বাণিজ্য ঘাটতি, ৩১ বিলিয়ন ডলারের রেকর্ড

অর্থবছরের ১১ মাসে রপ্তানির চেয়ে আমদানির পরিমাণ অনেক বেশি হওয়ায় এবং রেমিটেন্সে নেতিবাচক ধারা বজায় থাকায় বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য ঘাটতি হয়েছে ৩০ দশমিক ৮২ বিলিয়ন ডলার৷ আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ঘাটতি বেড়েছে ৪৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ (১০ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলার) ৷ আগের অর্থবছরের আলোচিত সময়ে যা ছিল ২০ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার৷

বাণিজ্য ঘাটতি, ৩১ বিলিয়ন ডলারের রেকর্ড
ফাইল ফটো

প্রথম নিউজ, ঢাকা:   রপ্তানি আয়ের প্রথমবারের মতো এক অর্থবছরে ৫০ বিলিয়ন ডলার ছাড়ালেও আমদানি বেশি হওয়ায় বাণিজ্য ঘাটতি মে শেষে প্রায় ৩১ বিলিয়ন ডলারে ঠেকেছে, যা ইতিহাসের সর্বোচ্চ৷ সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের মে পর্যন্ত আমদানি ব্যয়ের পরিসংখ্যানে এ তথ্য উঠে এসেছে। প্রাথমিক তথ্য প্রকাশ হলেও জুলাই থেকে জুন পর্যন্ত পুরো বছরের আমদানির তথ্য এখনও আসেনি৷ 

পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, মে পর্যন্ত অর্থবছরের ১১ মাসে রপ্তানির চেয়ে আমদানির পরিমাণ অনেক বেশি হওয়ায় এবং রেমিটেন্সে নেতিবাচক ধারা বজায় থাকায় বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য ঘাটতি হয়েছে ৩০ দশমিক ৮২ বিলিয়ন ডলার৷ আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ঘাটতি বেড়েছে ৪৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ (১০ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলার) ৷ আগের অর্থবছরের আলোচিত সময়ে যা ছিল ২০ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার৷

এর প্রভাবে দেশের বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যের ঘাটতিও ১৭ দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলার পার করেছে, যেটিও ইতিহাসের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি৷ এক মাস আগেও এপ্রিল শেষে যা ছিল ১৫ দশামিক ৪২ বিলিয়ন ডলার৷ আর গত বছরের মে থেকে এক বছরের ব্যবধানে চলতি হিসাবের এ ঘাটতি ৬ গুণের বেশি বেড়েছে৷ ২০২০-২১ অর্থবছরের মে মাসে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ২ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার৷তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরের মে পর্যন্ত ১১ মাসে আমদানিতে ব্যয় হয়েছে ৭৫ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার, প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৯ শতাংশ।

এক মাসে আগে এপ্রিলে আমদানির পরিমাণ ছিল ৬৮ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলার৷ অপরদিকে মে শেষে রপ্তানি আয় এসেছে ৪৪ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার৷ গত বছরের মে মাসের তুলনায় বেড়েছে ৩২ দশমিক ৯৮ শতাংশ। এ হিসাবে গত অর্থবছরের জুলাই থেকে মে পর্যন্ত বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩০ দশমিক ৮২ বিলিয়ন ডলার, যা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি৷ এর আগের ২০২০-২১ অর্থবছরের মে শেষে বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ২০ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার৷ এ সময়ে আমদানি পণ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি এসেছে পেট্রোলিয়াম এবং দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে শিল্পের কাঁচামাল ও মধ্যবর্তী পণ্য৷ মূলধনী যন্ত্রপাতি রয়েছে তৃতীয় সর্বোচ্চ অবস্থানে৷ 
এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, বাণিজ্য ঘাটতি এ পর্যায়ে যাবে তা আগেই অনুমান করে ছিলাম। ঘাটতি কমিয়ে আনতে ডিমান্ড কাট (চাহিদা কমিয়ে আনতে হবে) করতে হবে প্রথমেই৷ সরকার ইতোমধ্যে কিছু নীতি গ্রহণ করেছে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ে, যেমন নতুন গাড়ি ক্রয়ে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে৷ এরকম কিছু সিদ্ধান্তের ফলে ৪০ হাজার কোটি টাকার সাশ্রয় হতে পারে৷ তিনি বলেন, সরকারি পর্যায় আরও নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। যেমন, কিছু পণ্যের যেমন বিদ্যুৎ, গ্যাসের দাম বাড়াতে হবে৷ দাম বাড়লে মানুষ সচেতন হয়ে ব্যবহার তথা চাহিদা কমাবে৷ দ্বিতীয়ত বিনিময় হার আরও বাড়ার সুযোগ দিতে হবে৷ তাহলে একটি পর্যায়ে টাকা স্থিতিশীল হবে৷ এতে রপ্তানির পরিমাণ বাড়বে, যেটা এবার হয়েছে৷ পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়ে বেশকিছু পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা, শুল্ক বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, চাহিদা যদি কমিয়ে আনা যায় তাহলে আমদানি কমে যাবে কিছুটা তাতে বাণিজ্য ঘাটতিও কমে যাবে৷ তবে মধ্যবিত্ত ও প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের জন্য আবশ্যকীয় যেমন চাল-গমসহ খাদ্যপণ্যের যথেষ্ট সরবরাহ রাখতে সরকারকে উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি৷

জানা গেছে, দেশের আমদানি ও রপ্তানির এ ঘাটতি পূরণে ভূমিকা রাখে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স৷ গত অর্থবছরের শেষ সময়ে ঋণাত্বক প্রবৃদ্ধি ছিল৷ রপ্তানি আয় এবং ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধিতে থাকা রেমিট্যান্স মিলে আমদানি খরচ পূরণ করতে না পারায় চলতি হিসাবের ঘাটতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলার৷ চলতি হিসাবে এত ঘাটতিতে বাংলাদেশ এর আগে কখনোই পড়েনি৷ গত ২০২০-২১ অর্থবছর থেকে ঘাটতিতে পরে এক সময়ে উদ্বৃত্ত থাকা চলতি হিসাবের ভারসাম্য৷ ওই অর্থবছর শেষে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৪ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার৷ এর আগে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ঘাটতি ছিল ৫ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলার৷ এর আগে ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে ৯ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলারের ঘাটতিই ছিল সবচেয়ে বড়৷ নিয়মিত আমদানি-রপ্তানিসহ অন্যান্য আয়-ব্যয় চলতি হিসাবের অন্তর্ভুক্ত৷ এই হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হল, নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনো ঋণ করতে হচ্ছে না৷ আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়৷

এদিকে বাণিজ্য ও চলতি হিসাবের ঘাটতির প্রভাবে অস্থির হয়ে উঠেছে ডলারের বাজার আর সস্তা হচ্ছে টাকা৷ গত অর্থবছরের শুরুতে থাকা ৮৪ দশমকি ৮১ টাকার ডলারের বর্তমান বিনিময় হয় ব্যাংকিং চ্যানেলেই ৯৩ দশমিক ৪৪ টাকা৷ আর খোলা বাজারে তা এখন ৯৮-১০০ টাকার ঘরে, সম্প্রতি যা ১০২ টাকাতেও উঠেছিল৷ ডলারের সংকট দেখা দেওয়ায় রেমিট্যান্স বাড়াতে প্রণোদনার পাশাপাশি নিয়ম শিথিল করছে বাংলাদেশ ব্যাংক৷

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom