নির্বাচন কমিশন সংলাপের নামে নাটক করেছে : ড.মোশাররফ

তিনি বলেন, ‘সরকার গায়ের জোরে ক্ষমতায় আছে। জনগণের প্রতি তাদের কোনো জবাবদিহিতা নেই। তারা মেগা উন্নয়নের নামে মেগা লুট করে দেশের রিজার্ভ শূন্য করেছে। তারা বিদ্যুৎখাতের জন্য ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করেছে।

নির্বাচন কমিশন সংলাপের নামে নাটক করেছে : ড.মোশাররফ
বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন

প্রথম নিউজ, ঢাকা: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, ‘বর্তমান ফ্যাসিবাদ ও গায়ের জোরের সরকারের বংশবদ নির্বাচন কমিশন (ইসি) সংলাপের নামে নাটক করেছে। আমরাসহ আরো কয়েকটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল সংলাপে অংশ নেয়নি। সংলাপে অংশ নেয়া অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ইভিএম এর বিপরীতে মত দিয়েছে। আমরা তো চাইনা। সুতরাং এটা তো এখানেই মীমাংসিত হওয়া উচিৎ।’

খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘যে দেশের মানুষ নিজের হাতে ভোট দিতে পারেনা। তারা কিভাবে মেশিনে ভোট দেবে? এই ব্যবস্থা তো বিশ্বে বাতিল করা হয়েছে। কারণ এটা মানুষের তৈরি। সেখানে পেপার ট্রেইল নাই। সুতরাং এটা দূরভিসন্ধিমূলক। এটা ভোট ডাকাতির মেশিন।

আজ বুধবার দুপুরে এক গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ‘সরকার ইভিএম-এ নির্বাচন করতে চায় কেন?’ শীর্ষক এই গোলটেবিল আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ ইয়ূথ ফোরাম।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘ভোটকেন্দ্রে গোপন কক্ষে কারা থাকে তারা তো সরকারের লোক। তারাই তো ইভিএমের বাটনে চাপ দিচ্ছে। তাছাড়া সেটা বাইরে থেকেও নিয়ন্ত্রণ করা যায়। প্রিসাইডিং অফিসারকে ২৫ শতাংশ ভোট কাস্টিং করার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। ফলে তিনি তার ইচ্ছেমতো তার থেকেও বেশি ভোট কাস্টিং করেন। এটাকে তো ভোট বলেনা। সুতরাং এটা পরিষ্কার যে তারা আবারো নতুন পদ্ধতিতে ডাকাতি করে গায়ের জোরে ক্ষমতায় থাকতে পারে। কিন্তু এটা হতে দেয়া যায় না। কারণ যারা দিনের ভোট রাতেই ডাকাতি করতে পারে তারা কী না করতে পারে?’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে আর ভোট ডাকাতির সুযোগ দেয়া হবে না। লাখো শহীদের প্রাণ ও রক্তের বিনিময়ে আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন করেছি। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করেছি। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের সেই লক্ষ্য ও চেতনা আজ ভূলুণ্ঠিত। চেতনার ফেরিওয়ালা যারা তারা গণতন্ত্র হত্যা করেছে। তারা ৭২-৭৫ সালে গণতন্ত্র হত্যা করেছিল, এখনো করছে। সুতরাং তাদেরকে ক্ষমতায় রেখে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার কীভাবে সম্ভব?’

খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘সরকার গায়ের জোরে ক্ষমতায় আছে। জনগণের প্রতি তাদের কোনো জবাবদিহিতা নেই। তারা মেগা উন্নয়নের নামে মেগা লুট করে দেশের রিজার্ভ শূন্য করেছে। তারা বিদ্যুৎখাতের জন্য ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করেছে। কুইক রেন্টালের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হচ্ছে। কোনো বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেও ক্যাপাসিটি চার্জের নামে টাকা লুট করছে। তারা সবাই সরকারের ঘনিষ্ঠজন। আজকে দেশের তেল গ্যাস অনুসন্ধান না করে বিদেশ থেকে তেল গ্যাস ও বিদ্যুৎ আমদানি করছে। এভাবে দেশকে আমদানি নির্ভর করে দেশের রিজার্ভ শূন্য করেছে। এখন তারা রিজার্ভের হিসাব নিয়েও মিথ্যাচার করছে। আইএমএফের সঙ্গে তাদের হিসাব মিলছে না। সরকার এখন আমদানি ব্যয় মেটাতে পারছে না।’

বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির সদস্য আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন তিনি নাকি লোডশেডিং জাদুঘরে পাঠিয়েছেন। কিন্তু আজকে ছয় থেকে আট ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। এখন তিনি বিএনপিকে হারিকেন দেয়ার কথা বলছেন। আরে সেটা করতেও তো ৪-৫ কোটি হারিকেন কিনতে হবে। সেই টাকাও তো তাদের নেই। তিনি বলেন, ‘আজকে সামাজিক, রাজনৈতিক অর্থনৈতিক সব ক্ষেত্রে সংকট চলছে। শ্রীলংকার যে সংকট একই সংকট বাংলাদেশেও। এটা তো বেশিদিন লুকিয়ে রাখা যায় না। সময় আসছে বাংলাদেশে সেই অবস্থা দেখবেন।’

বিএনপির এই নীতি নির্ধারক বলেন, ‘এখন শুধু রাস্তায় মানুষের ঢল নামা বাকি। আমরা রাস্তায় সংকটের সমাধান করব ইনশাআল্লাহ। সেই ইতিহাস ও অভিজ্ঞতা আমাদের আছে। ইয়াহিয়া খানের মতো শাসক টিকতে পারেনি। সুতরাং কারফিউ বা অন্য কোনোভাবেই ক্ষমতা রক্ষা করতে পারবেন না। রাস্তায় নামলে তদের পতন হবেই হবে। শ্রীলংকায় দুই ভাই ১৮ বছর শাসন করেও শেষ রক্ষা হয়নি। অতএব রাস্তায় নামার বিকল্প নেই। মানুষ দুরবস্থার মধ্যে আছে, তারা একটা পরিবর্তন চায়। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাস্তায় নামতে হবে। আমরা সেই লক্ষ্যে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করছি। রূপরেখা জনগণের সামনে তুলে ধরা হবে। কীভাবে আন্দোলন হবে সেই বিষয়ে ঘোষণা আসবে।

আয়োজক সংগঠনের উপদেষ্টা সাঈদ আহমেদ আসলামের সভাপতিত্বে ও সভাপতি মুহাম্মদ সাইদুর রহমানের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও সংসদ সদস্য হারুন অর রশিদ, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, বিলকিস ইসলাম, আনোয়ার হোসেন বুলু, শেখ ওয়াহিদুজ্জামান দিপু, ইয়ূথ ফোরামের উপদেষ্টা মো. শুকুর মাহমুদ ববি, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন বিপ্লব, সহ-সভাপতি আজিজুল হাই সোহাগ প্রমুখ।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom