প্রথম নিউজ, অনলাইন: পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদ কিভাবে দেশ থেকে চলে গেল এমন প্রশ্ন রেখেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, 'বেনজীর চলে গেছে মে মাসের ৪ তারিখে। চলে যাওয়ার আগে সমস্ত অ্যাকাউন্টগুলো খালি করে গেছে। তার প্রায় ত্রিশটা একাউন্টে প্রায় ৬০ কোটি টাকা, পত্রিকায় দেখলাম হয়তো আরও বেশি হতে পারে, আমার প্রশ্ন সে কিভাবে গেল? দুদক এবং আদালত থেকে বলা হয়েছে তার সমস্ত সম্পত্তি ক্রোক করা হোক, সকলের চোখ ফাঁকি দিয়ে সে কিভাবে গেল?
তারা দেশের মানুষকে আহাম্মক মনে করে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয় আমরা কাউকে ছাড় দেবো না কিন্তু এগুলো লোক দেখানো প্রতারণা। নিশ্চয় ক্ষমতাশীনদের প্রশ্রয়ে দেশ ছেরে চলে গেছে বেনজীর। বেনজীরের বিচার লোক দেখানো, নাটক করছে সরকার। শনিবার (১ জুন) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে বিএনপি'র প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪৩ তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল সরকারের সমালোচনা করে বলেন, 'এক আজিজ এবং বেনজীর নয় এরকম অসংখ্য আজিজ এবং বেনজীর সৃষ্টি করেছে সরকার। এরা দেশটাকে একেবারে লুটের সাম্রাজ্য হিসেবে পরিণত করেছে। এখান থেকে আমাদের দেশটাকে বের করে নিয়ে আসতে হবে এবং আমরা বিশ্বাস করি এদেশের মানুষ সংগ্রাম এবং লড়াইয়ের মধ্য দিয়েই যে দানব সরকার আছে যে দেশটাকে তছনছ করে দিচ্ছে তাকে আমরা পরাজিত করতে সক্ষম হব। সত্যিকার অর্থে জনগণের সরকার আমরা প্রতিষ্ঠিত করতে পারবো।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এ লড়াই সাধারণ লড়াই নয়, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক লড়াই, ৬০ লাখ আসামি। এ লড়াইয়ে আমাদের হাজার হাজার নেতা-কর্মী প্রাণ দিয়েছেন। আমরা জেলে যাচ্ছি, কারাগারে যাচ্ছি। হ্যাঁ, সাফল্য আসে নাই। তবে একদিনে সাফল্য আসে না। বেগম জিয়া এখনো কারাগারে তাকে মুক্ত করতে পারিনি। লড়াই থেমে যায়নি, যতক্ষণ বিজয় অর্জন না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত লড়াই চলবে। সেখান থেকে সরে আসিনি। পাকিস্তান একদিনে হয়নি, বাংলাদেশ একদিনে হয় নাই। ২৫ বছর সংগ্রাম করতে হয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতায়। আমরা তো মাত্র কয়েক বছর লড়াই করলাম, মাত্র ১৫ বছর। আমরা হেরে গেছি, এটা মনে করার কোনো কারণ নাই। ইনশাল্লাহ জয় আমাদের হবেই, কারন আমরা সত্যের পথে, ন্যায়ের পক্ষে লড়াই করি।
মির্জা ফখরুল বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে‘৭৫ সাল পর্যন্ত আওয়ামী দুঃশাসন ছিল। দুর্নীতির কারণে ৭৪ সালে দুর্ভিক্ষ হয়েছে। আকণ্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত ছিল আওয়ামী লীগ বিলুপ্ত বাকশাল সরকার। সিপাহী বিপ্লবের পর জিয়াউর রহমানের দূরদর্শীর কারণে তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে বাংলাদেশকে উন্নত দিকে নিয়ে গেছে। কৃষিতে বিপ্লব নিয়ে এসেছিলেন জিয়াউর রহমান। অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছেন। পোশাকখাতকে একটা পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। শিক্ষাখাতের উন্নয়ন করেছে, শিশু একাডেমি তৈরি করেছেন। পররাষ্ট্রনীতিতে জিয়া অসামান্য অবদান রেখেছেন। তিনি বলেন, জিয়াউর রহমানের আদর্শ হচ্ছে বিএনপির মূল শক্তি। জিয়ার ডাকে সবাই যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিল। অসাধারণ নেতৃত্বের অধিকারী ছিলেন জিয়া।
তিনি বলেন, বিএনপি সবচেয়ে বড় দল, শক্তিশালী দল, সঠিকভাবে চলার কাজ শুরু করেছি। বিএনপির রিসার্চ সেল আছে। বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবি ও পেশাজীবিদের এগিয়ে আসার আহ্বান। ফ্যাসিবাদী সরকারকে সরিয়ে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করছে বিএনপি। এখনো পিছপা হয়নি। বিজয় অর্জন করতেই হবে সাফল্য আনতেই হবে। অবশিষ্ট লক্ষ্য থেকে সরে আসবে না বিএনপি, মাঝে মধ্যে কৌশল পরিবর্তন হবে।
সংগঠনের আহ্বায়ক ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা: এজেডএম জাহিদ হোসেনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব কাদের গনি চৌধুরীর সঞ্চালনায় বিএপির চেয়ারপারসন এর উপদেষ্টা ড. আব্দূল কুদ্দুস, মাসুদ আহাম্দে তালুকদার, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী দিলারা চৈাধুরি, সাংবাদিক নেতা রূহুল আমিন গাজীসহ দেশের বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী ও পেশাজীবী নেতৃবৃন্দ আলোচনায় অংশ নেন।