টিএমএসএসের ‘অভয়ারণ্যের’ জন্য কেনা ৫ হরিণের মধ্যে মারা গেল ৪টি
প্রথম নিউজ, বগুড়া : জাতীয় চিরিয়াখানা থেকে বগুড়ার বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘের (টিএমএসএস) 'পশু অভয়ারণ্যের' জন্য কেনা পাঁচটির মধ্যে চারটি হরিণই মারা গেছে। এই মৃত্যুর জন্য অ্যানেসথেসিয়ার প্রভাবকে দায়ী করছে টিএমএসএসের পশু অভয়ারণ্যের কর্তৃপক্ষ।
রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে হরিণগুলো ঢাকা থেকে বগুড়ায় এসে পৌঁছায়। তখন খাঁচার মধ্যে চারটি হরিণকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। এর আগে সন্ধ্যা ৬টার দিকে ট্রাকে করে হরিণগুলো পাঠানো হয়। একইভাবে চলতি বছরের মে মাসে একই সংস্থার ক্রয় করা তিনটি হরিণ পরিবহনের সময় মারা গিয়েছিল।
হরিণের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বগুড়া জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মোশারফ হোসেন।
টিএমএসএসের পশু অভয়ারন্য সূত্র জানায়, বগুড়ার নওদাপাড়ায় টিএমএসএস তাদের বিনোদনপার্কে একটি বেসরকারি পশু অভয়ারণ্য বা চিড়িয়াখানা গড়ে তুলেছে। সেখানে ৯০ শতক জায়গার ওপর গড়ে তোলা হয়েছে হরিণ প্রতিপালন বিভাগ। চলতি বছরে হরিণ প্রতিপালনের জন্য লাইসেন্স পায় সংস্থাটি। লাইসেন্স পাওয়ার পর তারা এখন পর্যন্ত জাতীয় চিড়িয়াখানা থেকে দুই চালানে ১১টি হরিণ ক্রয় করেন। প্রতিটি হরিণের মূল্য ধরা হয় ৫০ হাজার টাকা।
টিএমএসএস পশু অভয়ারণ্যের নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাকিম শাহ বলেন, ‘রোববার সন্ধ্যায় ঢাকা থেকে ৫টি হরিণকে অ্যানেসথেসিয়া দিয়ে খাঁচায় তোলা হয়। পরে খাঁচাসহ ট্রাকটি বগুড়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। পথে সাভারে থাকতেই একটি হরিণ মারা যায়। আর রাত আড়াইটার দিকে আমরা যখন খাঁচা নামাই, তখন মোট চারটি হরিণকে মৃত দেখতে পাই। আর একটি সুস্থ ছিল।’
নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, এর মধ্যে গত ২৮ মে জাতীয় চিড়িয়াখানা থেকে ৬টি হরিণ ক্রয় করা হয়। কিন্তু হরিণ হস্তান্তরের সময় অ্যানেসথেসিয়া দেওয়ার সময় তাদের হাতেই দুটি হরিণ মারা যায়। পরিবহণের সময় আরও একটি। ওই দুইটার পরিবর্তে ২৬ জুন আমাদের আরও দুটি হরিণ পাঠায় জাতীয় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। আমাদের কাছে আনার পর একটি হরিণ বাচ্চা প্রসব করেছে। এ নিয়ে এখন মোট সাতটি হরিণ রয়েছে টিএমএসএস চিরিয়াখানায়।
এভাবে দুই দফায় হরিণ মৃত্যুর কারণে জাতীয় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষকে দুষছে টিএমএসএস। এ বিষয়ে মোস্তাকিম শাহি বলেন, তাদের কাছে থেকে হরিণ নেওয়া হচ্ছে, অথচ তারা কোনো গাইড লাইন বা পরামর্শ কিছুই দেয়নি। হরিণ অত্যন্ত সেনসিটিভ (সংবেদনশীল) প্রাণী। কিন্তু তাকে অ্যানেসথেসিয়া দিচ্ছেন তারা, সেটার প্রয়োগমাত্রা ঠিক আছে কিনা কিছুই আমরা জানি না। কিন্তু আমরা দেখেছি নিয়ে আসার পর হরিণগুলো খুবই দুর্বল থাকে। এ জন্য মনে হয় অ্যানেসথেসিয়ার মাত্রা বা এই কাজের ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি আছে।
তবে এসব ঘটনায় অভিযোগের বিষয়টি টিএমএসএসের ঊর্ধ্বতনরা দেখবেন বলে জানান মোস্তাকিম শাহি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় চিড়িয়াখানার ভেটেনারি সার্জন নাজমুল হুদা বলেন, গাড়িতে নিয়ে যাওয়ার সময় প্রায়শই হরিণ মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটে। চিত্রা হরিণ অনেক সেনসেটিভ (সংবেদনশীল)। এদেরকে অতিরিক্ত কোনো অ্যানেসথেসিয়া দেওয়া হয় না। দেখা যায় ১০টি পাঠালে তিনটিই মারা যায়।
একই কথা বলেন বগুড়া জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মোশারফ হোসেন। তিনি বলেন, খবর পেয়ে সদর উপজেলার একটি টিম গিয়েছিল ঘটনাস্থলে। বণ্যপ্রাণী মারা গেলে আমাদের তার একটি রেকর্ড রাখতে হয়।
আর হরিণের মৃত্যুর বিষয়ে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বলেন, দেখা যায় হরিণ ভয় পেলে, তাকে ধরতে গেলে হার্ট অ্যাটাক করে। এই প্রাণীটি খুবই নাজুক। আর পরিবহণের সময় তো ঝাঁকুনি লাগেই, লাফালাফি করেছে। এসব থেকে মারা গিয়ে থাকতে পারে।