আবু সাঈদ চাঁদের বক্তব্য ‘স্লিপ অব টাং: রিজভী

আজ মঙ্গলবার (২৩ মে) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।

আবু সাঈদ চাঁদের বক্তব্য ‘স্লিপ অব টাং: রিজভী

প্রথম নিউজ  ঢাকা: ‘আমাদের এক দফা শেখ হাসিনাকে কবরস্থানে পাঠাতে হবে’ রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদের এমন বক্তব্যকে ‘স্লিপ অব টাং’ বলে আখ্যা দিয়েছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনাকে নিয়ে রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়কের বক্তব্য একটি ‘স্লিপ অব টাং’। এটা নিয়ে আওয়ামী লীগ উদ্দেশ্যমূলকভাবে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির অপচেষ্টা করছে।

আজ মঙ্গলবার (২৩ মে) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।

রিজভী বলেন, অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকার দেশকে নরক রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ভয়াবহ আওয়ামী তান্ডব আর তামাশা ও ভাঁওতাবাজীর নাটক শুরু করেছে। পত্র-পত্রিকা, ইলেক্ট্রনিক ও সোস্যাল মিডিয়ায় নানা রকম গুজব ছড়িয়ে গণমানুষকে বিভ্রান্ত করতে মাঠে নামানো হয়েছে সরকারের ‘পেইড বাহিনী’। নিশ্চিত পতনের মুখে দাঁড়িয়ে থাকা নিশিরাতের সরকারের ভিত্তিমূল হচ্ছে এখন দলীয় গুন্ডাবাহিনী, দলানুগত আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী আর অপপ্রচার ও উদ্ভট চাপাবাজী। ইতোমধ্যেই দেশ-বিদেশ থেকে ‘লালকার্ড’ পাওয়া শুরু হয়েছে। নিশিরাতের প্রধানমন্ত্রী পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত সফর করে সবকিছুর বিনিময়ে ক্ষমতায় থাকার জন্য ধর্ণা দিয়ে কোথাও পাত্তা পাচ্ছেন না। গোটা পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন শেখ হাসিনা। দেশে দুর্বার গণআন্দোলনে উত্তাল রাজপথ আর বিদেশে রেড সিগন্যালের এই পরিস্থিতিতে ভোট ডাকাত সরকার পুরোপুরি বেপরোয়া-উন্মত্ত হয়ে উঠেছে। বন্দুকের নলের শাসন শুরু করেছে। সারাদেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর গুন্ডাবাহিনী এবং পুলিশ বাহিনীকে লেলিয়ে দিয়ে মরিয়া আক্রমণ চালাচ্ছে। কেবল গায়েবী মামলা, হয়রানী-হামলা-মারপিট-ভাঙচুর-লুটপাটই নয়, এমনকি কুপিয়ে ও গুলিবর্ষণ করেও হত্যা ও পঙ্গু করে দেয়া হচ্ছে দেশের মানুষকে। মিছিল দেখলেই আতংকে গুলি চালানো হচ্ছে নির্বিচারে। আমাদের নেতাকর্মীদের বাসাবাড়িতে থাকতে দেয়া হচ্ছে না। গায়েবী মামলায় গণগ্রেফতার করা হচ্ছে। দ্রব্য মূল্যের উর্দ্ধগতি, বিদ্যুতের লোড শেডিং, সর্বগ্রাসী দূর্নীতির ছোবলে পিষ্ট হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। অর্ধাহারে অনাহারে কাটছে মানুষের জীবন। ডলার সংকটে ব্যাহত হচ্ছে আমদানি রপ্তানি। এদিকে আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনাকে নিয়ে রাজশাহী জেলা বিএনপি’র আহবায়কের একটি ‘স্লিপ অব টাং’ নিয়ে আওয়ামী লীগ উদ্দেশ্যমূলকভাবে একটি অবনতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে। পত্রিকায় দেখলাম চট্টগ্রামে সোমবার প্রকাশ্যে পিস্তল হাতে নিয়ে মিছিল করেছেন চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনের বিনা ভোটের সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। জঙ্গী কায়দায় প্রকাশ্যে পিস্তল হাতে মিছিলের অগ্রভাগে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এই ঘটনার ২৪ ঘন্টা পার হতে চললেও পুলিশ এখনো “পিস্তল মুস্তাফিজকে” গ্রেফতার করেনি। তার