টাকা ধার দিয়ে জীবন দিতে হলো ইকরামের
টাকা চাওয়ায় ও শান্ত নেশাগ্রস্ত এ তথ্য পরিবারকে জানানোয় ক্ষিপ্ত হন শান্ত। তিনি আরেক নেশাগ্রস্ত বন্ধু আবু সিদ্দিককে সঙ্গে নিয়ে ইকরামকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।
প্রথম নিউজ, অনলাইন: ইট-বালুর ব্যবসায় লগ্নি করতে বন্ধু শান্তকে দুই লাখ টাকা দিয়েছিল ইকরাম হোসেন মোল্লা (২২)। বিনিময়ে প্রতি মাসে তাকে হাত খরচার টাকা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ছয় মাস আগে টাকা লগ্নি করেও কোনো হাত খরচা পায়নি ইকরাম। উল্টো নেশাগ্রস্ত হয়ে ব্যবসা লাটে উঠার দশা শান্তর। অন্যদিকে, টাকা চাওয়ায় ও শান্ত নেশাগ্রস্ত এ তথ্য পরিবারকে জানানোয় ক্ষিপ্ত হন শান্ত। তিনি আরেক নেশাগ্রস্ত বন্ধু আবু সিদ্দিককে সঙ্গে নিয়ে ইকরামকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।
গত বৃহস্পতিবার (৪ মে) রাতে ইকরাম বাসায় জানায়, শান্ত ফোন করেছে, দেখা করতে যাচ্ছে। এরপর আর ফেরেনি ইকরাম। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও ইকরামের সন্ধান না পেয়ে রাজধানীর খিলক্ষেত থানায় সাধারণ ডায়েরি করে পরিবার। শনিবার (৬ মে) সন্ধ্যায় স্থানীয়দের দেওয়া খবরে খিলক্ষেত এলাকার পাতিরায় বসুন্ধরা বালুর মাঠ সংলগ্ন ডোবা থেকে ইকরামের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ বলছে, পরিকল্পনা করেই নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে ইকরামকে। তার চোখও তুলে ফেলা হয়েছিল। হত্যা নিশ্চিত করে ডোবায় ফেলে কচুরিপানা দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছিল মরদেহ। ময়না তদন্তের জন্য ইকরামের মরদেহ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
এ ঘটনায় খিলক্ষেত থানায় অজ্ঞাত কয়েকজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন নিহতের বাবা কবির হোসেন মোল্লা। মামলা নং ৫। মামলায় বাদী অভিযোগ করেন, গত ৪ মে রাত সোয়া ৮টা থেকে শনিবার দুপুর ১টার মধ্যে যেকোনো সময় পরস্পর যোগসাজশে আমার ছেলে ইকরাম হোসেন মোল্লাকে (২২) হত্যা করা হয়েছে। লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে বসুন্ধরা স্টেডিয়ামের পূর্ব পাশে বসুন্ধরা বালুর মাঠ সংলগ্ন ডোবার পশ্চিম কিনারে ফেলে কচুরিপানা দিয়ে ঢেকে রাখে। মামলায় তিনি বন্ধুদের সঙ্গে টাকা-পয়সা লেনদেন নিয়ে বিরোধের বিষয়টি উল্লেখ করেন। মামলার পর অভিযুক্ত দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রোববার (৭ মে) দুপুরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানোর কথা রয়েছে।
খিলক্ষেত থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এনামুল হক খন্দকার বলেন, নিহত ইকরাম হোসেনের বাড়ি রাজধানীর খিলক্ষেতের ডুবনী নূরপাড়ায়। তিনি রাজধানীর তেজগাঁও কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে ইকরাম নিখোঁজ ছিল। পরিবারের পক্ষ থেকে সাধারণ ডায়েরিও করা হয়। পরে কাল বিকেলে খিলক্ষেত এলাকার পাতিরাস্থ বসুন্ধরা বালুর মাঠ সংলগ্ন ডোবা থেকে ইকরামের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সুরতহাল করার সময় নিহতের মরদেহে একাধিক আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এটা স্পষ্টত হত্যাকাণ্ড।
এ তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, আমরা অভিযুক্ত শান্ত ও আবু সিদ্দক নামে দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছি। তারা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যায় নিজেদের সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করেছেন। আজ দুপুরে তাদের আদালতে সোপর্দ করে বিশদ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড চাওয়া হবে। নিহতের বাবা ও মামলার বাদী কবির হোসেন মোল্লার নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে কল রিসিভ করেন নিহতের বড় বোন ঝুমা আক্তার। তিনি বলেন, বাবা কথা বলার মতো অবস্থায় নেই। ইকরামের ছবি বুকে নিয়ে বাবা বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। শান্তর সঙ্গে দেখা করাটাই বুঝি আমার ভাইয়ের কাল হলো।
ঝুমা আক্তার বলেন, এলাকার সমবয়সি ছেলে শান্ত ইট-বালুর ব্যবসায় লগ্নি করার জন্য প্রলুব্ধ করেছিল ইকরামকে। বিনিময়ে হাত খরচা দেবে বলেছিল। এটা ভেবেই বাবার কাছ থেকে দুই লাখ টাকা নিয়ে দেয় শান্তকে। কিন্তু গত ছয় মাসে কোনো টাকা দেয়নি, উল্টো ঘুরিয়েছে। আসল টাকাও দিচ্ছিল না। শান্ত নেশা করত আরেক সহপাঠী আবু সিদ্দিকের সঙ্গে। বিষয়টি জানার পর শান্তর মাকে ইকরাম জানায়, শান্ত নেশা করে। ওকে শাসন করেন, আর আমার টাকা দিতে বলেন। এসব কারণে শান্তর মা শান্তকে মারধর করেন।
তিনি আরও বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাতে শান্তই ফোন করে ইকরামকে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর কাল ইকরামের মরদেহ গলাকাটা, চোখ উঠা অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। আমরা চাই সুষ্ঠু তদন্ত হোক, জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক। সরল বিশ্বাসে টাকা ধার দিয়ে ভাইটাকে অকালে মরতে হলো।