জামায়াতে বিভাজন নেই কেয়ারটেকার সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাবো না
মানবজমিনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রথম নিউজ, অনলাইন ডেস্ক: বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো ভাবেই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতের নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের। তিনি এটাও নিশ্চিত করেছেন যে নির্দলীয় কেয়ারটেকার সরকার ছাড়া জামায়াত কোনো নির্বাচনে যাবে না। মানবজমিনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। জামায়াতে সংস্কারপন্থি বা সংস্কারবিরোধী বলে কোনো বিভাজন নেই বলেও দাবি করেন সাবেক এই এমপি। ডা. তাহের বলেন, আমাদের, এই দেশের মানুষের এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একটাই বক্তব্য একটা সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া প্রয়োজন।
যেখানে মানুষ তার মতামত ব্যক্ত করতে পারবে, তার ইচ্ছামতো ভোট দিতে পারবে, যাকে ইচ্ছা তাকে ভোট দিতে পারবে। এবং সেটি শুধুমাত্র একটি নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনেই সম্ভব। বিএনপি’র সঙ্গে আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের আন্দোলন এবং বিএনপি’র আন্দোলন জাতীয় কনসাসনেস হচ্ছে এই সরকারের পতন, পদত্যাগ এবং একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন। এক্ষেত্রে সমস্ত জাতি ঐক্যবদ্ধ। কৌশলগত কারণে আমরা আমাদের প্ল্যাটফরম থেকে আন্দোলন করছি এবং বিএনপিসহ অন্য দলগুলো স্ব স্ব প্ল্যাটফরম থেকে আন্দোলন করছে। কিন্তু আমরা এবং জাতি চায়, সকল বিরোধী দলগুলো একসঙ্গে দাঁড়িয়ে এই সরকারের পতনের ডাক দিবে।
গত ১০ই জুন জামায়াত ঢাকায় সমাবেশের অনুমতি পেয়েছিল। এ নিয়ে নানা আলোচনা হয়েছে। পরে আর সমাবেশের অনুমতি পায়নি। এ প্রসঙ্গে ডা. তাহের বলেন, আসলে বিষয়টা খুব পরিষ্কার। ১০ বছর আমরা কোনো সমাবেশ করতে পারিনি। কথা বলার অধিকার, মুভ করার অধিকার ও রাজনীতি করার অধিকার এসব কিছু থেকে অন্যায় ভাবে অসংবিধানিকভাবে আমাদের বিরত থাকতে বাধ্য করা হয়েছে। আমরা উদ্যোগ নেয়ার পরে প্রশাসন হয়তো ভেবেছে দলটি ১০ বছর পরে সমাবেশ করছে হয়তো মোটামুটি ছোটখাটো ভাবে কিছু করতে পারবে। অনেকে তো বলতো জামায়াত নাই। সে অবস্থাতে আমাদের অনুমতি দেয়া হয়েছে রাত ১০টার পরে। একটা নির্ধারিত জায়গায়।
যাই হোক পারমিশন দিচ্ছে এটাকে পজেটিভ ধরে নিয়ে আমরা একমত হয়েছিলাম। আমরা জনসভা শুরু করেছিলাম। এবং আমাদের চিন্তার বাইরে সেখানে লাখ লাখ মানুষ এসে হাজির হয়েছে। এটা দেখে প্রশাসন হতচকিত হয়ে গিয়েছে ভয় পেয়ে গিয়েছে। এবং জামায়াত যে একটা বিশাল জনপ্রিয় দলে পরিণত হয়েছে। এটা কিছুটা প্রমাণিত হওয়ার পরে ওরা আর অ্যালাউ করতে চায়নি। জামায়াতের এই নেতা আরও বলেন, আমরা নিয়মতান্ত্রিক ভাবে কাজ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ এটাকে সুযোগ নিয়ে আমাদেরকে ঠেকিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে। তো আমরা মনে করি আমাদের রাজনৈতিক অধিকার, আমাদের দলীয় অধিকার ও আমরা আগামীতে পুলিশ আমাদেরকে অনুমতি দিক বা না দিক সহযোগিতা করুক বা না করুক আমরা এই ফ্যাসিস্ট বিরোধী আন্দোলন মাঠে চালিয়ে যাবো ইনশাআল্লাহ।
অনেকে বলছেন, আপনি জামায়াতের সংস্কারপন্থিদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, এমন মন্তব্যের ব্যাপারে ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেন, আসলে জামায়াতের ভেতরে সংস্কারপন্থি বা সংস্কারবিরোধী এ ধরনের কোনো বিভাজন নেই। প্রত্যেকটি দলেরই বা প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানেরই আপডেট করা সময়োপযোগী করা স্বাভাবিক। সুতরাং জামায়াতে ইসলামীর সকলে মিলে যেখানে যেখানে পরিবর্তন দরকার বর্তমান পরিস্থিতিকে অ্যাপ্রোচ করা দরকার সেগুলোকে আমরা চিহ্নিত করে সে অ্যাপ্রোচ করার জন্য আমরা চেষ্টা করছি। আমরা ট্রাই করছি সকলে মিলে একসঙ্গে করছি। এখানে কোনো গ্রুপ নেই কোনো নেতৃত্ব নেই। একই নেতৃত্ব মিলে আমরা কাজ করছি। কারাগার থেকে মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের লেখা বহুল আলোচিত চিঠি প্রসঙ্গে ডা. তাহের বলেন, তার চিঠিতে অনেক কিছুই ছিল যা বাস্তবভিত্তিক। এবং উনি রাষ্ট্রের দেশের বিশ্বের নানা পর্যালোচনা করেছেন। সবকিছু মিলিয়ে এখন এরকম নানা বিষয় নানা ইস্যুতে আমরা রেগুলারই আলোচনা করছি। যেগুলো আমাদের জন্য উপযুক্ত মনে করি সেগুলোকে আমরা এন্ডোর্স করছি। সেগুলোকে আমরা নতুন করে ভাবছি।
বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়া সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার জামায়াতের কোনো সম্ভাবনা নেই। আমরা যখন দশ তারিখে মিটিং করি তখন গুঞ্জন তৈরি হয়। কিন্তু আমাদের পরিষ্কার কথা জামায়াত এই সরকারের অধীনে কোনো ধরনের নির্বাচনে যাবে না।