কোরবানীর পশু কাল থেকে শুরু বিক্রী

ট্রাক ভরে হাটে গরু-ছাগল আসা চলমান রয়েছে। তবে হাটে এখনো ক্রেতাদের আনাগোনা শুরু হয়নি।

কোরবানীর পশু কাল থেকে শুরু বিক্রী

প্রথম নিউজ, অনলাইন: ঈদকে সামনে রেখে প্রস্তুত রাজধানীর পশুর হাটগুলো। কিছু জায়গায় শেষ মুহূর্তের মতো কর্মযজ্ঞ চলছে। আগামীকাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে হাটে পশু বিক্রি। ট্রাক ভরে হাটে গরু-ছাগল আসা চলমান রয়েছে। তবে হাটে এখনো ক্রেতাদের আনাগোনা শুরু হয়নি। বিক্রেতারা পশুর দেখভাল করে ব্যস্ত সময় পার করছেন হাটগুলোতে। এ বছরও বাজার পরিস্থিতির উপর পশুর দাম নির্ভর করবে বলে জানান হাটে আসা ব্যবসায়ীরা। তবে তারা বলছেন, আগের চেয়ে এবার তাদের খরচ বেড়েছে। দামও সে অনুযায়ী হতে পারে।

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকার ১৯টি স্থানে কোরবানির পশুর হাট বসবে। এর মধ্যে উত্তর সিটি করপোরেশনে ১০টি এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৯টি স্থানে পশুর হাট বসবে। প্রতি বছরই রাজধানীর আফতাবনগরে ব্যাপক জায়গাজুড়ে বসে অস্থায়ী পশুর হাট। রামপুরার ইস্ট-ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের সড়কটি আফতাবনগরে প্রবেশের পথ। সেখানে বড় করে হাটের প্রবেশ পথ সাজানো রয়েছে। এখান থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার পরই হাটের শুরুর অংশ। 

আফতাবনগরের লোহার ব্রিজ থেকে বটতলা হয়ে তালতলা পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার সড়কজুড়ে এই হাটের অবস্থান। হাটে প্রবেশ করলেই দেখা যায় রাস্তার দুই পাশে ও মাঝ দিয়ে সারি সারি গরু রাখা হয়েছে। এ ছাড়া আশেপাশের খালি জায়গা কিংবা সড়কেও গরু সাজিয়ে রাখা হয়েছে। কিছুক্ষণ পর পরই হাটে ট্রাকভর্তি গরু আসছে। পুরো সড়কেই বৈদ্যুতিক লাইটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নিচু জায়গায় করা হয়েছে বালু ভরাট। তবে কিছু জায়গায় এখনো সামিয়ানা নির্মাণ, শেড নির্মাণ, বাঁশ লাগানোর কাজ চলছে। হাসিল ঘর নির্মাণ ও ব্যাংকের বুথ নির্মাণের কাজ এখনো চলছে। 

আফতাবনগরের অস্থায়ী পশুর হাট বসা নিয়ে আইনি জটিলতা ছিল। পরবর্তীতে সেই বাধা কাটলেও সময় স্বল্পতার কারণে এই হাটের প্রস্তুতিতে কিছুটা পিছিয়ে পড়েছে সংশ্লিষ্টরা। গত ২রা মে কোরবানির পশুর অস্থায়ী হাটের ইজারার বিজ্ঞপ্তি দেয় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। এই তালিকা থেকে আফতাবনগরের নাম বাদ দিতে মেয়রের কাছে আবেদন করেন ওই এলাকার বাসিন্দারা। আবেদনে সাড়া না পেয়ে গত ১১ই মে স্থানীয় সরকার সচিব, উত্তর সিটি করপোরেশন মেয়র, রাজউকের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের আইনি নোটিশ দেন তারা। তাতেও কাজ না হওয়ায় গত ১৮ই মে বাসিন্দাদের পক্ষ থেকে হাইকোর্টে জনস্বার্থে রিট করা হয়। সে রিটের প্রাথমিক শুনানির পর হাইকোর্ট ইজারা বিজ্ঞপ্তির কার্যক্রম এক সপ্তাহ স্থগিত করে বিজ্ঞপ্তিটির বৈধতা প্রশ্নে রুল দেন। 