বিরুদ্ধে কোন মামলা পর্যন্ত হয়নি। এটি একটি ভয়ঙ্কর আলামত। নির্বাচনের প্রাক্কালে ক্ষমতাসীন নেতা-এমপিসহ যুবলীগ-ছাত্রলীগের হাতে অবৈধ অস্ত্রের ছড়াছড়ি। আওয়ামী লীগের এক আলোচিত নেতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গতকাল মানববন্ধন করে প্রস্তাব দিয়েছেন নির্বাচন ছাড়াই বর্তমান সংসদ ও আওয়ামী সরকারের মেয়াদ আরও পাঁচ বছর বাড়াতে হবে। তার এই প্রস্তাবের পক্ষে সরকার দলের নেতারা সমর্থন দিচ্ছেন। সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতি শেখ হাসিনার চিরকালীন বিরক্তি ও বিতৃষ্ণা। এজন্য এখন ভোট পন্ড করার নীলনকশা বাস্তবায়নের চক্রান্ত শুরু করেছেন তিনি।
তিনি বলেন, বিনাভোটে সর্বময় ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে র‌্যাব-পুলিশকে দিয়ে বিরোধী দল ও মতের হাজার হাজার মানুষকে গুম খুন অপহরণ করেছে। আওয়ামী লীগের মুখের সন্ত্রাস থেকেও মানুষ রক্ষা পায়নি। শেখ হাসিনা প্রকাশ্যেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কখনো পরোক্ষভাবে, কখনো সরাসরি হত্যার হুমকি দিয়েছেন। গত বছরের ১৮ মে এক আলোচনা সভায় শেখ হাসিনা পদ্মা নদীতে টুস করে ফেলে দিয়ে হত্যা করার হুমকী দেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে। নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে পদ্মা সেতু থেকে পানিতে ফেলে চুবিয়ে মারার হুমকি দিয়েছেন। এখানেই শেষ নয়, দেশের জনগণ ভুলে যায়নি, ”একটার বদলে দশটা লাশ” ফেলার হুমকি দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর সারাদেশের আওয়ামী সন্ত্রাসীদের লগি বৈঠাসহ রাজধানীতে জড়ো করেছিলেন শেখ হাসিনা। রাজধানীসহ সারাদেশে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা সেদিন কয়েক ডজন মানুষকে নির্মমভাবে খুন করে। এই লগী-বৈঠা ঢাকায় নিয়ে আসার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। প্রকাশ্য দিবালোকে লগি বৈঠা দিয়ে তরতাজা তরুণদের পিটিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। এ নির্মম হত্যাকান্ড ও পাশবিকতায় কেঁদেছে বাংলাদেশ, কেঁদেছে বিশ্বমানবতা। জাতিসংঘের তৎকালীন মহাসচিব থেকে শুরু করে সারাবিশ্বে ওঠে প্রতিবাদের ঝড়। শুধু হত্যাই নয়, মৃত লাশের উপর নৃত্য করার দৃশ্যও প্রত্যক্ষ করে বিশ্ববাসী। ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় গণসমাবেশ বানচাল করতে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় অফিসে নারকীয় তান্ডব ও আমাদের শত শত নেতাকর্মীকে গ্রেফতারের একদিন পরে গত ৮ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক যৌথসভায় শেখ হাসিনা বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের হাত ভেঙ্গে দেয়ার নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, ‘সারাদেশে দলের প্রত্যেক নেতাকর্মীকে মাঠে সতর্ক অবস্থানে থাকতে হবে। যে হাত দিয়ে মারতে আসবে, সে হাত ভেঙে দিতে হবে। যে হাত দিয়ে আগুন দিতে আসবে, সে হাত দিয়ে তাদের পোড়াতে হবে। ওদের কিসের ক্ষমা ? বসে বসে আর মার খাওয়া যাবে না। ইতিহাস সাক্ষী, অবৈধ প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে সকল সন্ত্রাসের উস্কানিদাতা, হুকুমদাতা। ৯০ এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সময় শেখ হাসিনা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে হুমকি দিয়ে কি বলেছিলেন সেটি আমি বর্তমান প্রজন্মের সামনে তুলে ধরতে চাই। তাহলে দেখা যাবে আওয়ামী নেতাদের সন্ত্রাসী চরিত্র পাল্টায়নি। উগ্রতা, নির্মমতা, অসূয়া ও হিং¯্রতা হচ্ছে আওয়ামী লীগের ভূষণ।

সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, ‘সামরিকতন্ত্র বনাম গণতন্ত্র’ এই নামে শেখ হাসিনার লেখা একটি বইয়ে তিনি বলেছেন, ‘সেনা ছাউনিতে বসে বন্দুকের নল চেপে পুলিশ, বিডিআর, সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করে জনগণের ভোট কেড়ে নেবে আমরা তা মেনে নেবোনা। আমরা তা হতে দেবোনা। পুলিশ, বিডিআর, সেনাবাহিনীকে বলতে চাই-আপনারা জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড়াবেন না। জনগণের বিরুদ্ধে বন্দুক তুলে ধরবেন না। বাংলার জনগণ তাহলে আপনাদের রেহাই দেবে না। সঙ্গে সঙ্গে বলতে চাই, পাকিস্তানী সেনাবাহিনী তাদের পরিবার পরিজন পাকিস্তানে রেখে এসেছিল। কিন্তু আজকের পুলিশ, বিডিআর, সেনাবাহিনীর আত্মীয়স্বজনরা বাংলার গ্রামে-গঞ্জে বাস করে। এদের আত্মীয়স্বজনদের ঠিকানা খুঁজে বের করুন, সতর্ক করে দিন। হুঁশিয়ার করে দিন। আর যদি এদেশের মানুষের বুকের উপর গুলি চালানো হয়, আর যদি এদেশের মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়, আপনাদের প্রতি আমার আহ্বান- প্রতিশোধ নেবেন।  লাশের পরিবর্তে লাশ চাই। আমি এই নির্দেশ দিচ্ছি’।  বর্তমানে তার চেয়েও ভয়ংকর পরিস্থিতি বিরাজমান। তবুও বিএনপি কখনোই শেখ হাসিনার মতো প্রতিহিংসা এবং জিঘাংসার রাজনীতি কিংবা আইন নিজ হাতে তুলে নেয়ার জন্য কর্মীদের নির্দেশ দেয়নি। শেখ হাসিনার মতো আওয়ামী লীগের নেতা-মন্ত্রী-এমপিরা খুন, গুম, চোখ তুলে নেয়া, হাত-পা কেটে দেয়া, গুলি করে মারার হুমকিতে দেশের বিরোধী রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ছাড়াও সুশীল সমাজের নেতারা আতংকে থাকেন। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে হত্যা করতে তার গুলশান অফিসের দরজা পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নেতা মুফিদুল ইসলাম গেলেও তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ। আপনাদের নিশ্চয়ই স্মরণ আছে, শেখ হাসিনার বিনা ভোটের  সরকারের শরিক দল জাসদের একাংশের সাবেক সভাপতি ও চট্টগ্রাম-৮ আসনের সাবেক এমপি মরহুম মঈন উদ্দীন খান বাদল ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে খালেদা জিয়াকে গুলি করে হত্যার হুমকি দেন। আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী হরতালকারীদের বাড়িতে ঢুকে হত্যা করার নির্দেশ দিলেও তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। আওয়ামী লীগের সভাপতি ম-লীর সদস্য ও বিনা ভোটের এমপি শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, এবার আন্দোলনের নামে নৈরাজ্য করা হলে প্রত্যেকের হাত-পা কেটে দেয়া হবে। শেখ হাসিনা ও তার দলের নেতাদের নির্দেশনায় ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচনের সময় ধানের শীষের প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের গণসংযোগের সময় দিনের আলোতে খালেদা জিয়াকে হত্যার জন্য গাড়িতে হামলা করে ভাংচুর করা হয়। আওয়ামী লীগের সাবেক নৌমন্ত্রী শাহজাহান খান প্রকাশ্য টকশো’তে প্রখ্যাত আইনজীবী, বিএনপি’র সিনিয়র নেতা ব্যারিষ্টার রফিকুল ইসলাম মিয়ার চোখ তুলে নেয়ার হুমকির কথা সর্বজনবিদিত। গত রোববার আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে মেয়র তাপস বলেছেন, যে সকল সুশীলরা আমাদেরকে বুদ্ধি দিতে যাবেন সেই সকল সুশীলদের আমরা বস্তায় ভরে বুড়িগঙ্গা নদীর কালো পানিতে ফেলে দেবো।

