রণক্ষেত্র বরিশাল, আহত শতাধিক
আজ বুধবার বেলা ১২টার দিকে হাতেম আলী কলেজ চৌমাথা এলাকায় সংঘর্ষের সূত্রপাত।
প্রথম নিউজ, বরিশাল: বরিশাল কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় পুলিশ ও কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে রণক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। বিএম কলেজ এলাকায় ছাত্রলীগের সঙ্গে দিনভর সংঘর্ষে সড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল। নগরীর বিভিন্ন স্থানে হামলায় সংঘর্ষে সাংবাদিক, আন্দোলনকারী ও পুলিশসহ আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক। এর মধ্যে ২২ জনকে শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আজ বুধবার বেলা ১২টার দিকে হাতেম আলী কলেজ চৌমাথা এলাকায় সংঘর্ষের সূত্রপাত।
বিকাল ৫টায় দেখা গেছে, পুরো কলেজ ক্যাম্পাস ও আশেপাশের এলাকা কোটা বিরোধী ছাত্রদের দখলে। পুলিশের দাবি, আন্দোলনকারীরা গাড়ি ভাঙচুর করলে তাদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারসেল নিক্ষেপ করা হয়। এ সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ও লাঠি ছোড়া হয়। এর আগে বেলা সাড়ে ১১টায় বরিশাল কেন্দ্রীয় নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ড সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন বরিশাল সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীরা। পরে বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা এ কর্মসূচিতে অংশ নেন। এদিকে, সকাল ১০টার দিকে হাতেম আলী কলেজ চৌমাথা সংলগ্ন মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা।
এ কারণে মহাসড়কের দুইপাশে আটকে পড়া যানবাহনের দীর্ঘ সারি দেখা যায়। ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। অনেকে পায়ে হেঁটে গন্তব্যে রওনা দেন। তবে রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স ও লাশবাহী গাড়িসহ জরুরি সেবার যানবাহন চলাচলে কোনো বিঘ্ন ঘটাতে দেখা যায়নি শিক্ষার্থীদের। শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন গলিতে অবস্থান নিয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করছেন। বিপরীতে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দিতে টিয়ারসেল ছুড়ছে পুলিশ।
এছাড়া, বেলা ১২টায় বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন। মেডিকেল কলেজের সামনে থেকে শুরু হয়ে বিক্ষোভ মিছিলটি প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে অধ্যক্ষের কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, তারা যৌক্তিক দাবি তুলে আন্দোলন করছেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা রাজপথ ছাড়বেন না। তাদের অভিযোগ, দাবি আদায়ে তারা রাজপথ ছাড়তে না চাইলে পুলিশ তাদের ওপর হামলা করেছে। বেলা সাড়ে ১২টা থেকে শুরু হওয়া সংঘর্ষের রেশ গড়ায় চৌমাথা এলাকা থেকে আন্দোলনকারীদের মূল পয়েন্ট নতুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল এলাকায়। টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে আন্দোলনকারীরা। পুলিশ তাদের হটাতে সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। এক পর্যায়ে টার্মিনালের পুলিশ বক্সের সামনে পুলিশ অবস্থান নেয়। এ সশয় পুলিশ বক্সের চারপাশ ঘিরে ফেলে আন্দোলনকারীররা। মুহুর্মুহু ইট, কাচের বোতল ছোড়া হয় পুলিশকে লক্ষ্য করে। পুলিশও টিয়ারসোল, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুঁড়তে থাকে। টানা সংঘর্ষ চলতে থাকায় গোটা এলাকা এখন রণক্ষেত্র হয়েছে।
এছাড়াও চলমান সংঘর্ষে বিকেল ৪টা পর্যন্ত আন্দোলনকারী ও পুলিশসহ কমপক্ষে ৫০ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. সজিব জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত ২২ জনকে ভর্তি করা হয়েছে। তারা সবাই আঘাতপ্রাপ্ত। এদিকে, দুপুর থেকেই বিএম কলেজ ক্যাম্পাসে কোটা বিরোধী আন্দোলনের ছাত্রদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষ শুরু হয়। ইট পাটকেল নিক্ষেপ, ককটেল বিস্ফোরণের শব্দে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বিকাল ৫টা নাগাদ ক্যাম্পাস এবং সামনের রাস্তায় শুধু কোটা আন্দোলনকারীদের দেখা যাচ্ছে। ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসের আশেপাশের গলিতে অবস্থান নেয়।
হল ছাড়বে না ববির শিক্ষার্থীরা
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) অনির্দিষ্টকালের জন্য শিক্ষা কার্যক্রম ও হল বন্ধ ঘোষণা করেছে প্রশাসন। এদিকে এ ঘোষণার পরপরই শিক্ষার্থীরা হল না ছাড়তে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন। পাশাপাশি বিকেলে শিক্ষার্থীরা বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধের ঘোষণা দিয়েছেন। তারা কোন অবস্থাতেই হল ছাড়বে না বলে জানিয়েছেন।
বুধবার (১৭ জুলাই) দুপুর সাড়ে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. মনিরুল ইসলামের সই করা এক নোটিশে শিক্ষার্থীদের জরুরি ভিত্তিতে বিকেল ৩টার মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়।