একতরফা দ্বাদশ নির্বাচনে বাংলাদেশ স্বতন্ত্র প্রার্থী ঐক্য পরিষদ অংশ নিবে না

একতরফা দ্বাদশ নির্বাচনে বাংলাদেশ  স্বতন্ত্র প্রার্থী ঐক্য পরিষদ অংশ নিবে না

প্রথম নিউজ, ঢাকা:  দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নেয়ার ঘোষণা দিয়ে অবিলম্বে তপশিল বাতিল করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দেয়ার দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ স্বতন্ত্র প্রার্থী ঐক্য পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মো. আব্দুর রহিম।

আজ শনিবার (২৫ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর বিজয় স্মরনিস্থ ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি জানান।  সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আলহাজ্ব মো. আব্দুর রহিম বলেন, নির্বাচন কমিশন (সিইসি) দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করেছে। তপশিল অনুযায়ী ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আসন্ন এই নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ বেশ কয়েকটি দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। অপরদিকে বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দল নির্বাচনে অংশ না নিয়ে সরকার পতনের একদফা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। তপশিল ঘোষণা করার আগে আমরা সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে সকল দলের সঙ্গে আলোচনা/সংলাপ করে তপশিল দেয়ার আহ্বান জানিয়েছিলাম। যুক্তরাষ্ট্র থেকেও শর্তহীন সংলাপের আহ্বান জানিয়েছিল। কিন্তু সরকার ও নির্বাচন কমিশন সেই সংলাপকে গুরুত্ব না দিয়ে তপশিল ঘোষণা করে দিয়েছে। এতে দেশের মানুষ যেমন হতাশ হয়েছে। তেমনি বাংলাদেশ স্বতন্ত্র প্রার্থী ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকেও আমরা হতাশ হয়েছি।  সংবাদ সম্মেলনে আব্দুর রহিম বলেন, বিগত ২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এ নিয়ে জনমনে অসন্তোষ রয়েছে। গত দুইটি জাতীয় নির্বাচনে জনগণ তাদের ভোটাধিকার সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে পারেনি। নির্বাচন কমিশনের পক্ষেও দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব হয় না। এবারও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তপশিল ইতোমধ্যে ঘোষণা করা হয়েছে। জনগণের আশঙ্কা আগামী ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনেও তারা ভোটাধিকার বঞ্চিত হবে। সরকার ও নির্বাচন কমিশন বিরোধী দলগুলোর দাবিকে উপেক্ষা করে তফসিল ঘোষণা করেছে। বিরোধী দলগুলোর হরতাল অবরোধে দেশ অচল হয়ে পড়ছে। সাধারণ মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। সব মিলিয়ে দেশে দীর্ঘদিনযাবৎ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আস্থা ও অবিশ্বাস চরম আকার ধারণ করেছে। একদিকে সরকারি দলগুলো ভোট উৎসবে মেতে উঠেছে। অপরদিকে, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে সাজা দিচ্ছে। হামলা চালাচ্ছে। কেউ প্রকাশ্যে বের হতে পারছে না। আমাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়েও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়েছে। সুতরাং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বলে কিছু নেই। এমতাবস্থায় বিরোধী দলগুলোর দাবিকে উপেক্ষা করে সরকার আগামী ৭ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচন করলে দেশ আরো মহাসংকটে পড়বে। কাজেই একতরফা এই তপশিল বাতিল করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দেয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি। তানাহলে আসন্ন এই নির্বাচন ঘিরে যদি কোনো সহিংস ঘটনা ঘটে কিংবা দেশের কোনো ক্ষতি হয় তার সকল দায় সরকারকেই বহন করতে হবে। 

শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাদের এর সন্তান আলহাজ্ব মো. আব্দুর রহিম বলেন, আমি শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। আমার দুই মামও মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন। মানুষের অধিকার ও মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ স্বতন্ত্র প্রার্থী ঐক্য পরিষদ বিগত ৫ বছর আগে ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত করা হয়। সারাদেশ থেকে সৎ ও ভাল মানুষ যারা সংসদ নির্বাচনসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে বা করবে তাদের পাশে থাকাই ঐক্য পরিষদের মূল লক্ষ্য। আশা করি, আগামী সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ৩০০ আসনে সৎ ও যোগ্য প্রার্থী নির্বাচিত হয়ে সুশাসন ও মানবিক বাংলাদেশ গড়তে সক্ষম হবো। সেই লক্ষেই আমরা আমাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু দুঃখজনক যে, সরকার এবারও পূর্বের ন্যায় একতরফা নির্বাচন করার পায়তারা করছে। এজন্য আমরা দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি না। আমরা তপশিল বাতিল করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবি জানাচ্ছি। ইতোমধ্যে আমরা তপশিল বাতিল করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দেয়ার জন্য রাষ্ট্রপতি ও নির্বাচন কমিশনের কাছে আহ্বান জানিয়ে চিঠি দিয়েছি। আশাকরি, দেশ ও জনগণের স্বার্থে রাষ্ট্রপতি ও সিইসি ঘোষিত তপশিল বাতিল করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে। 

তিনি আরো বলেন, আমরা সারাদেশের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জনগণের মতামত নিয়ে সার্বিক পর্যালোচনা করে আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এর আগে গত ১৭ নভেম্বর জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছিলাম স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জনগণের মতামত নিয়ে আমরা র্নিবাচনে অংশ গ্রহণ করবো নাকি করবো না। আমরা আজ সেই সিদ্ধান্ত জানালাম। তবে, আমাদের নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবি উপেক্ষা করে যদি সরকার নির্বাচন করে তাহলে আমরা মনিটরিং করে নির্বাচনের সার্বিক চিত্র জাতির সামনে তুলে ধরবো। 

এসময় সংবাদ সম্মেলনে আইনুল হক, মো. আকবর হোসেন ফাইটনসহ বাংলাদেশ স্বতন্ত্র প্রার্থী ঐক্য পরিষদের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।