সরকারের সমালোচনা করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেররা এখন রাজনীতির ভাষা ত্যাগ করে সন্ত্রাসীদের ভাষায় কথা বলছেন। জনাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত প্রতিটি নেতাকর্মী। ঘুমের মধ্যেও জনতার পদধ্বনিতে আঁতকে উঠছেন। কারণ জবরদস্তি করে বেশীদিন ক্ষমতা দখল করে থাকা যায় না। সবকিছুর শেষ আছে। ইদানিং প্রতিদিন ওবায়দুল কাদের আন্দোলনরত জনগণকে হাত পা ভেঙ্গে দেয়ার হুমকী দিচ্ছেন। তিনি বলেছেন, ‘এত লাফালাফি কেন ? যে হাতে আগুন নিয়েছেন, ওই হাত পুড়িয়ে দেব। যে হাত ভাংচুর করবে ওই হাত ভেঙ্গে দেব। আগুন হাতে আসবেন না, ওই হাত গুঁড়িয়ে দেব।’ নিশিরাতের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার মাত্র কয়েকজন নেতার সন্ত্রাসী ভাষা উল্লেখ করলাম। নেতাদের এই হুমকি কার্যকর করছেন অতি উৎসাহী কিছু দলবাজ পুলিশ আর আওয়ামী গুন্ডাবাহিনী। তাদের নেতারা কেবল হুমকি দিয়ে থমকে থাকে না। গুম-খুন ও হাত পা ভাঙ্গার মাধ্যমে তা কার্যকর করছে প্রতিটি জনপদ।
রিজভী বলেন, আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট, বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান এর নেতৃত্বে বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং দেশের গণতান্ত্রিক শক্তি গণতন্ত্র অর্জনের জন্য এখন ঐক্যবদ্ধ। গণতন্ত্র জনগণকে দেশ পরিচালনায় অংশগ্রহণের অধিকার দেয়। জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যই আমরা বর্তমান আওয়ামী সরকারের পদত্যাগের দাবি জানিয়ে গণতান্ত্রিক ও কল্যাণমূখী সরকার গঠনের লক্ষ্যে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার চাই। এ দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত বিএনপি ঘরে ফিরবেনা। স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ জিয়াউর রহমানের দয়ায় আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে স্বনামে রাজনীতি করার সুযোগ পেয়েছে। কিন্তু এই সুযোগ গ্রহণ করে আবারও তারা সন্ত্রাসী চরিত্রে ফিরে এসেছে। কারণ ক্ষমতায় এসে সন্ত্রাসী হয় তাদের রাষ্ট্রীয় মূলনীতি। এরা জনগণের দাবি উপেক্ষা করে দুঃশাসন চাপিয়ে দিয়েছে। এখনো সময় আছে, পিস্তল মুস্তাফিজদের সামলান। জনগণকে ধোকা দিয়ে আর বোকা বানানো যাবেনা। শিগগিরই জনগণের দাবি না মানলে সেদিন আর বেশি দূরে নয়, গণতন্ত্রকামী জনগণই এবার বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী রাজনীতি সমাধিস্থ করবে। এখন আমি দেশব্যাপী হামলা-মামলা ও নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের সংক্ষিপ্ত চিত্র আপনাদের সামনে তুলে ধরছি।
গ্রেফতার, আহত ও হামলার তালিকা ঃ
 রাজশাহী জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদকে না পেয়ে তার আপন ছোট ভাই মুক্তা, বড় মেয়ের জামাই জেলা যুবদলে যুগ্ম আহ্বায়ক জিয়া এবং আবু সাঈদ চাঁদ এর পিএস জালালের স্ত্রী, শাশুড়ি ও ছোট ভাইকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
 রাজশাহী মহানগর বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম হুদা, রাজশাহী মহানগর যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মোঃ শরিফুল ইসলাম জনি, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য রাজন আলী, ২৮ নং ওয়ার্ড যুবদল নেতা মোঃ শুক্কুর আলীসহ মোট ৩০ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এছাড়াও রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয় ছাত্রদলের সদস্য নুরুউদ্দিন আবিরকে ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা পিটিয়ে গুরুতর জখম করে, সে এখন রাজশাহী মেডিকেলে চিকিৎসাধীন আছে।
 ছাত্রলীগ ও যুবলীগ সন্ত্রাসীরা আজ যশোর জেলাধীন মেলান্দহ বিএনপি কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর করে।    
 গাইবান্ধা জেলা যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি শফিকুল ইসলাম লিপন, জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক তারেকুজ্জামান তারেক, ছাত্রদলের সহ-সভাপতি ইমাম হোসেন দুলাল, যুগ্ম সম্পাদক ইমাম হাসান আলাল, যুগ্ম সম্পাদক মিরাজুজ্জামান রবিন ও সদর পৌর যুবদল নেতা কেনান হক্কানীকে গতরাতে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
 গতকাল ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি’র সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু’র সাথে কোর্টে দেখা করতে গেলে কোর্ট প্রঙ্গন থেকে জাসাস কেন্দ্রীয় কমিটি সদস্য নাসির উদ্দীন মিলনকে গ্রেফতার করে কোতোয়ালী থানা পুলিশ।
 বিএনপি নির্বাহী কমিটির সদস্য ও মহিলা দলের ময়মনসিহ বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাভোকেট আরিফা জেসমিন নাহিনের বাসায় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা অতর্কিত হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাট করে। পাগলা থানা বিএনপি’র সদস্য ও ইউনিয়ন বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক বশির আহমেদ মন্ডল, থানা যুবদল নেতা হাকিম সরকার, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা রবিন মিয়া ও দত্ত্বের বাজার ইউনিয়ন শ্রমিকদল নেতা আলীকে গতকাল গ্রেফতার করে পুলিশ। এছাড়াও গভীর রাতে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের সাথে নিয়ে পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদে বাড়ীতে-বাড়ীতে তল্লাশি চালাচ্ছে এবং পরিবারের সদস্যদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে।
 নওগাঁ জেলাধীন আত্রাই উপজেলায় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা শান্তিপূর্ণ সমাবেশের নামে নওগাঁ জেলা বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক ও নওগাঁ-৬ আসনে উপনির্বাচনে বিএনপি’র মনোনীত এমপি প্রার্থী শেখ রেজাউল ইসলাম রেজুর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে এবং ভোপড়া ইউনিয়ন যুবদলের সহ-সভাপতি মোঃ জুলহাস মন্ডল এর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা করে ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাট চালায়। এছাড়াও ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সন্ত্রাসীরা মোল্লা আজাদ মেমোরিয়াল কলেজ শাখা ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোঃ রিফাতকে একা পেয়ে ব্যাপক মারধর করে গুরুতর আহত করে।
 কুষ্টিয়া জেলাধীন জিয়ারখী ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতি আবু বক্কর, সদস্য সচিব শফিকুল ইসলামসহ কয়েকজন নেতাকর্মীকে গতকাল গ্রেফতার করে পুলিশ। এছাড়াও কুষ্টিয়া জেলায় ১৯ জন বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে একটি মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা দায়ের করে পুলিশ।
আমি অবিলম্বে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ গ্রেফতারকৃতদের নিঃশর্ত মুক্তির জোর আহবান জানাচ্ছি।