কানাডায় বিদেশি শিক্ষার্থী কমে যাওয়ার আশঙ্কা
ভারতের সঙ্গে উত্তেজনা বৃদ্ধি
প্রথম নিউজ, অনলাইন ডেস্ক: ভারতের সঙ্গে উত্তেজনা বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে কানাডায় বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কানাডার শিক্ষা ব্যবস্থায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণ তহবিলের সংস্থান হয় এ খাত থেকে। কিন্তু নয়া দিল্লি ও অটোয়ার মধ্যে শিখ নেতা হরদিপ সিং নিজার হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে যে কূটনৈতিক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে তাতে দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বুধবার ভারত সরকার কানাডায় অবস্থানকারী ভারতীয় শিক্ষার্থীদের সতর্ক করে একটি সতর্কতা দিয়েছে। এতে কানাডায় ক্রমবর্ধমান ভারতবিরোধী এবং সহিংস কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরা হয়েছে। মূলত ভ্রমণ সতর্কতায় ভারতীয় শিক্ষার্থী এবং সাধারণ নাগরিকদের সতর্কতা অবলম্বনের জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। তবে তারা কানাডা সফর পুরোপুরি বন্ধের সুপারিশ করেনি। এর পরিবর্তে তারা অবনতিশীল নিরাপত্তা পরিবেশে শিক্ষার্থীদের সতর্ক করেছে। যেসব অঞ্চল বা ভেনু ‘ভারতবিরোধী এজেন্ডা’ধারীদের টার্গেটে পরিণত হয়েছে, সেখানে সফরের বিরুদ্ধে পরামর্শ দিয়েছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন গ্লোব অ্যান্ড মেইল।
কানাডিয়ান ব্যুরো ফর ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশনের তথ্যমতে, কানাডায় পড়াশোনা করেন কমপক্ষে ৮ লাখ বিদেশি শিক্ষার্থী। তার মধ্যে শতকরা প্রায় ৪০ ভাগই ভারতের। বিদেশি শিক্ষার্থীর হিসাবে ভারতই এক নম্বরে। অর্থাৎ সবচেয়ে বেশি বিদেশি শিক্ষার্থী ভারতের। এরপরে আছে চীন। তাদের শতকরা হার প্রায় ১২। তৃতীয় স্থানে আছে ফিলিপাইন। তাদের শতকরা হার ৪। অন্টারিওতে কমপক্ষে ৬টি কলেজ আছে, যেখানে কানাডার শিক্ষার্থীর চেয়ে ভারতীয় শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি। কানাডার শিক্ষার্থীদের জন্য পড়াশোনা খাতে যে পরিমাণ খরচ, তার কয়েক গুন বেশি খরচ বিদেশি শিক্ষার্থীদের। এ জন্য পোস্টসেকেন্ডারি স্কুলগুলো অর্থ সংস্থানের একটি অত্যাবশ্যক খাত হয়ে উঠেছে।
ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির শিক্ষা বিষয়ক প্রফেসর রুপা দেসাই ত্রিলোকেকার বলেন, কানাডা ও ভারতের মধ্যে যদি এই কূটনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধি পেতেই থাকে, তাহলে বেশ কিছু ঝুঁকি আছে। ভারত সরকার তার শিক্ষার্থীদেরকে কানাডায় আবেদন করতে অনুৎসাহিত করতে পারে। এমনই ঘটনা ১০ বছর আগে ঘটেছিল অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে। সেখানে ভারতীয় শিক্ষার্থীদের টার্গেট করার পর এমন অবস্থা হয়েছিল। তারপর অস্ট্রেলিয়ায় শিক্ষার্থীদের পড়তে চেয়ে আবেদন উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়। তিনি আরও বলেন, কানাডায় পড়তে যাওয়ার পর অনেক শিক্ষার্থী আবাসন ও কর্মপরিবেশের জটিলতা দেখেন। এ জন্য ভারতে একটি নেতিবাচক প্রভাব আছে। কূটনৈতিক বিরোধিতা এসব বিষয়কে আরও গভীর করবে। এখন এ দুটি সরকারের কোনো একটি সরকারিভাবে কি অবস্থান নেবে, তার ওপর পরিস্থিতি নির্ভর করছে।
অন্টারিওতে বিদেশি শিক্ষার্থী রিক্রুটার গৌতম কোল্লুরি বলেন, তিনি এরই মধ্যে কিছু শিক্ষার্থীর কাছ থেকে উদ্বেগের কথা শুনেছেন। তাদেরকে বলা হয়েছে, স্বাধীন খালিস্তান আন্দোলনের সমর্থকরা কানাডায় ভারতীয় শিক্ষার্থীদের ওপর আক্রমণ চালাতে পারে। তিনি মনে করেন না যে, কূটনৈতিক এই বিরোধকে কেন্দ্র করে কানাডায় পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমবে। গৌতম কোল্লুরি বলেন, ভারত থেকে শিক্ষার্থীদের পড়তে আসার ডিমান্ড অনেক বেশি। সৌদি আরব যেমন ২০১৮ সালে কানাডার সঙ্গে কূটনৈতিক বিরোধের সময় সরকারি তহবিল ব্যবহার করে বৃত্তি দিয়েছিল, ভারত সরকারের কাছে সেই ম্যাকানিজম নেই।
ইন্টারন্যাশনাল শিখ স্টুডেন্টস এসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা যশপ্রিত সিং মনে করেন না যে, রাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে কানাডায় বিদেশি শিখ শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তিনি বলেন, ভারত আকস্মিকভাবে অভিবাসনের পথ বন্ধ করবে বলে মনে হয় না। যদি তা করার চেষ্টা করে, তাহলে তার ভীষণ বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় পড়বে তারা।