দেড় মাস ধরে নোয়াখালীতে শিশুদের টিকা সংকট
প্রথম নিউজ, নোয়াখালী : তিন মাস বয়সী সন্তান বিবি জুলেখাকে কোলে নিয়ে নোয়াখালী সদর উপজেলার নেওয়াজপুর ইউনিয়নের দেবীপুর গ্রাম থেকে বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) দুপুরে নোয়াখালী সিভিল সার্জন কার্যালয় সংলগ্ন ইপিআই টিকাদান কেন্দ্রে এসেছেন মা বিবি লাখি আক্তার। টিকাদান কেন্দ্রে এসে জানতে পারলেন নবজাতকের জন্মের পর প্রথম যে চারটি টিকা দিতে হয় তার মধ্যে তিনটির সরবরাহ নেই।
বিষয়টি জানতে পেরে কোলের সন্তান নিয়ে এদিক সেদিক খোঁজ নিতে থাকেন। শেষমেশ বাধ্য হয়ে সরবরাহে থাকা একটি টিকা দিয়েই বাড়ি ফিরেছেন। বাকি টিকা কবে নাগাদ পাবেন সে বিষয়েও সঠিক তথ্য জানাতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।
একই অবস্থা কাদিরহানিফ ইউনিয়নের কৃষ্ণরামপুর গ্রাম থেকে আড়াই মাস বয়সী শিশু ইমতিয়াজ হোসেনের মা মোসাম্মত সাজেদার। তিনি শিশু ইমতিয়াজের জন্মের ৪৫ দিনের মাথা সিভিল সার্জন কার্যালয় সংলগ্ন ইপিআই কেন্দ্রে এসে শুধু বিসিজি টিকা দিতে পেরেছেন। পেন্টা, পিসিভি ও আইপিভি টিকা না থাকায় সেগুলো না দিয়েই বাড়ি ফিরে যেতে হয়েছে এই মাকে। এরপর তিন দিন এলেও সেগুলো দিতে পারেননি।
জানা গেছে, গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে নোয়াখালীর টিকাকেন্দ্রগুলোয় শিশুদের জন্মের পর ধাপে ধাপে দেওয়া টিকা দান কার্যক্রমের (ইপিআই) প্রথম দফায় হাত ও পায়ে যে চারটি টিকা দেওয়া হয়, এর তিনটিরই সরবরাহ নেই। ফলে প্রতিদিনই অভিভাবকরা তাদের শিশুদের নিয়ে টিকা কেন্দ্রে এসে পুনরায় ফিরে যাচ্ছেন।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, শিশুর বয়স ছয় সপ্তাহ হলে আইপিভি টিকার প্রথম ডোজ ও ১৪ সপ্তাহ বয়সে দ্বিতীয় ডোজ দিতে হয়। একই সময়ে পেন্টাভ্যালেন্ট (ডিপিটি, হেপাটাইটিস-বি, হিব), ওপিভি ও পিসিভি টিকার প্রথম ডোজ দিতে হয়।
এরপর কমপক্ষে চার সপ্তাহ বা ২৮ দিনের ব্যবধানে এসব টিকার দ্বিতীয় ও তৃতীয় ডোজ দিতে হয়। শিশুর ২৭০ দিন পূর্ণ হলেই শিশুকে প্রথম ডোজ ও ১৫ মাস বয়স পূর্ণ হলেই দ্বিতীয় ডোজ এমআর (হাম ও রুবেলা) টিকা দিতে হয়। কিন্তু নোয়াখালীতে গত দেড়মাস ধরে বিসিজি টিকার মজুত থাকলেও পেন্টা, পিসিভি ও আইপিভির মজুত নেই।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নোয়াখালীর ৯ উপজেলা ও দুই পৌরসভার দুই হাজার ২৩৫টি কেন্দ্রে প্রতিবছর ২৭ হাজার ৭৯৪ সেশনে বিনামূল্যে টিকাদান করা হয়। প্রতিবছর জেলার টার্গেট এক লাখ ১২ হাজার ৭৫২ জন নবজাতককে টিকা দেয়। প্রতি তিন মাস পরপর ঢাকা থেকে এসব নবজাতকের জন্য প্রয়োজনীয় টিকা এনে মজুত করা হয় এবং উপজেলা পর্যায়ে সরবরাহ করা হয়।
নোয়াখালীতে সবশেষ চলতি বছরের ২৭ জুলাই ৩৩ হাজার ৬০০ ভায়াল পেন্টা, আট হাজার ভায়াল পিসিভি ও ৬৬০ ভায়াল আইপিভি টিকা সরবরাহ করা হয়। যা আগস্টের মাঝামাঝিতে শেষ হয়ে যায়। এরপর থেকে আর কোনও টিকা না পাওয়ায় বাধ্য হয়েই ফিরতে হচ্ছে অভিভাবকদের।
টিকার সরবরাহ না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে নোয়াখালী জেলা ইপিআই সুপারিন্টেন্ডেন্ট অজিত রঞ্জন পাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এটা আসলে ঢাকাতেই সরবরাহ নেই। সারা দেশের একই অবস্থা। বিভিন্ন দাতা সংস্থা থেকে আমাদের দেশে টিকাগুলো দিয়ে থাকে। হয়তো তারা সময়মতো দেননি। তবে শুনেছি, ঢাকায় পর্যাপ্ত টিকা এসেছে। আশা করছি, আগামী সপ্তাহে নোয়াখালীর জন্য চাহিদামতো টিকা পাবো।
নোয়াখালী জেলা সিভিল সার্জন ডা. মাসুম ইফতেখার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, টিকা না থাকার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আশা করছি, আগামী সপ্তাহে টিকা সরবরাহ করতে পারবো।