ক্রমেই বাড়ছে ঋণের চাপ, কেনিয়ার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে পারে চীন

সঞ্চিত চীনা ঋণের কারণে দেউলিয়া বা খেলাপি হওয়ার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে কেনিয়া

 ক্রমেই বাড়ছে ঋণের চাপ, কেনিয়ার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে পারে চীন
 ক্রমেই বাড়ছে ঋণের চাপ, কেনিয়ার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে পারে চীন-প্রথম নিউজ

প্রথম নিউজ, ডেস্ক : সঞ্চিত চীনা ঋণের কারণে দেউলিয়া বা খেলাপি হওয়ার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে কেনিয়া। এতে করে আরেক বিপদের মুখে পড়েছে পূর্ব আফ্রিকার এই দেশটি। আর তা হলো- চীনের কাছ থেকে নেওয়া ঋণ পরিশোধ করতে না পারলে কেনিয়ার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে পারে বেইজিং।

শনিবার (২২ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় বার্তাসংস্থা এএনআই।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৪ সাল থেকে চীনের কাছ থেকে বিপুল অংকের ঋণ নিয়েছে কেনিয়া। মূলত উন্নত রাস্তা, পরিচ্ছন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র এবং নিজেদের সবচেয়ে বড় প্রকল্প স্ট্যান্ডার্ড গেজ রেলওয়েতে অর্থায়নের জন্য বেইজিংয়ের কাছ থেকে বিশাল অংশের এই ঋণ নিয়েছে দেশটি।

কেনিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক ‘সেন্ট্রাল ব্যাংক অব কেনিয়ার’ তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের জুন মাস পর্যন্ত কেনিয়ার বাহ্যিক ঋণ ৩ হাজার ৬৪০ কোটি মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে বলে সংবাদমাধ্যম ফাইন্যান্সিয়াল পোস্ট জানিয়েছে। এছাড়া বিশ্বব্যাংকের পরে আফ্রিকার এই দেশটির বৃহত্তম বিদেশি ঋণদাতা হচ্ছে চীন। একইসঙ্গে কেনিয়ার ২০২১-২২ অর্থবছরের বহিরাগত ঋণ পরিষেবা খরচের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের যোগানও দিয়েছে চীন।

কেনিয়ার মুদ্রার নাম কেনিয়ান শিলিং। ২০২১-২২ অর্থবছরে চীনা ঋণ পরিশোধের জন্য মোট ১১ হাজার ৭৭০ কোটি শিলিং (৯৭২.৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) ব্যয় করেছে কেনিয়া। যার মধ্যে প্রায় ২ হাজার ৪৭০ কোটি শিলিং (২০৪.১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) সুদ পরিশোধে এবং ৯ হাজার ৩০০ কোটি শিলিং (৭৬৮.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) খালাস বাবদ ব্যয় করেছে দেশটি।

ফাইন্যান্সিয়াল পোস্ট বলছে, কেনিয়ার ট্রেজারি প্রকল্পে চীনের এক্সিম ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ আগামী অর্থবছরে ৮০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হবে। যা আগের বছরের ৩৫১.৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের তুলনায় ২০২২ সালে ১২৬.৬১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

উন্নয়নশীল আফ্রো-এশিয়ান দেশগুলোকে ঋণের ফাঁদে ঠেলে দেওয়া নিয়ে চীনের বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ রয়েছে। যদিও বেইজিং সেটি বরাবরই অস্বীকার করে থাকে এবং তারপরও চীনা ঋণের ফাঁদে পড়ে খেলাপি দেশের তালিকায় নতুন প্রবেশকারী নাম হচ্ছে কেনিয়া।

এমনকি ঋণ খেলাপির জন্য গত জুনে শেষ হওয়া অর্থবছরে কেনিয়াকে ১৩১.২ কোটি শিলিং (১০.৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) জরিমানা করেছে চীনের ব্যাংকগুলো। স্ট্যান্ডার্ড গেজ রেলওয়ে (এসজিআর) প্রকল্প নির্মাণের জন্য চীনের কাছ থেকে নেওয়া ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে খেলাপি হয় কেনিয়া।

ফাইন্যান্সিয়াল পোস্ট বলছে, এসজিআর-এর প্রথম ধাপে অর্থায়নের চুক্তি ছিল স্বাধীনতার পর থেকে কেনিয়ার একক কোনো বৃহৎ অবকাঠামো প্রকল্প। এই প্রকল্পে অর্থায়নের মাধ্যমে কেনিয়ার বৃহত্তম দ্বিপাক্ষিক ঋণদাতা হিসেবে জাপানকে ছাড়িয়ে যায় চীন। কিন্তু কেনিয়ার সেই প্রাথমিক উচ্ছ্বাস সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কার্যত অস্থিরতায় পরিণত হয়েছে।

অবশ্য খেলাপি হওয়ার হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করতে চেয়েছিল কেনিয়া। মূলত ঋণ নেওয়ার এক বছরের মাথায় চীনসহ দ্বিপাক্ষিক ঋণদাতাদের কাছে ঋণ পরিশোধের স্থগিতাদেশ আরও ছয় মাস বাড়ানোর জন্য আবেদন করেছিল দেশটি।

কিন্তু ঋণদাতারা- বিশেষ করে এক্সিম ব্যাংক অব চায়না- ঋণ পরিশোধের সময় বাড়ানোর জন্য কেনিয়ার আবেদন গ্রহণ করেনি। যার ফলে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয় এবং চীনা ঋণের মাধ্যমে অর্থায়নকৃত প্রকল্পগুলোতে কাজ বিলম্বিত হয়েছে বলে জানায় ফাইন্যান্সিয়াল পোস্ট।

এছাড়া কোভিড-১৯ লকডাউনের সময় সৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দার কারণে কেনিয়া অবনতিশীল নগদ অর্থপ্রবাহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়। মহামারির এই সময়ে দেশটির রাজস্ব হ্রাস পায় এবং চীন থেকে নেওয়া ঋণ পরিশোধের ক্ষমতা আরও খারাপ হয় কেনিয়ার।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) তথ্য অনুসারে, দায়-দেনার বৃদ্ধি কেনিয়াকে ঋণ সংকটের উচ্চ ঝুঁকিতে ফেলেছে বলে জানিয়েছে ফাইন্যান্সিয়াল পোস্ট।

সংবাদমাধ্যম বলছে, ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত অর্থবছরে সরকারি ঋণের পরিমাণ এক তৃতীয়াংশ বৃদ্ধি পেয়ে রেকর্ড ১ লাখ ৩৯ হাজার কোটি শিলিংয়ে (১১৪০ কোটি মার্কিন ডলার) দাঁড়াবে। যা আফ্রিকার এই দেশটির প্রত্যাশিত রাজস্বের অর্ধেকেরও বেশি।

কেনিয়া গত আর্থিক বছরে করযোগ্য আয়ের প্রায় ৫৭ শতাংশ ঋণ পরিশোধের জন্য ব্যয় করেছে। মূলত কেনিয়ার করদাতারা তাদের পকেট থেকে চীনের কাছে বকেয়া বিশাল ঋণ ফেরত দিতে বাধ্য হয়েছে। কারণ বর্তমানে এসজিআর দিয়ে যে রাজস্ব আয় হচ্ছে তা বার্ষিক পরিচালন ব্যয় মেটাতে এবং ঋণ ফেরত দিতেও যথেষ্ট নয় বলে ফাইন্যান্সিয়াল পোস্ট জানিয়েছে।

চীন বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী গ্রুপ অব টোয়েন্টি বা জি-২০ সদস্য দেশ এবং ঋণ ছাড় চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশ হলেও কেনিয়ার অনুরোধে বেইজিং ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বাড়ায়নি।

সংবাদমাধ্যম বলছে, উন্নয়নশীল দেশগুলোর সাথে চীনের ঋণ চুক্তির শর্তগুলো অস্বাভাবিকভাবে গোপনীয় এবং অন্যান্য ঋণদাতাদের আগে চীনা রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোতে ঋণ পরিশোধকে অগ্রাধিকার দিতে হয় ঋণগ্রহীতাদের।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom