সাইবার নিরাপত্তা আইন যেন দমনমূলক না হয়: অ্যামনেস্টি

যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংস্থাটি নতুন সাইবার আইনে আগের আইনের একই ধরনের ‘দমনমূলক’ বৈশিষ্ট্য না রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

সাইবার নিরাপত্তা আইন যেন দমনমূলক না হয়: অ্যামনেস্টি

প্রথম নিউজ, আন্তর্জাতিক ডেস্ক: বাংলাদেশে বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নাম ও বিষয়বস্তুতে পরিবর্তন এনে সাইবার নিরাপত্তা আইন নামে সরকারের নতুন আইন করার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে দেওয়া এক বার্তায় যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংস্থাটি নতুন সাইবার আইনে আগের আইনের একই ধরনের ‘দমনমূলক’ বৈশিষ্ট্য না রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

অফিসিয়াল টুইটার পেজে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক আঞ্চলিক দপ্তর বলেছে, বাংলাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ) বাতিলে সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানায় অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। ভিন্নমত দমন এবং অনলাইনে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ন করতে ক্ষমতাসীন দল ও এর সহযোগীরা কঠোর ওই আইনকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছিল।

টুইটে বলা হয়েছে, তবে বাংলাদেশ সরকারকে এটা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের পরিবর্তে যে সাইবার নিরাপত্তা আইন করার পরিকল্পনা করা হয়েছে, তাতে যেন ওই আইনের দমনমূলক বৈশিষ্ট্যগুলো ফিরিয়ে আনা না হয়।

সংস্থাটি বলেছে, প্রস্তাবিত নতুন আইনটি প্রণয়নের আগে সমস্ত অংশীদারদের যেন এটি যাচাই-বাছাই করার এবং আইনের বিষয়ে নিজেদের মতামত প্রদানের পর্যাপ্ত সুযোগ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে এই আইনের যাবতীয় বিধি-বিধানগুলো যাতে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সাথে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়, সেটিও নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি।

টুইটে বলা হয়েছে, আমরা কেবল মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অধিকার চর্চার কারণে যাদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রয়োগ করা হয়েছে, তাদের অবিলম্বে নিঃশর্তভাবে মুক্তি ও তাদের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ প্রত্যাহার করতে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাই।

আজ (সোমবার) সকালের দিকে বহুল আলোচিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ পরিবর্তন করে নতুন আইনের খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। নতুন আইনটি ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩’ নামে প্রতিস্থাপিত হবে।

এই বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পরিবর্তিত হয়ে সাইবার নিরাপত্তা আইন হয়েছে। তবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মধ্যে যেসব ধারা ছিল, সেই ধারা রেখে সাইবার নিরাপত্তা আইন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার জনগণের সরকার। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ‘মিসইউজ’ ও ‘অ্যাবিউজ’ বন্ধ করার জন্য ব্যবস্থা নিয়েছি আইনের মাধ্যমে। এখানে বহু ধারা সংশোধন হয়েছে। এটার আজ নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল নয়, পরিবর্তন হচ্ছে। 

২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫টি ধারা বিলুপ্ত করে জাতীয় সংসদে কণ্ঠভোটে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ পাস হয়। আইনটিকে নিবর্তনমূলক আইন আখ্যা দিয়ে শুরু থেকেই তা বাতিলের দাবি জানিয়ে এসেছে আইনজীবী, ছাত্র-শিক্ষক, মানবাধিকারকর্মী ও বিভিন্ন নাগরিক সংগঠন।

তাদের দাবি, ক্ষমতাসীন দলের লোকজনই বিভিন্ন ব্যক্তির বিরুদ্ধে এই আইনকে নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। আইনটির সমালোচকদের মতে, এ আইনে দায়ের হওয়া মামলার সবচেয়ে বিতর্কিত দুটি বিষয় হলো এখানে মতপ্রকাশকে অপরাধ হিসেবে দেখা হয় এবং আইনের বেশ কয়েকটি ধারা জামিন অযোগ্য। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মোট ৫৩ ধারার মধ্যে ১৪টি ধারা অজামিনযোগ্য হিসেবে নির্দিষ্ট করা আছে।