দলে দলে থাইল্যান্ডে আসছেন রাশিয়ানরা
নাৎসিমুক্ত ও নিরস্ত্রীকরণের দোহাই দিয়ে ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি নিজ সেনাদের ইউক্রেনে হামলা চালানোর নির্দেশ দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন
প্রথম নিউজ, ডেস্ক : নাৎসিমুক্ত ও নিরস্ত্রীকরণের দোহাই দিয়ে ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি নিজ সেনাদের ইউক্রেনে হামলা চালানোর নির্দেশ দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
রুশ সেনারা ইউক্রেনে হামলা চালানোর পরই অনেক রাশিয়ান পূর্ব এশিয়ার দেশ থাইল্যান্ডে আসেন। এরপর প্রেসিডেন্ট পুতিন যখন গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে সেনা সমাবেশের ঘোষণা দেন, তখন আরও অনেকে রাশিয়া ছেড়ে থাইল্যান্ডে চলে আসেন। যুদ্ধ করতে যেন ইউক্রেনে না যেতে হয় তাই তারা নিজ দেশ থেকে পালিয়ে যান।
যেসব রাশিয়ান থাইল্যান্ডে আশ্রয় নিয়েছেন তারা এখন মূলত দেশটিতে দীর্ঘ সময় থাকার পরিকল্পনা করছেন। অনেকে সেখানে বাড়ি কিনে নিজেদের সেকেন্ড হোম বানাচ্ছেন বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
রিসোর্টসমৃদ্ধ দ্বীপ ফুকেটে অনেক রাশিয়ান ৫ লাখ ডলার ব্যয় করে খালি জায়গা কিনছেন। মূলত সেখানেই নিজেদের দ্বিতীয় বাড়ি তৈরি অথবা ভবিষ্যতে কখনো প্রয়োজন হলে যেন আশ্রয় নিতে পারেন সেই পরিকল্পনা করছেন ।
ফুকেট বিমানবন্দরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের ১ নভেম্বর থেকে ২০২৩ সালের ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত ২ লাখ ৩৩ হাজার রাশিয়ান ফুকেটে এসেছেন। যা অন্য যে কোনো দেশের নাগরিকদের তুলনায় অনেক বেশি।
রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা করার আগেই অবশ্য অনেক রাশিয়ান ফুকেটে আসতেন। তারা সেখানে শীতকালীন সময়টায় অবকাশ যাপন করতেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়ানরা সেখানে প্রপার্টি কিনছেন। যাতে ধারণা করা হচ্ছে, অবকাশ যাপনের চেয়েও বেশি সময় থাকার পরিকল্পনা করছেন অনেকে।
ফুকেটের আবাসন ব্যবসায়ী সোফিয়া মালাগেভারেল আল জাজিরাকে জানিয়েছেন, তাদের কাছ থেকে ধনী রাশিয়ানরা এখন প্রপার্টি কিনছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমার কাছে যেসব ক্লায়েন্ট আছে তাদের বেশিরভাগেরই বয়স ৩০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে…তারা ধনী, উচ্চ বাজেট সমৃদ্ধ ক্লায়েন্ট। অনেকে ফুকেটে তিন থেকে ছয় মাস বা এক বছর পর্যন্ত থাকার পরিকল্পনা করছেন।’
থাই রিয়েল এস্টেটের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে ফুকেট যেসব বিদেশি প্রপার্টি কিনেছেন তাদের ৪০ শতাংশই রাশিয়ার। এ দিক দিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে আছেন চীনের নাগরিকরা।
ফুকেটের একজন রাশিয়ান ট্রাভেল এজেন্ট নাম গোপন রাখার শর্তে বলেছেন, অনেক রাশিয়ান যুদ্ধে যাওয়া থেকে বাঁচতে থাইল্যান্ডে টুরিস্ট ভিসা ও ওয়ানওয়ে টিকেট নিয়ে এসেছেন। তারা এখন আপাতত নিজ দেশে ফিরছেন না।
ফুকেট ছাড়াও থাইল্যান্ডের দ্বিতীয় বৃহৎ দ্বীপ কোহ সামুই, উপকূলীয় শহর পাতায়াতেও রাশিয়ানদের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে।
থাইল্যান্ডে গত বছরের নভেম্বর একটি খবর ফাঁস হয়। তখন জানা যায়, চীনের অপরাধ চক্রের মাফিয়ারা ভুয়া তথ্য দিয়ে অনেককে থাইল্যান্ডে নিয়ে আসছে। এ তথ্য জানাজানির পর থাইল্যান্ডে দীর্ঘ সময় অবস্থান করার ভিসা প্রক্রিয়া কঠিন করে দেওয়া হয়। এ কারণে এখন রাশিয়ানরাও থাইল্যান্ডে দীর্ঘ সময়ের ভিসা পাচ্ছে না। আর তাই তারা প্রপার্টি কিনে ‘এলিট কার্ডের’ অধীনে ভিসার আবেদন করছেন।
এদিকে ফুকেটে রাশিয়ানরা আসায় যেমন সেখানকার পর্যটনখাত সমৃদ্ধ হয়েছে আবার এর বিপরীতও হয়েছে। কারণ এখন অনেক রাশিয়ান পর্যটনখাতের সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়ছে। অভিযোগ ওঠেছে, যেসব নতুন রাশিয়ান থাইল্যান্ডে আসছেন তাদের ট্যাক্সিসহ অন্যান্য সুবিধা দিচ্ছেন রাশিয়ানরাই। যাতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন স্থানীয়রা। এ নিয়ে সেখানে তাদের মধ্যে কিছুটা ক্ষোভও সৃষ্টি হয়েছে।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: