বিদ্যুৎ-জ্বালানির সরবরাহ আইন বাতিলের দাবি সিপিডি’র

সংস্থাটির মতে, জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি আইনের ফলে সরকারকে বিপুল পরিমাণ বাড়তি ব্যয় করতে হচ্ছে।

বিদ্যুৎ-জ্বালানির সরবরাহ আইন বাতিলের দাবি সিপিডি’র
বিদ্যুৎ-জ্বালানির সরবরাহ আইন বাতিলের দাবি সিপিডি’র

প্রথম নিউজ, অনলাইন: বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি আইন বাতিলের দাবি জানিয়েছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সংস্থাটির মতে, জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি আইনের ফলে সরকারকে বিপুল পরিমাণ বাড়তি ব্যয় করতে হচ্ছে। কোনো কোনো পক্ষ পাচ্ছে বাড়তি সুবিধাও। তাই নো ইলেক্ট্রিসিটি, নো পে- এমন চুক্তিতে গেলে বাড়তি ভর্তুকির চাপ থেকে সরে আসতে পারবে সরকার। গতকাল ধানমণ্ডিতে প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানায় সিপিডি’র রিসার্চ ডিরেক্টর খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। ‘নতুন নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতি ২০২২ (খসড়া): এটি কি পরিচ্ছন্ন জ্বালানির লক্ষ্য পূরণ করতে সক্ষম হবে?’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এক গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করে সংস্থাটি।

প্রতিবেদনে সিপিডি বলছে, খসড়া নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালায় বাস্তবায়নযোগ্য রূপরেখা বা দিকনির্দেশনার অভাব রয়েছে। দরকারি বহু ইস্যু অন্তর্ভুক্তই করা হয়নি। খসড়া মহাপরিকল্পনার সঙ্গেও সংঘর্ষ আছে। এ অবস্থায় ঘাটতিগুলো না মিটিয়ে খসড়া নীতিমালা পাস করা উচিত হবে না। এ ছাড়া দেশের চলমান প্রেক্ষাপটে ২০৪১ সালের মধ্যে মোট জ্বালানির ৪০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন অসম্ভব। গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বিদ্যুৎ খাতের দুর্নীতির ফলে নবায়নযোগ্য জ্বালানি পলিসি আজ পর্যন্ত সম্পূর্ণ বাস্তবায়িত হয়নি। পর্যায়ক্রমে ব্যয়বহুল ভাড়া ও দ্রুত ভাড়ার প্রকল্পগুলো সরকারের বন্ধ করা উচিত। এমনকি ব্যয়বহুল ভাড়া ও কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্টগুলোর সঙ্গে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তিটি পুনর্বিবেচনা করে ‘নো ইলেক্ট্রিসিটি নো পে’ চুক্তিতে যেতে হবে। এতে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে সরকারি ব্যয়ের বোঝা কমবে এবং ভর্তুকির চাপ কমবে।

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ২০০৯ সালে জরুরি বিদ্যুৎ আইনের প্রয়োজন ছিল। ওই সময় বড় রকমের বিদ্যুতের ঘাটতি ছিল, সেটা মেটানোর জন্য চুক্তির দরকার ছিল। এরপর চারবার রিনিউ হয়েছে ওই আইন। আমরা মনে করি, এখন যে জায়গায় আমরা দাঁড়িয়ে আছি, এ রকম চুক্তির আর প্রয়োজন নেই। দ্রুত জ্বালানি সরবরাহ আইন ২০২৬ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই আইন থেকে সরকারের সরে আসা দরকার। এই আইন বিভিন্নভাবে সমস্যা করছে। সাম্প্রতিক সময়ে জ্বালানি নিয়ে যেসব চুক্তি হয়েছে, এর আগেও যেগুলো হয়েছে- সেগুলো এখন সরকারের জন্য বড় রকমের মাথাব্যথার কারণ। এর মূল কারণ এই দ্রুত জ্বালানি সরবরাহ আইন। কয়েকবার এর সংশোধন করে এর মেয়াদ ৫ বছর বাড়ানো হয়েছে। আমরা মনে করি অনতিবিলম্বে এই আইন অবলোপন এবং তা থেকে সরে আসা দরকার। যা হলে প্রতিযোগিতামূলক কাঠামোতে আমরা চলে যেতে পারবো।

