‘ডিসেম্বরে নয়, আগেই ভোট দিন’ সরাসরি বার্তা বামদের

‘ডিসেম্বরে নয়, আগেই ভোট দিন’ সরাসরি বার্তা বামদের

প্রথম নিউজ, অনলাইন: সংস্কারের নামে জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিলম্ব করার সঠিক হবে না। এতে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীরা সুযোগ নিবে। সংস্কার ও নির্বাচনকে প্রতিপক্ষ ভাবার সুযোগ নেই। এজন্য প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো দ্রুত শেষ করে নির্বাচনের আয়োজন করা দরকার। যা ২০২৫ সালের ডিসেম্বর বা তার আগেই করা সম্ভব বলে মনে করেন বিভিন্ন বাম দলের নেতারা। গতকাল রবিবার বিকেলে রাজধানীর বনানীতে অবস্থিত হোটেল সারিনাতে বিএনপির সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক এক বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন বাম দলের নেতারা। বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বণলন।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি শাহ আলম বলেন, ১৫ বছরের ক্ষোভ ৫ আগস্টে মানুষ প্রকাশ করেছে। সেখানে মানুষের মূল আকাঙ্ক্ষা ছিল ভোট দিতে পারে নাই। ১৪, ১৮ এবং ২৪ সালে। মানুষ চায় গণতন্ত্র এবং ভোটাধিকার। এখন যারা সংস্কারের নামে নির্বাচন দেরি করিয়ে গণপরিষদ নির্বাচন বা অন্য যেগুলো আনছে, তারা এন্টি ডেমোক্রেটিক ফোর্স। হাসিনাও এন্টি ডেমোক্রেটিক ফোর্স, এরাও সেই জায়গাটাতে গিয়ে দেশটাকে অন্যদিকে নিয়ে যেতে চাচ্ছে। এটা দেশের জন্য মঙ্গল হবে না। এবং দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য মঙ্গল হবে না। এটা চলতে থাকলে যারা দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা সুযোগ নিবে।
সিপিবি'র সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, রাজনীতিতে আমরা একটা নতুন সংস্কৃতি গড়ে তুলতে চাই। রাজনীতিবিদদের মধ্যে দেখা সাক্ষাৎ হওয়া, অনেকদিন ধরেই বন্ধ ছিল। সেটা ভেঙে ফেলা দরকার। একইসঙ্গে গণতান্ত্রিক ধারায় কিভাবে দেশকে এগিয়ে নেওয়া যায় সেই কাজটি করা দরকার। 
তিনি বলেন, আমরা জোটগতভাবে অনেক আগে থেকেই বলে এসেছি, বাংলাদেশে জরুরিভাবে একটি নির্বাচিত সরকার দরকার। কারণ অনির্বাচিত সরকারের ক্ষমতা দীর্ঘায়িত হলে, সংকট আরো ঘনীভূত হবে। আমরা অনেকদিন ধরেই বলে আসছি ডিসেম্বর কেন? ডিসেম্বরের অনেক আগেই সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য অবাধ নির্বাচনের জন্য যা যা সংস্কার করা দরকার সেটা করে নির্বাচন করা সম্ভব। আমাদের দলগুলো এবং বামপন্থীরা এটা অনেকদিন ধরেই বলে আসছে। বিএনপি সাধারণভাবে বলেছে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন। বরঞ্চ আমরা মনে করি, ডিসেম্বরের আগেই বাংলাদেশের নির্বাচন হওয়া সম্ভব। সেটা করার জন্য জরুরিভাবে আগানো দরকার। আমাদের গণতান্ত্রিক ধারায় এগিয়ে যাওয়াটা দরকার বলে মনে করি। 
কমিউনিস্ট পার্টি উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, যারা নির্বাচনের পরে সংস্কার করতে চায়, তারাই হচ্ছে আসল সংস্কারের পক্ষে। আর যারা নির্বাচন না করে সংস্কার করতে চায়, একটা অধ্যাদেশ জারি করার মাধ্যমে, সেটা বালুতে গাথুনির মত। শক্ত ভিত্তির উপর সংস্কার করতে হলে জনগণের অংশগ্রহণ লাগবে। জনগণের সম্মতি নিতে হবে। সেটা করতে হলে একটি নির্বাচন অপরিহার্য। তবে যে কোন নির্বাচনের নামে প্রহসন আমরা গ্রহণ করবোনা। প্রকৃত অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যতটুকু সংস্কার দরকার, অবশ্যই নির্বাচনের আগেই করতে হবে। নির্বাচন করার মাধ্যমে সংস্কারের ভিত্তিকে শক্ত করে অগ্রসর হওয়াই সঠিক পথ। যারা সংস্কারের নামে এটাকে অস্বীকার করছে, তাদের অন্য কোন উদ্দেশ্য থাকতে পারে।
বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ বলেন, 'আজকে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, এবং বাংলাদেশ দলের সমাজতান্ত্রিক দলের নেতৃবৃন্দের সাথে বিএনপির নেতৃবৃন্দের একটি অনানুষ্ঠানিক সভা হয়েছে। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি তারা কিভাবে দেখছে আমরা কিভাবে দেখছি সেটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। 
তিনি বলেন, আমরা বাম গণতান্ত্রিক জোটের পক্ষ থেকে আমাদের দল বাসদ, সিপিবিসহ; সংস্কার আমরাও চাই। আমাদের চাইতে সংস্কার কারা চায়? আমরা এই ব্যবস্থাকে পরিবর্তন করতে চাই। আমরা সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই। এখনকার যে নিয়ম আছে সেটা ভাঙতে চাই। কিন্তু সংস্কার এবং নির্বাচনকে প্রতিপক্ষ ভাবার কোনো কারণ নাই। উন্নয়ন আর গণতন্ত্র ফ্যাসিস্ট হাসিনা বানিয়েছিল‌ । এখন সংস্কার এবং নির্বাচনকে একে অপরের প্রতিপক্ষ যেনো না বানানো হয়। নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমেই সংস্কারের কার্যক্রমগুলো কার্যকর করা করতে হবে। অধ্যাদেশ জারি করেও যদি সংস্কার করা হয়, সেটা নির্বাচিত পার্লামেন্টে অনুমোদিত করতে হবে। তা না হলে সেটার কোনো কার্যকারিতা থাকবে না।
বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপি লিয়াঁজো কমিটির নেতৃত্বে বিএনপি স্থায়ী কমিটি সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস-চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু। তবে তারা সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলেলনি।