যৌতুকের দাবিতে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে হত্যা, স্বামীর মৃত্যুদণ্ড
প্রথম নিউজম চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলায় যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে হত্যার দায়ে মো. মহিউদ্দিন (৩২) নামের একজনকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেছেন আদালত। একই সঙ্গে তাকে তিন লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
একই মামলার আসামি মহিউদ্দিনের মা জরিনা বেগম ও বাবা মো. নুরুকে খালাস দিয়েছেন আদালত।
বুধবার (১৯ জুলাই) নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল চট্টগ্রাম- ৭ এর বিচারক ফেরদৌস আরা এ রায় ঘোষণা করেন। এ সময় তিন আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তাদের মধ্যে মহিউদ্দিনকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়।
রায় ঘোষণা শেষে তাকে পুনরায় সাজা পরোয়ানামূলে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। আসামি জরিনা ও নুরু আগে থেকে জামিনে ছিলেন।
আদালত সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর ভুক্তভোগী সুমি আক্তারের সঙ্গে ফটিকছড়ি উপজেলার দাঁতমারা ইউনিয়নের বাসিন্দা মহিউদ্দিনের সাত লাখ টাকা কাবিনে বিয়ে হয়। কিছুদিন যেতে না যেতেই অভিযুক্ত মহিউদ্দিন এক লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। এ দাবিতে তিনি স্ত্রীকে নানা সময় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতেন।
এ ঘটনায় মহিউদ্দিন ও তার শ্বশুর বাড়ির লোকজনের মধ্যে সালিশ হয়। ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে, উভয়পক্ষ সম্মতও হয়। তবে ২০১৯ সালের ১৫ আগস্ট দিবাগত রাতে মহিউদ্দিনের বাড়ির লোকজন বমির কারণে সুমির মৃত্যু হয়েছে বলে তার মাকে জানান। খবর পেয়ে সুমির মা ঘটনাস্থলে পৌঁছে মেয়ের নিথর মরদেহ দেখতে পান।
এ ঘটনায় ফটিকছড়ির ভূজপুর থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়। একই সঙ্গে থানা পুলিশ নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা করে। তবে, থানা পুলিশ নিয়মিত মামলা নিতে বিলম্ব করে। এ কারণে সুমির বাবা বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে যৌতুকের দাবিতে হত্যার অভিযোগে আরেকটি মামলা দায়ের করেন। এতে মহিউদ্দিন ও তার মা-বাবাসহ মোট তিনজনকে আসামি করা হয়।
আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) চট্টগ্রাম ইউনিটকে তদন্তের দায়িত্ব দেন। সংস্থাটি তদন্ত শেষে অভিযুক্ত তিনজনের বিরুদ্ধে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে। পরে আদালত তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনে করে বিচার শুরু করেন।
সংশ্লিষ্ট আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) খন্দকার আরিফুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আদালতে মোট আটজন সাক্ষ্য দিয়েছেন। আসামি পক্ষে তিনজন সাফাই সাক্ষ্য দিয়েছেন। সবমিলিয়ে আদালতে আসামি মহিউদ্দিন যৌতুকের দাবিতে তার স্ত্রীকে হত্যা করেছেন বলে প্রতীয়মান হয় এবং এর দায়ে তাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন আদালত।
মহিউদ্দিনের মা-বাবার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের খালাস দেওয়া হয়।