সিপিডি’র এ গবেষণা পরিচালক বলেন, বিদ্যুৎ খাতের ভর্তুকি সমন্বয় নিয়ে আইএমএফের সঙ্গে কাজ করছে সরকার। বিদ্যুৎ খাতের ভর্তুকির সমন্বয় করা হচ্ছে ভোক্তার ওপর দায় চাপিয়ে দিয়ে। অথচ এর পুরোটা হয়েছে ফল্টি (ভুল) যেসব পলিসি করা হয়েছে এই দ্রুত জ্বালানি সরবরাহ আইনের অধীনে (তার কারণে)। এর ফলে বিপুল পরিমাণে ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হচ্ছে, বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। সেটির দায় ভোক্তার ওপর চাপিয়ে দিয়ে সাবসিডি অ্যাডজাস্টমেন্ট করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, আইনটি যদি অবলোপন করা হয় এবং সেই অনুযায়ী সব চুক্তির সংশোধনী আনা হয়। নো ইলেক্ট্রিসিটি, নো পে- এমন চুক্তির দিকে যদি যাওয়া হয়, তাহলে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের যে বাড়তি ভর্তুকি, এখান থেকে ন্যাচারালি সরে আসার সুযোগ রয়েছে। ফসিল ফুয়েল থেকে সরে এসে ধীরে ধীরে রিনিউয়েবল এনার্জির (নবায়নযোগ্য শক্তি) দিকে গেলে বড় রকমের ভর্তুকির চাপ থেকে সরে আসার সুযোগ রয়েছে। তিনি আরও বলেন, নতুন নীতিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎসের কথা বলা হয়েছে। শুধু সোলার বলেই ছেড়ে দেয়া হয়নি। রুফটফ সোলার, নেট মিটারিং, মিনি গ্রিড, ন্যানো গ্রিড, সোলার ইরিগেশন, চার্জিং স্টেশন, স্ট্রিট লাইটে রিনিউয়েবল এনার্জি, ফ্লোটিং সোলার সিস্টেম- এ রকমভাবে ডিটেইল বলা আছে। একইভাবে উইন্ড এনার্জি, বায়োমাস এনার্জি, বায়ো ফুয়েলের কথা বলা হয়েছে। রিনিউয়েবল এনার্জির কিছু নতুন উৎসের কথাও এখানে বলা হয়েছে। এর ভিত্তিতে আগামীতে মাস্টারপ্ল্যান তৈরির কথা বলা হয়েছে। আমাদের কাছে মনে হয়েছে, এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক। এতে কিছু টার্গেটের কথা বলা হয়েছে। রিনিউয়েবল এনার্জির ক্ষেত্রে কিছু টার্গেট দেয়া হয়েছে।

প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর কথা এতে উল্লেখ রয়েছে জানিয়ে এই গবেষণা পরিচালক বলেন, স্রেডাকে এখানে নোডাল এজেন্সি বলা হয়েছে। আমরাও তাই মনে করি। কিন্তু স্রেডাকে সব ধরনের ক্যাপাসিটি দিতে হবে। বড় পাওয়ার প্ল্যান্টের প্রস্তাবনা দেখভাল করার ও অনুমতি দেয়ার ক্ষমতা স্রেডাকে দেয়া উচিত। প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর সংস্কার দরকার আছে। তবে এই সংস্কার আবার খসড়া প্রস্তাবে অনুপস্থিত। তিনি বলেন, নতুন নীতিতে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সরকারের আবার নীতি সংস্কার হয়েছে। মন্ত্রণালয় তার হতে কর্তৃত্ব নিয়ে ফেলছে। এর ফলে এখানে জ্বালানি নীতিতে যে গাইডলাইন দেয়া আছে রেগুলেটরি কমিশনের দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে, আর সরকার এখন যেভাবে দাম নির্ধারণ করেছে তাতে এটা এখন উল্টো দিকে যাত্রা শুরু করছে। আমরা মনে করি, ট্যারিফ সেটিংয়ে রেগুলেটরি কমিশনেই ফিরে যাওয়া উচিত। নির্গমন সংশ্লিষ্ট টার্গেটগুলোকেও এর ভেতর অন্তর্ভুক্ত করা দরকার।

এক প্রশ্নের জবাবে খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, আইনটি না থাকলেও নবায়নযোগ্য জ্বালানির ক্ষেত্রে কোনো চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হবে না। আমরা শুনে এসেছি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতের মূল্য সবচেয়ে কম। অথচ নতুন চুক্তির অধীনে আমরা যে ভারত থেকে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ আনা শুরু করলাম, সেটার মূল্য তো ১৫ টাকা। এটা তো বোধগম্য না কী করে এরকম মূল্য, এ রকম জায়গায় আমরা চুক্তি করতে পারি!

জ্বালানি চুক্তি খোলামেলা হওয়া উচিত জানিয়ে তিনি বলেন, কোনো চুক্তির ডকুমেন্টস আমরা পাই না। কী রেটে চুক্তিগুলো করা হচ্ছে- জনগণের সেটা জানার অধিকার রয়েছে।
নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে সমৃদ্ধ হতে কৃষিজমি নষ্ট করার প্রয়োজন নেই উল্লেখ করে সিপিডি’র এই গবেষণা পরিচালক বলেন, ফাঁকা চর, বাড়ির ছাদ কিংবা রেলওয়ের খোলা জমিতে সোলার বসিয়ে প্রচুর বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: