নাফ নদের তীরে ৪৫,০০০ রোহিঙ্গা

শুক্রবার জেনেভায় সাংবাদিকদের কাছে এই তথ্য দিয়েছেন জাতিসংঘের অধিকার বিষয়ক অফিসের মুখপাত্র এলিজাবেথ থ্রোসেল।

নাফ নদের তীরে ৪৫,০০০ রোহিঙ্গা

প্রথম নিউজ, অনলাইন ডেস্ক : রাখাইনে আবারো শিরশ্ছেদ ঘটছে। বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। এমন অবস্থার মধ্যে এবার কমপক্ষে ৪৫ হাজার রোহিঙ্গা বাড়িঘর ছেড়ে বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে নাফ নদের তীরে অবস্থান নিয়েছেন। তারা নিরাপত্তা চাইছেন। শুক্রবার জেনেভায় সাংবাদিকদের কাছে এই তথ্য দিয়েছেন জাতিসংঘের অধিকার বিষয়ক অফিসের মুখপাত্র এলিজাবেথ থ্রোসেল। তিনি বলেছেন, বুথিডাং এবং মংডু শহরের হাজার হাজার বেসামরিক মানুষ কয়েকদিনে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী এসব মানুষকে নিরাপত্তা দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। বাংলাদেশ ও অন্য দেশগুলোকে তাদের কার্যকর সুরক্ষা দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের অধিকার বিষয়ক প্রধান ভলকার তুর্ক। তিনি মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে অবস্থান নেয়ায় তাদের প্রতি আন্তর্জাতিক সংহতি নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা।

এতে বলা হয়, কথিত শিরশ্ছেদ, হত্যা ও সহায় সম্পত্তি পুড়িয়ে দেয়ার অভিযোগের ভেতর জাতিসংঘ সতর্ক করেছে। জানিয়েছে যুদ্ধকবলিত রাখাইন রাজ্যে সহিংসতা ক্রমশ বাড়ছে। গত নভেম্বরে যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভঙ্গ করে সেনাবাহিনীর ওপর হামলা চালায় রাখাইনের জাতিগত বিদ্রোহী আরাকান আমি। এরপরই দু’পক্ষে তীব্র সংঘর্ষ চলছে। সরকার অথবা বিদ্রোহীদের মধ্যে সংঘর্ষের মধ্যে পড়েছে মুসলিম সংখ্যালঘু গ্রুপটি। আরাকান আর্মির দাবি, তারা জাতিগত রাখাইন জনগোষ্ঠীর জন্য অধিকতর স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে যুদ্ধ করছে। এখনো রাখাইনে নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের প্রায় ৬ লাখ সদস্য আছেন। তারা সেখানেই থাকতে চান। ওদিকে সেনাবাহিনীর জাতিনিধনের অভিযানে ২০১৭ সালে কমপক্ষে ১০ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। এ ঘটনাকে গণহত্যা হিসেবে আখ্যায়িত করেছে জাতিসংঘ। আল জাজিরার সাংবাদিক তানভির চৌধুরী কক্সবাজার থেকে বলছেন, কমপক্ষে ১০ লাখ রোহিঙ্গা এখন বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। সরকার আর রোহিঙ্গাদের নিতে অনিচ্ছুক। 

জাতিসংঘের মিয়ানমার অধিকার বিষয়ক অফিসের প্রধান জেমস রোডেহ্যাভার রাখাইনের ভয়াবহতা বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, তার টিম যেসব সাক্ষ্য, স্যাটেলাইটের ছবি, অনলাইনের ভিডিও এবং ছবি পেয়েছে, তাতে বুথিডাং শহরের বেশির ভাগ পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা যেসব তথ্য পাচ্ছি তাতে ইঙ্গিত মিলছে যে, ১৭ই মে থেকে পুড়িয়ে দেয়া শুরু হয়েছে। আরাকান আর্মি সেখানে একটি গ্রামের দখল নিয়েছে। তিনি আরও বলেন, একজন জীবিত ব্যক্তি বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বুথিডাং থেকে পালানোর সময় কয়েক ডজন মৃতদেহ দেখেছেন। আরেকজন বলেছেন, কয়েক হাজার মানুষের সঙ্গে তারা পালিয়ে এসেছেন। কিন্তু তাদেরকে বাধা দিয়েছে আরাকান আর্মি। এটা ঘটেছে মংডু শহরের কাছে। অন্যরা বলেছেন, আরাকান আর্মির সদস্যরা তাদেরকে নির্যাতন করেছে। অর্থ কেড়ে নিয়েছে। রোডেহ্যাভার বলেন, অধিকার বিষয়ক গ্রুপ রোহিঙ্গাদের ওপর আরাকান আর্মি ও সেনাবাহিনী উভয়ের নতুন করে হামলার ঘটনা প্রামাণ্য আকারে ধারণ করেছে। এর মধ্যে আছে আকাশ থেকে হামলা। তিনি বলেন, তার টিম শিরশ্ছেদের কমপক্ষে চারটি ঘটনাকে প্রামাণ্য হিসেবে ধারণ করেছে। এর আগে রোহিঙ্গাদেরকে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগ পাওয়া গিয়েছিল। তারা এই যুদ্ধের মধ্যে পড়ে গেছে।