টিসিবির পণ্য না পেয়ে খালি হাতে ফিরেছেন অনেকেই
মঙ্গলবার কাওরান বাজারে টিসিবি চত্বরে বিক্রি কার্যক্রম উদ্বোধন করেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ।
প্রথম নিউজ, অনলাইন: পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে ভোক্তার কথা চিন্তা করে ফ্যামেলি কার্ড ছাড়াও রাজধানীর ৩০টি স্থানে ট্রাক সেলে ভর্তুকি মূল্যে চার পণ্য বিক্রি শুরু করেছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। পণ্যগুলো হলো আলু, পেঁয়াজ, মসুর ডাল ও সয়াবিন তেল বা রাইসব্রান অয়েল। তবে অধিকাংশ স্থানে আলু ও পেঁয়াজ বিক্রি হয়নি। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ক্রেতাদের শুধু তেল ও ডাল কিনতে হয়েছে। পাশাপাশি পণ্যের তুলনায় মানুষ বেশি থাকায় অনেকেই পণ্য না পেয়ে খালি হাতে বাড়ি ফিরেছেন।
মঙ্গলবার কাওরান বাজারে টিসিবি চত্বরে বিক্রি কার্যক্রম উদ্বোধন করেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান, টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আরিফুল হাসান প্রমুখ। টিসিবি সূত্র জানায়, একজন ক্রেতা দুই কেজি মসুর ডাল, দুই লিটার সয়াবিন তেল, দুই কেজি আলু ও দুই কেজি পেঁয়াজ কিনতে পারছেন। সেক্ষেত্রে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৫০, আলু ৩০ এবং মসুর ডাল ৭০ টাকায়। প্রতি লিটার সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়।
টিসিবি কার্ডের আওতাভুক্ত নয়, এমন স্বল্প-আয়ের পরিবারের মানুষের জন্য এবার ভর্তুকি মূল্যে এই বিক্রির কার্যক্রম শুরু করেছে সরকার। সকাল থেকে টিসিবি চত্বরের পাশে কম দামে পণ্য কিনতে ভিড় করেন সাধারণ মানুষ। তবে পণ্যের তুলনায় মানুষ বেশি হওয়ায় লম্বা সারিতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করার পরও অনেককেই খালি হাতে বাড়ি ফিরতে দেখা গেছে। অলিউল্লা জানান, অনেকে পণ্য পায়নি। আমিও পাইনি। কারণ, লাইনে মানুষ অনেক আর পণ্য অনেক কম। তাই দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য না পেয়ে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, ঢাকায় অনেক মানুষ আছে, যাদের আমরা কার্ডের আওতায় আনতে পারিনি। অনেক ভাসমান মানুষ আছে, যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই। মূলত তাদের জন্যই এ কার্যক্রম। ঢাকার ৩০টি পয়েন্টে এ কার্যক্রম চলবে। প্রতিটি পয়েন্ট থেকে ৩০০ জন পণ্য ক্রয় করতে পারবেন। তিনি আরও বলেন, বিশ্বব্যাপী কৃষিপণ্যের দাম এখন বেশি। ডিসেম্বরে ফসল উঠবে, তখন সংকট কেটে যাবে। আবহমানকাল থেকে এ সময় একটু সংকট থাকে। তিনি জানান, আলু ও ডিম আমদানি করা হচ্ছে। প্রয়োজনে অন্য পণ্যও আমদানি করা হবে।
এদিকে ট্রাকসেল কার্যক্রমে তেল, ডাল, আলু ও পেঁয়াজ বিক্রির কথা থাকলেও অনেক স্পটে শুধু ডাল ও তেল বিক্রি হয়েছে। রামপুরা বাজারে টিসিবির পণ্য বিক্রি করছে রূম্পা ট্রেডার্স। ডিলার আশোক কুমার জানান, ৩০০ মানুষের জন্য তেল ও ডাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পেঁয়াজ, আলু দেওয়া হয়নি।
সেখানে পণ্য কিনতে আসা মো. সালেকিন বলেন, শুনেছিলাম টিসিবি চারটি পণ্য বিক্রি করবে। কিন্তু এসে দেখি তেল ও ডাল বিক্রি হচ্ছে। যেহেতু অনেকক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম, তাই দুটি পণ্য কিনেই বাড়ি ফিরতে হচ্ছে। তিনি জানান, এখানে অল্পকিছু মানুষকে পণ্য দেওয়া হচ্ছে। বিক্রির জন্য পণ্যের বরাদ্দ আরও বাড়ালে ভালো হতো। সবাই কষ্ট করে লাইনে দাঁড়িয়েও পণ্য কিনতে পাড়ত। কারণ, বাজারে পণ্যের দাম অনেক।
রাজধানীতে ট্রাকসেলে পণ্য বিক্রির স্থানগুলো হলো খিলগাঁও রেলগেট, মুগদা মেডিকেল কলেজসংলগ্ন রাস্তা, মালিবাগ রেলগেট, শনির আখড়া বাসস্ট্যান্ড, আজমপুর কাঁচাবাজার (উত্তরা), মতিঝিল বক চত্বর, ফকিরাপুল বাজার, আবদুল্লাহপুর মোড়, বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ (ধানমন্ডি), আজিমপুর ছাপরা মসজিদ, ভিক্টোরিয়া পার্ক, সচিবালয়ের ৩ নম্বর গেটের সামনে, সূত্রাপুর থানার পাশে, কাওরান বাজার টিসিবি ভবনের সামনে, মহাখালী কাঁচাবাজার, কচুক্ষেত বাজার (ক্যান্টনমেন্ট), গাবতলী বাসস্ট্যান্ড, কুড়িল বিশ্বরোড, মিরপুর ১ নম্বর শাহ আলী মাজার, মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বর, মিরপুর ইসিবি চত্বর, কলেজগেট (হৃদরোগ হাসপাতাল), মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড, ধানমন্ডি, জিগাতলা, ফার্মগেট আনন্দ সিনেমা হল, রামপুরা বাজার, শাহজাদপুর বাজার, মিরপুর কালশীর মোড়, বেগুনবাড়ী (দিপীকার মোড়) ও শাহিনবাগ কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ।