ক্ষমতাসীনরা সর্বশক্তি নিয়োগ করে গণতন্ত্রের শিকড় উপড়ে ফেলেছে:রিজভী

ক্ষমতাসীনরা সর্বশক্তি নিয়োগ করে গণতন্ত্রের শিকড় উপড়ে ফেলেছে:রিজভী

নিজস্ব প্রতিবেদক: শেখ হাসিনা সীমাহীন নির্লজ্জতা ও জলন্ত মিথ্যাচারের জীবন্ত প্রতীকে পরিণত হয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।  তিনি বলেন ওবায়দুল কাদের মিথ্যাচার করে নেতাকর্মীদের মনোাবল চাঙা করার অপচেষ্টা করছেন।  কিন্তু এবার দেশবাসী সরকারের বিপক্ষে নির্দলীয় সরকারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।

তিনি বলেন,'তিনি(শেখ হাসিনা) মিথ্যা বলতে বলতে সত্য বলাই ভুলে গেছেন। নগদ মিথ্যা কথা বলা ছাড়া আওয়ামী লীগের কোন অর্জন বা অগ্রগতি নেই। তাদের একমাত্র সাধনা ক্ষমতা অর্জন। ক্ষমতা লাভের আগে অথবা পরে কোন সময়ই তারা ন্যায়নীতির নির্দেশ গ্রাহ্য করে না। গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের বিরুদ্ধে হাস্যকরভাবে অসত্য কথা বলে প্রধানমন্ত্রী জনগণকে বোকা ও অবুঝ ভেবে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করলেও জনগণ এটাকে কোনভাবেই বিশ্বাস করবে না।

শনিবার(১৫ জুলাই)বিকেলে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন,'শেখ হাসিনা ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য মরিয়া। সেজন্য তিনি ‘পোড়া মাটি নীতি’ অবলম্বন করেছেন। তিনি বিগত ১৫ বছর প্রকৃত রাজনীতি না করে সন্ত্রাসীদের লালন পালন করেছেন। সন্ত্রাসকে নানামূখী ও বৈচিত্রময় করেছেন। শুধু দলীয় ক্যাডাররাই নয়, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে সন্ত্রাসী আক্রমণের উপযোগী করে গড়ে তুলেছেন। ফলশ্রম্নতিতে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল প্রায়
প্রতিদিনই বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মী ও ভিন্ন মতের মানুষ প্রাণহানীসহ পঙ্গুত্ব বরণ করেছে। তাদের সহিংস আক্রমণে কেউ বা হাত—পা হারাচ্ছেন, কেউ বা চোখ হারাচ্ছেন।

বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন,'গণতন্ত্র মানে শেখ হাসিনা মনে করেন, ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য সন্ত্রাসী ও পুলিশদের দ্বারা জনগণকে লাঠিপেটা করা। অবৈধ প্রধানমন্ত্রী মনে করেন, নিজ দলীয় দাগী সন্ত্রাসী যারা বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়ে রক্তাক্ত করে তাদের কবিরা গুনাহও মাফ হয়ে যায়।
বাংলাদেশের নিজস্ব ভূমিতে ক্ষমতাসীনরা সর্বশক্তি নিয়োগ করে গণতন্ত্রের শিকড় উপড়ে ফেলেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো কন্ঠরুদ্ধ করার নানা কালো আইন, গুম, অপহরণ, বিচার বহির্ভূত হত্যার অমানবিক নিষ্ঠুরতা সীমাহীন আবর্তের মধ্যে দেশকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। শিশু ও কিশোর—কিশোরী অসংখ্য ছাত্রছাত্রী তরুণ তরুণী ও লেখক সাংবাদিক শুধু ভিন্ন মত প্রকাশের জন্য মাসের পর মাস, বছরের পর বছর দানবীয় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কারাগারে বন্দী রয়েছেন। কিশোরী খাদিজা প্রায় বছর খানেক ধরে কারাগারে ভীষণ অসুস্থ অবস্থায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন। অথচ সে জামিন ও চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বাংলাদেশকে এখন এমন একটি রাষ্ট্রে পরিণত করা হয়েছে যেখানে শেখ হাসিনার হুকুম ছাড়া জামিনও মেলে না। এখানে হাইকোর্টের জামিনও সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ স্থগিত রাখে। এটি বিশে^ নজীরবিহীন। যত উচ্চ আদালতে আবেদন করা যায় ততই ভুক্তভোগী মানুষ নিস্কৃতি পায়, শুধুমাত্র বাংলাদেশই ব্যতিক্রম।

রিজভী বলেন,'আওয়ামী সরকার আর কোন অবলম্বন খুঁজে পাচ্ছে না। ওবায়দুল কাদের সাহেবরা তাই মিথ্যার সংস্কৃতি নির্মাণ করে তাদের নেতাকর্মীকে সাহস যোগানোর ব্যর্থ চেষ্টা করছেন। সারাদেশের মানুষ শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে সারাজাতি ঐক্যবদ্ধ। রাষ্ট্রের দমনযন্ত্রের প্রয়োগ আর কোন কাজে লাগবে না। এবার জনগণ স্বৈরাচারী দানবকে বোতলবন্দী করবেই। আমরা সরকারের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, হত্যা, হিংসা—হানাহানির পথ থেকে সরে আসুন। যারা বিএনপি’র শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে নারকীয় আক্রমণ চালাচ্ছেন তাদের স্থির চিত্র, ভিডিও চিত্র মানুষের হাতে হাতে। কোন অপরাধীই বিনা বিচারে পার পেয়ে যায় না। বাংলাদেশে সরকারী মদদপুষ্ট ঘৃন্য দুস্কৃতিকারিদের বিচার হবেই।

গত পরশু থেকে গতকাল পর্যন্ত আওয়ামী সন্ত্রাসীদের বর্বরোচিত হামলায় বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের গুরুতর আহত হওয়ার সংক্ষিপ্ত চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন,' ১৩ জুলাই  বৃহষ্পতিবার সন্ধ্যা ৭.৩০টা ঝিনাইদহ জেলা যুবদলের সদস্য ও পাগলা কানাই ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোঃ লিটন মন্ডল তার সহযোগী যুবদল নেতা সন্তুর মোটরসাইকেল নিয়ে ঝিনাইদহ শহর অভিমুখে যাওয়ার পথে পাগলা ইউনিয়ন পরিষদের কাছাকাছি পৌছালে আগে থেকেই ওঁতপেতে থাকা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান যুবলীগ নেতা সাঈদ এর নেতৃত্বে যুবলীগ সন্ত্রাসী রাজন, তৌফিক, শাহিন, আজম, আনোয়ার, আনিস, লিটন. ওবায়দুর, লিমনসহ প্রায় ১৫ থেকে ২০জন সন্ত্রাসী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বর্বরোচিত হামলা করে। সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে লিটন মন্ডলের ডান হাতের কব্জি কেটে নেয়, তাকে উপযুর্পুরী কুপিয়ে পা ও শরীরের বিভিন্ন জায়গা মারাত্মকভাবে জখম করে।  

"এছাড়াও গতকাল ১৩ জুলাই তারিখে দুপুরে নারায়ণগঞ্জের কাঞ্চন পৌর ছাত্রদলের সদস্য সচিব তন্ময় হাছান ও ৪নং ওয়ার্ড ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক রিফাতকে কাঞ্চন পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি আইয়ুব এর নেতৃত্বে ১০/১২ জন সন্ত্রাসী হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালিয়ে গুরুতর জখম করে।'নোয়াখালীতে “দেশ বাঁচাতে মেহনতি মানুষের পদযাত্রায়” অংশ নিতে যাওয়ার সময় কুমিল্লার মুরদানগর ও দাউদকান্দি উপজেলার বিএনপি নেতৃবৃন্দের বহন করা যাববাহন লাকসাম পৌরসভার রেল জংশন এলাকা থেকে শুরু করে বাইপাস রোডের দক্ষিণ মাথা পর্যন্ত গাড়ী ভাংচুর করেছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। তারা কুমিল্লা, নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের লাকসাম—মনোহরগঞ্জ অঞ্চলের বিভিন্নস্থানে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পাহাড়া দেয়।

গত ১৯ মে হতে অদ্যাবধি পর্যন্ত বিএনপি’র কেন্দ্র ঘোষিত জনসমাবেশকে কেন্দ্র করে সারাদেশের প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী 
মোট মামলা ৩০০টি, মোট গ্রেফতার ১০০০টি
মোট আসামী প্রায় ১০, ৩০০ এর অধিক নেতাকমীর্
উল্লিখিত পৈশাচিক ঘটনায় আমি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। অবিলম্বে আওয়ামী দুস্কৃতিকারিদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আহবান জানান। 

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির চেয়ারপারসনের আব্দুস সালাম, উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূইয়া,যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন,স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফৎ আলী সপু,ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুল মজিদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।