‘জনগণের সম্পদ বিক্রি করে ক্ষমতায় থাকব সেই বাপের বেটি আমি নই’
শুক্রবার বিকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
প্রথম নিউজ, অনলাইন: আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠাই হয়েছে জনগণের দ্বারা, জনগণের জন্য। জনগণের সেবা করাই আওয়ামী লীগের কাজ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমরা অনেক দূর এগিয়ে গেছি। ২০২৬ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পাব। তিনি বলেন, আমাদের উৎপাদন বৃদ্ধি অব্যাহত রাখতে হবে। সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি অব্যাহত রাখতে হবে। অর্থনৈতিক সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি করতে হবে। একটু দুঃসময় যাচ্ছে, আমি জানি। মানুষের কষ্ট লাঘবের জন্য আমাদের প্রাণপণ চেষ্টা চলছে। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, জনগণের সম্পদ বিক্রি করে ক্ষমতায় থাকব- সেই বাপের বেটি আমি নই। শুক্রবার বিকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমল এবং আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তিন মেয়াদে উন্নয়নের তুলনামূলক চিত্র জাতির সামনে তুলে ধরেন। শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির আমলে প্রবৃদ্ধি ছিল শতকরা পাঁচ ভাগ, আমরা সেটাকে ৭ দশমিক ২৭ ভাগে উন্নীত করেছিলাম। কিন্তু কোভিডের কারণে কিছুটা কমলেও গড়ে ৬ ভাগ প্রবৃদ্ধি রাখতে সক্ষম হয়েছি। বিএনপির আমলে মাথাপিছু আয় ছিল মাত্র ৫৪৩ ডলার, এখন সেটা দুই হাজার ৭৩৫ ডলারে উন্নীত হয়েছে। বিএনপির আমলে মূল্যস্ফীতি ১০ ভাগের ওপরে ছিল, আমরা তা ৫ দশমিক ৫ ভাগে নামিয়ে এনেছিলাম। কিন্তু বর্তমান যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে তা ৮-৯ ভাগে বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা তা কমানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, কেউ ভূমিহীন-গৃহহীন থাকবে না। কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে ৩০ প্রকারের ওষুধ বিনামূল্যে দিচ্ছি। এখন ইনসুলিনও বিনামূল্যে দেওয়া শুরু করেছি। মানুষের প্রতিটি মৌলিক চাহিদা পূরণ করে যাচ্ছি। তিনি বলেন, বাংলাদেশকে নিয়ে আর যেন কেউ ছিনিমিনি খেলতে না পারে। আমি জানি অনেক চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র আছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে জনগণ লাভবান হয়, তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়- সেটা প্রমাণিত সত্য। আওয়ামী লীগ আছে বলে, নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছে বলেই মানুষের পরিবর্তন এসেছে। এখন তো কাউকে আর খালি পায়ে, কাদা পায়ে হাঁটতে হয় না। সবার অন্তত একটা রাবারের চপ্পল হলেও আছে। পরনের কাপড়ও আছে। আমি ১৯৮১ সালে বাংলাদেশ ঘুরে যা দেখেছি (এখন তার থেকে) তার আমূল পরিবর্তন হয়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না এলে এই পরিবর্তনটা কোনোদিনই হতো না।
চাহিদা যখন বাড়াতে পারছি পূরণও করতে পারব : দরিদ্রদের দিকে বিত্তশালীদের খেয়াল রাখার আহ্বান জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, আমরা কিন্তু বস্তিবাসীকেও ফ্ল্যাট তৈরি করে দিয়েছি। পরিচ্ছন্নতাকর্মীদেরও ফ্ল্যাট তৈরি করে দিচ্ছি। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে যারা ঘরবাড়ি হারিয়েছে তাদেরও করে দিচ্ছি। কোনো মানুষ অস্বাস্থ্যকরভাবে থাকবে না। ঘরবাড়ি করে দিয়ে সবাইকে সুন্দরভাবে বাঁচার ব্যবস্থা আমরা করে দিচ্ছি, করে দেব। এটাই হবে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আওয়ামী লীগের প্রতিজ্ঞা। জাতির পিতার স্বপ্ন ইনশাআল্লাহ আমরা বাস্তবায়ন করব।
