ধাক্কা দিয়ে মারধরের পর ছিনতাই
প্রথম নিউজ, ঢাকা : টাকা বহনকারী ব্যক্তিকে টার্গেট করে নিজ থেকে আচমকা ধাক্কা দিয়ে শুরু করে ঝগড়া। এরপর পাশেই ওত পেতে থাকা সঙ্গীরা এসে মারধর করে লুট করে নেওয়া হয় টাকা।
পুরান ঢাকায় অভিনব পন্থায় দীর্ঘদিন ধরে এই ছিনতাই চালিয়ে আসা চক্রের তিনজনকে গ্রেফতার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
গ্রেফতার ৩ জন হলেন, মূল পরিকল্পনাকারী খোকন দাস ওরফে বাইল্যা খোকন, মূল অপারেশনাল সংগঠক রেজাউল করিম এবং ভুক্তভোগীর গতিবিধি রেকি করা দলের কামাল হোসেন।
ডিবির লালবাগ বিভাগের কোতোয়ালি টিমের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম এবং খুলনায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
বুধবার (২৯ মে) ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ডিবি লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান।
তিনি জানান, গত ২৬ এপ্রিল একটি জুয়েলার্সের কর্মচারী মহিউদ্দিন ৭০ লাখ টাকা নিয়ে তাঁতী বাজারের উদ্দেশ্যে পায়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। বিকেল ৫টার দিকে ইসলামপুরের নবনারায়ণ লেনের প্রবেশ মুখে পৌঁছামাত্র একজন তাকে ধাক্কা দিয়ে উল্টো অভিযোগ করে ধাক্কা কেন দিলো। টাকা বহনকারী মহিউদ্দিন ক্ষমা চেয়ে চলে যেতে চাইলে আশেপাশে ওত পেতে থাকা ৭-৮ জন ধাক্কা দেওয়ার অভিযোগে তাকে কিল-ঘুসি মারতে থাকে। এক পর্যায়ে তার চোখে আঙুল দিয়ে গুল লাগিয়ে টাকা ভর্তি ব্যাগটি টেনেহিঁচড়ে ছিনতাই করে নিয়ে যায়।
২৭ এপ্রিল জুয়েলার্সের মালিক আকিদুল ইসলামের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে থানায় ডাকাতির মামলা দায়ের করা হয়। এরপর আশপাশের শত শত সিসি ক্যামেরা বিশ্লেষণ, ডিজিটাল এভিডেন্স সংগ্রহ করে থানা পুলিশের পাশাপাশি ডিবি ছায়া তদন্ত শুরু করে।
এক পর্যায়ে থানা পুলিশ এবং ডিবি পুলিশ তদন্তে এই ডাকাতি মামলার পরিকল্পনাকারী ও জড়িতদের নাম-পরিচয় শনাক্ত করে। তাদের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে গত ২৫ মে চট্টগ্রাম এবং খুলনায় ধারাবাহিকভাবে অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে নগদ সাড়ে নয় লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। এরই মধ্যে কোতোয়ালি থানা পুলিশ বাবু এবং শাহ আলম নামে দুইজনকে গ্রেফতার করে।
ডিসি মশিউর বলেন, পুরান ঢাকায় বিভিন্ন পাইকারি এবং খুচরা ব্যবসায়ীরা খুব স্বাভাবিকভাবেই প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার লেনদেন করেন। মোটা অংকের টাকা পরিবহনের ক্ষেত্রে স্থানীয় পুলিশের সহযোগিতা নেওয়ার নির্দেশনা থাকলেও কাছাকাছি জায়গায় টাকা স্থানান্তর করা হয় বলে তারা পুলিশকে অবগত করেন না।
তিনি আরও বলেন, পুরান ঢাকার এই এলাকাগুলোতে প্রতিদিন শত কোটি টাকার বৈধ লেনদেনের পাশাপাশি অনেকেই হুন্ডির টাকা লেনদেন করে থাকেন। ডাকাত-ছিনতাইকারীরা এই হুন্ডির ব্যবসায়ীদের সাধারণত টার্গেট করে। কারণ হুন্ডির টাকা লেনদেন করা আইন স্বীকৃত না। সে কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা অধিকাংশ সময় বিষয়টি পুলিশকে অবগত করে না। কিন্তু ডাকাতদের এই অপতৎপরতায় কখনো কখনো বৈধ ব্যবসায়ীরাও ক্ষতির সম্মুখীন হন।
ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, এই ডাকাতির মূল মাস্টারমাইন্ড বাইল্যা খোকন। তিনি কোন ব্যবসায়ী কীভাবে টাকা লেনদেন করে এ সম্পর্কে ভালোভাবেই জানেন। অপারেশনাল কমান্ডার রেজাউল করিম একসময় পুরান ঢাকাতেই ব্যবসা করতেন। তারা টার্গেটকৃত ব্যক্তিকে কিল ঘুসিতে রক্তাক্ত করে চোখে গুল লাগিয়ে ডাকাতি করে আসছিল।
ডাকাতির কাজে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করার জন্য তারা কম দামের বাটন ফোনে নিবন্ধনহীন সিম লাগিয়ে যোগাযোগ করে। ঘটনার পরে মোবাইল এবং সিম ভেঙে নদীতে ফেলে দিয়ে বিভিন্ন জেলায় পালিয়ে যায়।