আফতাবনগরে কোরবানির পশুর অস্থায়ী হাট বসানোর জন্য ইজারার বিজ্ঞপ্তি কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, জানতে চাওয়া হয় রুলে। এক সপ্তাহের স্থগিতাদেশ শেষ হওয়ার আগে রিটকারী পক্ষের অবেদনে গত ২৮ই মে স্থগিতাদেশের মেয়াদ দুই মাস বাড়ানো হয়। এরপর হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন (লিভ টু আপিল) করে সিটি করপোরেশন। এ আবেদনের শুনানির পরই হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ স্থগিত করে আপিল বিভাগ। গত ১৪ই জুনের আদেশের ফলে আফতাবনগরে পশুর হাট বসাতে আইনগত বাধা কেটে যায়। এরপর থেকে হাট প্রস্তুত করাসহ অন্যান্য কাজ এগিয়ে নেয়ার বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে শুরু করেন ইজারাদারের লোকজন।

রাজধানীর সবচেয়ে বড় হাট গাবতলীতেও কোরবানির ঈদ উপলক্ষে লক্ষ লক্ষ পশু বেচাকেনা হয়। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সেখানে পাশু আসে। গাবতলী পশুর হাটের স্থায়ী অংশের পাশাপাশি অস্থায়ী অংশেও করা হয় পশু বিক্রির ব্যবস্থা। সেই অংশের প্রস্তুতিও প্রায় শেষ। ইতিমধ্যে বিভিন্ন জেলা থেকে গরু-ছাগলসহ কোরবানির পশু আসা শুরু হয়েছে। তবে ক্রেতাদের উপস্থিতি না থাকায় বিক্রি শুরু হয়নি। গাবতলী প্রধান সড়কের পাশে মূল গেটসহ স্থায়ী হাটের প্রস্তুতি সম্পূর্ণভাবে শেষ। ৩টি ওয়াচ টাওয়ারসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ব্যাংকগুলোর জন্য বুথ তৈরির কাজও শেষ করেছে হাট কর্তৃপক্ষ। তবে হাটের অস্থায়ী অংশে গরু রাখার শেড তৈরির কাজও শেষ দিকে। টানানো হয়েছে বাঁশের তৈরি অবকাঠামো ত্রিপল ও শামিয়ানা। হাটের আলোকসজ্জার কাজও প্রায় শেষের দিকে। 

চুয়াডাঙ্গা থেকে আফতাবনগর গরুর হাটে গত মঙ্গলবার ৪০ জন মিলে ৬০টি গরু এনেছেন। তাদের একজন সবুজ। তিনি বলেন, আমাদের ১-৩ লাখ টাকা পর্যন্ত দামের গরু আছে। এগুলো মাঝারি সাইজের। এখনো বেচাকেনা শুরু হয় নাই। কিন্তু আমাদের এই কয়দিন থাকা খাওয়াতে অনেক টাকা খরচ হইছে। গরুর ভালো দাম না পেলে লস হবে। পাবনা থেকে ১৮টি গরু এনেছেন খলিলুর রহমান। তার কাছে গরুর দাম প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তা এখনই ধারণা করা যাচ্ছে না বলে জানান। খলিলুর বলেন, এবার আমাদের খরচ বেড়েছে। গরুর ভুসির দাম বেশি। গত বছর ১৭০০ টাকায় ভুসি কিনছি। এবার তা ২২০০ টাকা করে। গরু কিনতেও বেশি খরচ হয়েছে। ঢাকায় আনার ট্রাক ভাড়াও বেশি লাগছে। কিন্তু দাম কেমন হবে সেটা বাজার জমজমাট না হলে বোঝা যাবে না। কুষ্টিয়ার মিলন বলেন, আগে মণ ২৫০০০-২৬০০০ টাকা ছিল। এবার আমাদের ৩০০০০-৩২০০০ টাকা মণ হিসাবে গরু কিনতে হইছে। এক লাখ টাকার গরুতে ১০-১২ হাজার টাকা বেশি খরচ হইছে এবার। 

রাজধানীর হাটে অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা রোধে হাটে থাকছে সিটি করপোরেশনের মনিটরিং সেল। রাজধানীর প্রতিটি পশুর হাটে জাল নোট শনাক্তের মেশিনও রাখা হবে। হাটের সার্বিক নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।