শেখ হাসিনা বলেন, এক সময় মানুষ নুনভাত, ডালভাতের কথা বলত। আমরা মানুষকে এমন পর্যায়ে আনতে পারছি যে, এখন নুনভাত-ডালভাত নয়, মানুষ মাংস পাচ্ছে না সেটাই কথা আসছে। নুনভাত, ডালভাত থেকে মাংস-ভাতে উঠে আসছে। চাহিদাটা বাড়াতে পেরেছি। আর চাহিদা যখন বাড়াতে পারছি সেটা পূর্ণ করতেও পারব।
সন্ত্রাস-নির্যাতন করে ভেবেছিল ক্ষমতা চিরস্থায়ী করবে : ২০০১ সালের নির্বাচনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই নির্বাচনের আগে গ্যাস বিক্রির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। আমরা রাজি না হলেও খালেদা জিয়া গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়েছিল। আমি স্পষ্ট বলেছিলাম, গ্যাস দেশের সম্পদ। জনগণের সম্পদ বিক্রি করে ক্ষমতায় থাকব সেই বাপের বেটি আমি নই। মুচলেকা দেইনি বলে ক্ষমতায় আসতে পারলাম না। বিএনপি ক্ষমতায় গিয়ে একাত্তরের কায়দায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন চালায়। মা-বোনদের ওপর চালানো হয় পাশবিক নির্যাতন।
তিনি বলেন, ওই দুঃসময়ে ছুটে গেছি নির্যাতিত মানুষের কাছে। কিন্তু সেখানেও বোমা, গ্রেনেড হামলা। তারা সন্ত্রাস-নির্যাতন ও দেশের টাকা লুণ্ঠন করে ভেবেছিল ক্ষমতা চিরস্থায়ী করবে। কিন্তু দেশের জনগণ তা মেনে নেয়নি, ছেড়ে দেয়নি। ’৯৬ সালে ভোট চুরির অপরাধে একবার এবং ২০০১ সালে ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে নানা টালবাহানার কারণে জনগণ আন্দোলন করে খালেদা জিয়াকে পদত্যাগে বাধ্য করেছিল।
সারা বিশ্বে প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়ে গেছে : প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্ষমতায় আসার শুরু থেকেই সুষ্ঠু পরিকল্পনা নিয়ে দেশের উন্নয়নে কাজ শুরু করেছিলাম বলেই আজকের এই বাংলাদেশ। বিএনপির আমলে দেশের অবস্থা কোথায় ছিল, আজ কোথায় এসে দাঁড়িয়েছে- সবাই একটু বিচার করুন। আমরা এখন উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। যদি কোভিড-১৯ মহামারি না হতো তা হলে দেশ আরও এগিয়ে যেত। সেই সংকট যখন আমরা উত্তরণ করে এগিয়ে যাচ্ছিলাম তখনই এলো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, স্যাংশন-পালটা স্যাংশন। সারা বিশ্বে প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। যার আঘাত আমাদের দেশে এসেও পড়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ২৩ জুন তারিখটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৪৯ সালের এই দিনে আওয়ামী লীগের জন্ম হয়েছিল পুরান ঢাকার রোজ গার্ডেনে। আওয়ামী লীগের হাত ধরেই জাতির পিতার নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ অর্জিত হয়। ১৭৫৭ সালের এই ২৩ জুনে পলাশীর আম্রকাননে যে স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়েছিল, সেই স্বাধীনতার সূর্য উদিত হয়েছিল আওয়ামী লীগের জন্মের মধ্য দিয়েই। তিনি আরও বলেন, দেশের প্রতিটি অর্জনই এসেছে আওয়ামী লীগের হাত ধরে।
আমাদের বিচার চাওয়ার অধিকারও কেড়ে নেওয়া হয় : শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু এ দেশের মানুষকে গভীরভাবে ভালোবাসতেন। তিনি কোনোদিন বিশ্বাসই করতেন না যে, এ দেশের মানুষ তাকে হত্যা করবে। অনেকেই বঙ্গবন্ধুকে সতর্ক করেছিলেন, কিন্তু তিনি তা বিশ্বাস করেননি। তাকেই নির্মমভাবে হত্যা করা হলো। আজ অনেকে মানবাধিকার নিয়ে কথা বলেন। কিন্তু জাতির পিতা হত্যার পর আমাদের বিচার চাওয়ার অধিকারটুকুও কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। যেন আমাদের কোনো মানবাধিকার নেই। এ সময় ১৯৮১ সালে তার দেশে ফেরার স্মৃতিচারণ করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। তিনি বলেন, জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণের প্রতিজ্ঞা নিয়েই কাজ শুরু করেছিলাম। সেই বাংলাদেশকে আমরা আজ কোথায় নিয়ে এসেছি তা একটু বিচার করে দেখুন।