তদবির ছাড়া ৩ হাজার কনস্টেবল নিয়োগের দৃষ্টান্ত

শুধুমাত্র মেধা এবং শারীরিক সক্ষমতার ভিত্তিতে কনস্টেবল পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে বাংলাদেশ পুলিশ

তদবির ছাড়া ৩ হাজার কনস্টেবল নিয়োগের দৃষ্টান্ত

প্রথম নিউজ, ডেস্ক : ‘চাকরি নয় সেবা’ এ প্রতিপাদ্য নিয়ে কোনো রকম ঘুষ ও তদবির ছাড়া শুধুমাত্র মেধা এবং শারীরিক সক্ষমতার ভিত্তিতে কনস্টেবল পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। প্রথমবারের মতো নতুন নিয়োগবিধি অনুযায়ী ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল নিয়োগ প্রক্রিয়ায় চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয়েছেন ৩ হাজার কনস্টেবল। এবারের কনস্টেবল নিয়োগে মেধা ও শারীরিক দিক থেকে অধিক যোগ্য প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। কোনো রকম তদবির ও ঘুষ ছাড়া নিয়োগ প্রক্রিয়াটি শেষে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো পুলিশ।  
পুলিশ সদর দপ্তর জানিয়েছে, এ বছরের কনস্টেবল নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয় গত ২৫শে অক্টোবর। তিন হাজার শূন্য পদের বিপরীতে আবেদনকারীর সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৩৮ হাজার ৫৩৪ জন। প্রাথমিক বাছাইয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন ১ লাখ ১৭ হাজার ৬৮ জন। এরমধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৬৩৪ জন এবং নারী ১৬ হাজার ৪৩৪ জন।
শারীরিক সক্ষমতা যাচাই শেষে ২৩ হাজার ৬৯৭ প্রার্থী লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। যার মধ্যে ২১ হাজার ৭৫৯ জন পুরুষ এবং ১ হাজার ৯৩৮ জন মহিলা। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ৭ হাজার ৪০০ জন প্রার্থীর মধ্যে কনস্টেবল পদে চূড়ান্ত নিয়োগ পেয়েছেন ৩ হাজার।
সদর দপ্তর জানায়, সংশোধিত নিয়োগবিধি অনুযায়ী কনস্টেবল নিয়োগের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য ছিল, মেধা ও শারীরিক সক্ষমতার দিক থেকে অধিকতর যোগ্য প্রার্থী নিয়োগ করা। দেশের ৬৪ জেলায় কনস্টেবল নিয়োগ এক অভূতপূর্ব সাড়া ফেলেছে। কোনো ধরনের তদবির কিংবা অর্থের লেনদেন ছাড়াই নিরপেক্ষভাবে সম্পূর্ণ স্বচ্ছতার ভিত্তিতে এ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। দিনমজুর, কৃষক, ভ্যানচালকের সন্তানরাই বেশির ভাগ চাকরি পেয়েছেন। মাত্র ১৩৩ টাকা ফি দিয়ে পুলিশে চাকরি হবে এটি সাধারণ পরিবারের তরুণ-তরুণী এবং তাদের পিতা-মাতার জন্য ছিল স্বপ্নের মতো। চাকরি পেয়ে অনেকের চোখ ভিজে আনন্দ অশ্রুতে।  সন্তানের চাকরি পাওয়ার খুশিতে আবেগ ধরে রাখতে পারেননি তাদের পিতা-মাতাও। দেশের ৬৪ জেলার প্রায় প্রতিটিতেই এমন আবেগঘন দৃশ্য চোখে পড়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, পিআরবি পরিবর্তনের মাধ্যমে মেধা ও শারীরিক যোগ্যতার ভিত্তিতে কনস্টেবল পদে ৭ ধাপে নিয়োগ প্রক্রিয়ার ১ম ধাপে প্রাথমিক বাছাই, দ্বিতীয় ধাপে শারীরিক মাপ এবং ফিজিক্যাল অ্যানডুরেন্স টেস্ট, তৃতীয় ধাপে লিখিত পরীক্ষা, চতুর্থ ধাপে মনস্তাত্ত্বিক ও মৌখিক পরীক্ষা, পঞ্চম ধাপে প্রাথমিক নির্বাচন, ৬ষ্ঠ ধাপে পুলিশ ভেরিফিকেশন ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং সপ্তম ও সর্বশেষ ধাপ হলো চূড়ান্তভাবে প্রশিক্ষণে অন্তর্ভুক্তকরণ। প্রার্থীদের শারীরিক সক্ষমতা ৭টি ইভেন্টের মধ্য দিয়ে যাচাই করা হয়েছে। দৌড়, পুশ আপ, লং জাম্প, হাইজাম্প, ড্র্যাগিং এবং রোপ ক্লাইম্বিং।
আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ নতুন নিয়মে কনস্টেবল নিয়োগের লক্ষ্যে প্রথমেই পিআরবি সংশোধনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। পিআরবি সংশোধন শেষে সফলতার সঙ্গে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা এবং প্রার্থীদের নিয়োগ প্রক্রিয়ার সঙ্গে অভ্যস্ত করার লক্ষ্যে খাগড়াছড়িতে এপিবিএন’র বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে দীর্ঘদিন ধরে পরীক্ষার প্রতিটি ধাপ সম্পর্কে বাস্তবভিত্তিক ভিডিও ধারণ করা হয়। এ ভিডিও পুলিশের ফেসবুক পেজসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচার করা হয়। গবেষণার ভিত্তিতে টাঙ্গাইল জেলা থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পিটিসি টাঙ্গাইলে ‘মক’ নিয়োগ পরীক্ষারও আয়োজন করা হয়।
প্রার্থীদের নতুন নিয়মে নিয়োগ পরীক্ষায় অভ্যস্ত করতে শারীরিক সক্ষমতা যাচাইয়ের জন্য সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি, এপিবিএনসহ অন্যান্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের দিয়ে শারীরিক সক্ষমতা যাচাইয়ের ইভেন্টসমূহের অনুশীলন ইভেন্ট পরিচালনা করে শারীরিক সক্ষমতা যাচাই পরীক্ষার প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়। মাঠ পর্যায়ে কনস্টেবল নিয়োগ পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য নিয়োগ সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাগণের জন্য একাধিক ট্রেনিং অব ট্রেইনার্স (টিওটি) কোর্সের আয়োজন করা হয়েছে।
অনলাইনে আবেদন গ্রহণ এবং ওয়েব বেইজড  স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে কনস্টেবল নিয়োগ পরীক্ষা ডিজিটালাইজেশন করা হয়েছে। কনস্টেবল নিয়োগকে কেন্দ্র করে কেউ যাতে অসাধু পন্থা অবলম্বন করতে না পারে সেজন্য পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়া চলাকালীন পুলিশ অত্যন্ত তৎপর ও সচেষ্ট ছিল। কয়েকটি জেলায় কনস্টেবল নিয়োগে প্রতারণার অভিযোগে প্রতারকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য দিকনির্দেশনা ও সার্বিক তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ পুলিশকে উন্নত দেশের উপযোগী পুলিশ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করেছি। এবারের কনস্টেবল নিয়োগ সে প্রক্রিয়ারই অংশ। এজন্য বর্তমান নিয়োগবিধি সংশোধন করা হয়েছে। নিয়োগবিধি সংশোধনে সার্বিক সহায়তা প্রদানের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ। তিনি বলেন, আমরা পুলিশকেও উন্নত দেশের উপযোগী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে মেধা ও শারীরিকভাবে অধিক যোগ্য প্রার্থীদের কনস্টেবল পদে নিয়োগ করেছি। তিনি আরও বলেন, ভবিষ্যতে পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর এবং সার্জেন্ট পদে নিয়োগের ক্ষেত্রেও মেধা ও শারীরিক যোগ্যতা সম্পন্ন প্রার্থীরাই নিয়োগ পাবেন।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom

 

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow

This site uses cookies. By continuing to browse the site you are agreeing to our use of cookies & privacy Policy from www.prothom.news