ও তার স্ত্রী পৃথক রিট আবেদন করেন। রিটে জরুরি আইন এবং মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা হয়। হাইকোর্ট রুল জারি করে স্থগিতাদেশ দেন।

জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনে সহযোগিতার অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলা বাতিলে তারেক রহমানের স্ত্রী জোবায়দা রহমানের করা আবেদন (লিভ টু আপিল) খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ। ফলে তারেকের স্ত্রীর বিরুদ্ধে বিচারিক আদালতের এ মামলা সচল হলো। গত ১৩ এপ্রিল প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এ রায় দেন।

মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, জোবায়দা রহমান ও তার মা সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানুর বিরুদ্ধে কাফরুল থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। পরের বছর তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। অভিযোগপত্র দাখিলের পর মামলা বাতিল চেয়ে জোবায়দা রহমান হাইকোর্টে আবেদন করেন। চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ১২ এপ্রিল হাইকোর্ট জোবায়দার আবেদন খারিজ (রুল ডিসচার্জ) করে রায় দেন। একই সঙ্গে ওই মামলায় আট সপ্তাহের মধ্যে জোবায়দা রহমানকে বিচারিক আদালতে উপস্থিত হতে নির্দেশ দেওয়া হয়। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন জোবায়দা রহমান।

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দারের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলা বাতিলের আবেদনের শুনানির জন্য ২৯ মে দিন ধার্য করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

গত ১৭ এপ্রিল প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে তিন বিচারপতির বেঞ্চ এ দিন নির্ধারণ করেন। অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের পর অনুসন্ধানে নেমে শামীম এস্কান্দারকে সম্পদ বিবরণী জমা দিতে ২০০৭ সালে নোটিশ দেয় দুদক। অনুসন্ধান শেষে তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে ২০০৮ সালের ৫ মে রাজধানীর রমনা থানায় মামলা করে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটি। মামলায় হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিনও নেন শামীম এস্কান্দার ও তার স্ত্রী। এরপর এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৯ সালে মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেন হাইকোর্ট। তা আপিল বিভাগের রায়েও বহাল থাকে। ২০১৯ সালে ওই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করেন আদালত।

এর মধ্যে ২০১৬ সালে মামলাটি বাতিল চেয়ে শামীম এস্কান্দার আবেদন করলে শুনানি শেষে তা খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করেন শামীম এস্কান্দার ও তার স্ত্রী।

এদিকে, হঠাৎ করে জিয়া পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো সচলের উদ্যোগকে ‘দূরভিসন্ধিমূলক’ বলে মনে করছেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। জিয়া পরিবারের অন্যতম আইনজীবী ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘জিয়া পরিবারকে সব দিক থেকে আঘাত করতে দুদক ও সরকার একাকার হয়ে গেছে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে দুদককে ব্যবহার করছে সরকার। লাখ লাখ মামলা ঝুলে আছে, সেদিকে নজর নেই দুদকের। সরকারের ব্যর্থতা ঢাকতে হঠাৎ করে তারা জিয়া পরিবারের সদস্যদের মামলা সচলের উদ্যোগ নিয়েছে বলে মনে করি।’

দুদকের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশিদ আলম খান এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘জিয়া পরিবারকে টার্গেট করে নতুন করে মামলা সচলের কোনো সম্পর্ক নেই। দীর্ঘদিন  ধরে পড়ে থাকা কিছু রিট মামলা এবং কিছু লিভ টু আপিল আমরা শুনানির উদ্যোগ নিয়েছি। কারণ, যারা রিট করেছেন, লিভ টু আপিল করেছেন, তারা শুনানির কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেন না। দুদক নিজেই এখন এসব মামলা শুনানির উদ্যোগ নিচ্ছে। এটি অব্যাহত থাকবে।’

রাজনৈতিকভাবে কোনো পরিবারকে ধ্বংস করা দুর্নীতি দমন কমিশনের লক্ষ্য নয়। দুর্নীতির মামলার বিচার হয় তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে, রেকর্ডের ভিত্তিতে। দুর্নীতি দমন কমিশনের লক্ষ্য দুর্নীতির মূলোৎপাটন করা। দুর্নীতির মামলাগুলো তড়িৎ নিষ্পত্তি চায় দুদক। ১০ বছর ধরে তাদের রিট পিটিশন পড়ে আছে, আড়াই বছর ধরে লিভ টু আপিল পড়ে আছে। এ কারণে আমরা শুনানির উদ্যোগ নিয়েছি— বলেন দুদক আইনজীবী।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom