পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সংকটের মূলে ৬ উদ্বেগজনক সূচক
পাকিস্তান গত কয়েক মাস ধরে অর্থনৈতিক পতনের সাথে লড়াই করে চলেছে
প্রথম নিউজ, ডেস্ক : পাকিস্তান গত কয়েক মাস ধরে অর্থনৈতিক পতনের সাথে লড়াই করে চলেছে। ১৯৭১ সালে ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধে হেরে এবং বাংলাদেশ থেকে বিভক্ত হবার পর থেকে সবচেয়ে খারাপ দুঃস্বপ্নের সাথে লড়াই করছে পাকিস্তান। অর্থনৈতিক অস্থিরতার ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের মধ্যে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে যেমন দুধের দাম প্রতি লিটারে ২৫০ টাকা, এবং মুরগির দাম দেশে প্রতি কেজি ৭৮০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ ঘোষণা করেছেন যে দেশ ইতিমধ্যেই "দেউলিয়া" হয়ে গেছে। পাকিস্তানের অর্থনৈতিক অবস্থার দিকে একবার নজর রাখা যাক -
১) বৈদেশিক ঋণ ৭০% বেড়েছে
ডন জানিয়েছে, ২০২২-২৩ সালের প্রথম দুই ত্রৈমাসিকে পাকিস্তানের বাহ্যিক ঋণ ৭০% বেড়েছে, যা ডলারের ঘাটতিকে আরও খারাপ করেছে। ২০২২-২৩ সালের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে ঋণ পরিসেবার পরিমাণ একই অর্থবছরের পূর্ববর্তী ত্রৈমাসিকে দেশটি যে পরিমাণ অর্থ প্রদান করেছিল তার প্রায় দ্বিগুণ (৩.৪৫ বিলিয়ন ডলার ) ছিল। ২০২২-২৩ সালের প্রথমার্ধে এই ধরনের উচ্চ স্তরের ঋণ পরিষেবা SBP-এর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে ব্যাপকভাবে হ্রাস করেছে, যা এই ধরনের অর্থপ্রদানের জন্য দায়ী। ডন অনুসারে, এসবিপির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রায় ৩.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের কাছাকাছি রয়েছে।
২) ফরেক্স রিজার্ভ ৩ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে
স্টেট ব্যাঙ্ক অফ পাকিস্তান বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে থাকা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১০ ফেব্রুয়ারি ২৭৬মিলিয়ন মার্কিন ডলার বেড়ে ৩.১৯৩ বিলিয়ন হয়েছে। দেশের মোট তরল বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৮.৭০২ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
৩) রাজস্ব ঘাটতি ৪৩%
পাকিস্তানের রাজস্ব সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বর ত্রৈমাসিকের জন্য, পাকিস্তানের রাজস্ব ঘাটতি ক্রমেই বেড়েছে। এতে আরও বিশদভাবে বলা হয়েছে যে, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে দেশের বাজেট ঘাটতি ছিল জিডিপির ১ শতাংশ, যা আগের অর্থবছরের একই প্রান্তিকে ০.৭ শতাংশ ছিল।
৪) সাপ্তাহিক মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে ৩৮%
ডন জানিয়েছে,সঙ্কট-বিধ্বস্ত পাকিস্তানে মুদ্রাস্ফীতি একটি নতুন উচ্চ রেকর্ড তৈরী করেছে কারণ এটি বিদায়ী সপ্তাহে ৩৮৪২ শতাংশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিজ্ঞাপন
মূলত পেঁয়াজ, মুরগির মাংস, রান্নার তেল এবং জ্বালানি খরচের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। পেট্রোলের দাম ২২.২০ বৃদ্ধির পরে এখন সেটি প্রতি লিটার ২৭২ তে পৌঁছেছে।
৫) IMF ঋণ বিলম্ব
গত সপ্তাহে আইএমএফের সাথে বিশদ আলোচনার পর কোনো চূড়ান্ত চুক্তিতে না পৌঁছানোর জেরে পাকিস্তান আতঙ্কে রয়েছে।যদিও অর্থমন্ত্রী ইসহাক দার এবং প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ সব পূর্ব শর্তে রাজি হয়েছেন। এখন পাকিস্তানও কর ও জ্বালানির দাম বাড়িয়েছে। আইএমএফ, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত পাকিস্তানের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করে আসছে। তারা অর্থনীতিতে কাঠামোগত সংস্কারের আহ্বান জানিয়ে আসছে। এদিকে দেশের জনগণ IMF-এর ঋণ বিলম্বের জেরে চূড়ান্তভাবে ভুগছে।
৬) পাকিস্তানি রুপি বনাম ডলার
ডলারের বিপরীতে পাকিস্তানি রুপির মান দেশটির আরেকটি ভয়াবহ সূচক। ক্রমবর্ধমান আমদানি অর্থপ্রদান, রপ্তানি ও রেমিট্যান্সের অধীন প্রবাহ হ্রাসের জেরে বিনিময় হার আন্তঃব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে ডলারের কাছে PKR ২৬২.৮৫-এ দাঁড়িয়েছে। এছাড়া রপ্তানি ও রেমিট্যান্সের প্রবাহ কমে যাওয়ার ফলেও রুপির অবমূল্যায়ন হয়েছে।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: