চীনের জিডিআইয়ে এখনই যুক্ত হচ্ছে না বাংলাদেশ

আগামী শনিবার ঢাকায় পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের সভায় (ফরেন অফিস কনসালটেশন- এফওসি) বসছে বাংলাদেশ ও চীন।

চীনের জিডিআইয়ে এখনই যুক্ত হচ্ছে না বাংলাদেশ

প্রথম নিউজ, ঢাকা: গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (জিডিআই)-এ বাংলাদেশকে পাশে চায় চীন। চীনের প্রেসিডেন্টের এ উদ্যোগে যুক্ত হতে বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে চাপও রয়েছে। তবে, এখনই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়ে কোনো নিশ্চিত বার্তার ইঙ্গিত দিতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা।

আগামী শনিবার ঢাকায় পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের সভায় (ফরেন অফিস কনসালটেশন- এফওসি) বসছে বাংলাদেশ ও চীন। দুই দেশের সামগ্রিক বিষয় নিয়ে হতে যাওয়া ওই  সভায় থাকছে জিডিআই-এ ঢাকার যুক্ত হওয়ার প্রসঙ্গ। এক্ষেত্রে বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত বিস্তর আলোচনা ও সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সইয়ের বিষয়ে জোর দেওয়া হবে।

ঢাকার একটি কূটনৈতিক সূত্র বলছে, ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল হুমকি হিসেবে দেখছে বেইজিং। তাছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার টোকিও সফরে দুই দেশের যৌথ বিবৃতিতে দক্ষিণ চায়না সাগর নিয়ে কথা উঠেছে। ধারণা করা হচ্ছে, বেইজিং বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন। এ দুই প্রেক্ষাপট বিবেচনায় যত দ্রুত সম্ভব জিডিআই-এ বাংলাদেশকে যুক্ত করতে পরিকল্পনা থাকবে বেইজিংয়ের।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, ইন্দো-প্যাসিফিক রূপরেখা দেওয়া মানে এই নয় যে আমরা যুক্তরাষ্ট্র বা জাপানের সঙ্গে চলে গেলাম। আমরা তো চায়নার এক নীতিকে প্রকাশ্যে খুব জোরালোভাবে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছি। আমরা তাদের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই)-এ আছি। জিডিআই নিয়ে তাদের একটা আগ্রহ আছে। এটা নিয়ে আমরা এখনও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছি। আমাদের মিশনগুলোর (বেইজিং ও জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন) মতামত চেয়েছি। কারণ, এটাতে জাতিসংঘ রিলেটেড একটা ব্যাপার আছে। আমাদের সংশ্লিষ্ট মিশনগুলো থেকে ইনপুট চাওয়া হয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা বলেন, আমরা এ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নেব কি না, এখনও নিশ্চিত নয়। এটার ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক নিয়ে, ভেতরে লুকোনো কিছু আছে কি না বা অন্যরা এটাকে খারাপভাবে নেয় কি না, সবকিছুই দেখা হচ্ছে। এটা বলতে পারি, আমরা এ মুহূর্তে কোনো সিদ্ধান্তে যাচ্ছি না। ওদের দিক থেকে চাপ থাকবেই।

গত বছরের আগস্টে ঢাকা সফর করেছিলেন চীনের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। সেই সফরে চীনের প্রেসিডেন্টের গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (জিডিআই) ও গ্লোবাল সিকিউরিটি ইনিশিয়েটিভ (জিএসআই)-এর মতো উদ্যোগে বাংলাদেশকে যুক্ত হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে ঢাকায় নিযুক্ত চীনের তৎকালীন রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে বলেছিলেন, জিডিআই-এ যুক্ত হওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ ইতিবাচক। লি’র উত্তরসূরি চীনের নতুন রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন গত মার্চের মাঝামাঝিতে এক অনুষ্ঠানে দাবি করেন, জিডিআই-এর বিষয়ে বাংলাদেশ ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, ঢাকায় হতে যাওয়া এফওসি-তে নেতৃত্বে দিতে চার সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল নিয়ে আগামী শুক্রবার তিন দিনের সফরে বাংলাদেশে আসছেন চীনের ভাইস মিনিস্টার সান ওয়েইডং। ঢাকার পক্ষে এফওসি-তে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং বেইজিংয়ের পক্ষে সান ওয়েইডং নেতৃত্ব দেবেন।

এফওসি-তে আলোচনার বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, আলোচনায় অনেক কিছু আসতে পারে। দ্বিপাক্ষিক সব ইস্যু থাকবে। আঞ্চলিক ইস্যু আসবে। আমাদের দ্বিপাক্ষিক ইস্যুগুলো কোন অবস্থায় আছে, সেগুলো নিয়ে আলোচনা হবে। চলমান বিভিন্ন ইস্যু নিয়েও আলোচনা হতে পারে। আলোচনায় রোহিঙ্গাদের পাইলট প্রত্যাবাসনে বিশেষ গুরুত্বের কথা জানান মন্ত্রণালয়ের এ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগে মিয়ানমার ইস্যুতে আলোচনা হবে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে মূল আলোচনা হবে। নির্বাচনের আগে কিছু রোহিঙ্গা পাঠানো দরকার। প্রসেসটা আমরা শুরু করতে চাই।

এদিকে কূটনৈতিক একটি সূত্র বলছে, এফওসি মুখ্য হলেও বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিসহ নির্বাচন প্রসঙ্গ আসতে পারে আলোচনার টেবিলে। এছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ ইস্যু তো থাকছেই।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র বলছে, চীনের সঙ্গে এফওসি’র প্রস্তুতি নিয়ে গত ১৮ মে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইন্সপেক্টর জেনারেল অব মিশনস-এর আসাদ আলম সিয়ামের নেতৃত্বে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। জানা গেছে, এর বাহিরে চীনের ভাইস মিনিস্টার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে একটি সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। এছাড়া ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি পদ্মা সেতু দেখতে যাবেন চীনা প্রতিনিধিদল।