মাদারীপুরে ২ রাজস্ব কর্মকর্তার ঘুষের টাকা ভাগাভাগির দৃশ্য ভাইরাল

বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ১০ মিনিট ১৩ সেকেন্ডের ওই ভিডিওটি মুহূর্তের মধ্যেই ছড়িয়ে পড়ে।

মাদারীপুরে ২ রাজস্ব কর্মকর্তার ঘুষের টাকা ভাগাভাগির দৃশ্য ভাইরাল

প্রথম নিউজ, মাদারীপুর: মাদারীপুরে কাস্টমস ভ্যাট-এর দুই কর্মকর্তার ঘুষের টাকা ভাগাভাগির একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ১০ মিনিট ১৩ সেকেন্ডের ওই ভিডিওটি মুহূর্তের মধ্যেই ছড়িয়ে পড়ে।

ভিডিওতে দেখা যায়, কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগের মাদারীপুর সার্কেল কার্যালয়ের রাজস্ব কর্মকর্তা (সার্কেল-১) মো. ইমরান কবীর ও (সার্কেল-২) রফিকুল ইসলাম কাস্টমস অফিস কার্যালয়ে বসে ঘুষের টাকা নিচ্ছেন। ফাঁস হওয়া ভিডিওর শুরুতে একজন ব্যবসায়ীর বিষয় ধরে রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এইডা কী আনছেন?’ পরে ৫০০ টাকার অনেকগুলো নোট গুনে গুনে পকেটে ভরে নেন রফিকুল ইসলাম। এরপর রাজস্ব কর্মকর্তা রফিকুল বলেন, ‘কী যে করেন ভাই আপনারা? মাদারীপুরের লোক এত ধনী, তারপরও যদি এরকম করেন? বাংলাদেশের মধ্যে তৃতীয় ধনী জেলা হলো মাদারীপুর।’

অল্প টাকা দেওয়ায় একপর্যায়ে ব্যবসায়ীর ওপর রাগ হয়ে রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘যে টাকা দিছেন, আমি এ টাকা নিতে পারব না ভাই। এখান থেকে আমি ইমরান সাহেবকে কি দেবো, আর আমি কি নেবো? আমি স্যারকে কীভাবে বোঝাব? স্যারে তো আমাকে বকাবকি করবে! আমি এটা নিতে পারব না আপনার কাছে মাফ চাই। এ (তিন হাজার টাকা) আমি নিতে পারব না। বাকি টাকা কখন দিতে পারবেন। আপনারা স্যারের কাছে গিয়ে বলে যান, তার সাথে দেখা করে যান। কারণ, তিনিই আপনাদের বড় স্যার (ইমরান)। সেই আপনাকে বাঁচাতে পারবে এবং সেই আপনাকে মারতে পারবে। বুঝতে পারছেন!’

শেষ কথায় রফিকুল ওই ব্যবসায়ীকে বলেন, ‘প্রতি মাস শেষে অফিস খরচ বাবদ এক হাজার টাকা করে দিয়ে যাবেন। এ কথা যেন বারবার আর না বলার দরকার পরে। কথা যেন ঠিক থাকে। মনে রাখবেন কথা যেন নড়চড় না হয়। টাকা মাসের ১০ তারিখের ভিতরে আমার কাছে দিয়ে যাবেন। ভিডিওটির ৮ মিনিট ৩৫ সেকেন্ড পরে দেখা যায় রাজস্ব কর্মকর্তা (সার্কেল-১) মো. ইমরান কবীরকে। তিনি ওই ব্যবসায়ীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আপনার দোকানের আশেপাশে অনেকে দিচ্ছে, তাদের ওয়েল অ্যান্ড গুড। আর যারা দিচ্ছে না, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আপনার মোবাইল নম্বর আমাকে দিয়ে যান।’ কিছুক্ষণ পরে ব্যবসায়ী এক হাজার টাকা ইমরান কবীরের টেবিলের ওপরে রাখেন। তারপরে তিনি টাকাটা নিয়ে নেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভিডিওতে থাকা ওই ব্যবসায়ীর নাম অমিত হাসান। তিনি মাদারীপুর পুরান বাজারের ব্যবসায়ী। জানতে চাইলে ওই ব্যবসায়ী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘পুরান বাজারে আমার একটি ছোট পোশাকের দোকান আছে। আমাকে ভ্যাট অফিসের অফিসাররা ভ্যাট অফিসে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে ভ্যাট দিতে বলেন। পরে অফিসে গেলে তারা আমাকে শর্ত অনুযায়ী এক হাজার টাকায় ভ্যাট দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেন। কিন্তু শর্ত হলো, প্রতি মাসে তাদের অফিসে ৩ হাজার টাকা দিতে হবে।’

ভিডিও সম্পর্কে মো. ইমরান কবীর ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘ভিডিওটি আমাদের নয়, এ ভিডিও অন্য কারো হতে পারে। এটি আমাদেরকে ফাসানোর জন্য সাজানো হয়েছে। এ বিষয়ে আমার কোনো কথা নাই। রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ওই ব্যবসায়ী আমার কাছে আসার পর আমরা তাকে ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে টাকা জমা দিতে বলেছি। তার কাছে কোনো অনৈতিক বা টাকা পয়সা দাবি করা হয়নি। ’ঘুষ দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যে কথাগুলো আলোচনা হয়েছে সে কথাগুলো ভুলভাবে উপস্থাপন করছে। এসব ভিত্তিহীন অভিযোগ।

কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগের মাদারীপুর সার্কেল কার্যালয়ের বিভাগীয় কর্মকর্তা ও ডেপুটি কমিশনার মো. এনামুল হক বলেন, ‘আপনারা তো এসেছিলেন, এখন নিউজ করে দেন। আমাদের অসুবিধা নাই।’ এ কথা বলেই ফোন কেটে দেন তিনি। মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক রহিমা খাতুন বলেন, ‘দুই রাজস্ব কর্মকর্তার ঘুষ গ্রহণের ভিডিওটি আমি দেখেছি। পুরো ঘটনা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। অনৈতিক কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom