ইন্টারনেট শাটডাউন করে জনগণের মৌলিক অধিকারসমুহ খর্বকারীদের বিচার হবে: ওয়াহিদুজ্জামান
আজ রবিবার এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রথম নিউজ, ঢাকা: বিএনপি ভবিষ্যতে ক্ষমতায় গেলে, ইন্টারনেট শাটডাউনের মাধ্যমে জনগণের মৌলিক অধিকারসমুহ খর্ব করার সাথে জড়িত ব্যাক্তিদের উপযুক্ত আদালতে বিচার করবে বলে জানিয়েছেন দলের তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এ কে এম ওয়াহিদুজ্জামান।
আজ রবিবার এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।
এ কে এম ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, আওয়ামী লীগের দীর্ঘ ১৫ বছরের দুঃশাসনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর অজস্র নেতা কর্মী গুম, বলপূর্বক অপহরণ, নির্যাতন—নিপীড়ন, হামলা, মামলা ও আইনি হয়রানীর শিকার হয়েছে। এতকিছু সত্ত্বেও সারা দেশের বিএনপির নেতা কর্মীরা মনোবল হারায়নি। বরং তারা আরও একতাবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদ সমাবেশের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ ও অনতিবিলম্বে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবী করছে। এমতাবস্থায় আওয়ামী লীগ সরকার নিত্য নতুন দমন পীড়নের পন্থা বেছে নিচ্ছে যার সর্বশেষ সংযোজন হল ‘ইন্টারনেট শাটডাউন’ (ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রন)। সাধারণত ‘ব্ল্যাকআউট’, ‘থ্রটলিং’ এবং ‘সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ব্লক’, এই তিন প্রকারে ইন্টারনেট শাটডাউন করা হয়। বিএনপি কর্তৃক আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশগুলোর স্থানগুলোতে সমাবেশ চলাকালীন সময়ে ইন্টারনেট ‘ব্ল্যাকআউট’ এবং ‘থ্রটলিং’ এর ঘটনা পরিলক্ষিত হচ্ছে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সংবাদ মোতাবেক জানা যাচ্ছে যে বাংলাদেশি মোবাইল ফোন অপারেটরদেরকে আওয়ামী লীগ সরকার বাধ্য করছে ‘ব্ল্যাকআউট’ এবং ‘থ্রটলিং’ করার জন্য।
তিনি বলেন, বিশ্বজুড়ে ইন্টারনেট শাটডাউনের বিরুদ্ধে ১০৫ টি দেশে মাঠ পর্যায়ে কাজ করা ২৪০টিরও বেশি সংস্থার বৈশ্বিক জোট #কববঢ়ওঃঙহ এর মতে ইন্টারনেট শাটডাউন হলো ‘তথ্য প্রবাহ নিয়ন্ত্রনের জন্য ইন্টারনেট বা ইলেকট্রনিক মাধ্যমে যোগাযোগের ক্ষেত্রে ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যাঘাত ঘটানোর প্রচেষ্টা, যার ফলে কোন নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠী বা কোন নির্দিষ্ট স্থানের নাগরিকদের ইন্টারনেট সুবিধাকে কার্যকরভাবে অব্যাবহারযোগ্য করে তোলা হয়’। ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট মানে হলো ইন্টারনেট যোগাযোগ পুরোপুরি বন্ধ করা। ইন্টারনেট থ্রটলিং মানে হচ্ছে ইন্টারনেট যোগাযোগ পুরোপুরি বন্ধ না করে এর গতি কমিয়ে দেয়া, যেমন ফোর—জি মোবাইল ডেটা সার্ভিস থেকে টু—জি গতির নেটওয়ার্ক করে দেয়া যেন কেউ ভিডিও শেয়ার, লাইভস্ট্রিম বা অনলাইনে কল না করতে পারে।
‘ব্ল্যাকআউট’ এবং ‘থ্রটলিং’ জনগণের তথ্য জানার অধিকারকে খর্ব করে। অবাধ তথ্য প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হলে তা গুজব ও ভুল তথ্যকে অনলাইনে ছড়িয়ে পরতে সহায়তা করে, যা একসময় রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় সহিংসতাকে উস্কে দিতে পারে। সরকারের অবাধ নজরদারির ঝুঁকির মধ্যে থাকা রাজনৈতিক দলগুলো আজকাল নেতা—কর্মীদের সাথে নিরাপদ যোগাযোগের জন্য ইন্টারনেটকে কার্যকর মাধ্যম হিসেবে ব্যাবহার করে। ‘ব্ল্যাকআউট’ এবং ‘থ্রটলিং’ সেই দলীয় যোগাযোগের মধ্যে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে চলাফেরার স্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সভা—সমাবেশের স্বাধীনতার মতন মৌলিক স্বাধীনতাকে লঙ্ঘন করে। ইন্টারনেট শাটডাউন একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের পথে অন্তরায়। সর্বোপরি, ইন্টারনেট শাটডাউন গণতান্ত্রিক অধিকারগুলোকে সীমিত বা খর্ব করার মাধ্যমে একটি দেশকে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।
তিনি আরো বলেন, ২০০৩ সালের ডিসেম্বরে, জাতিসংঘের পৃষ্ঠপোষকতায় ওয়ার্ল্ড সামিট অন দ্য ইনফরমেশন সোসাইটি (ডব্লিউএসআইএস) এর সিদ্ধান্ত এবং ২০১১ সালে মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রচার ও সুরক্ষা সম্পর্কিত জাতিসংঘের বিশেষ র্যাপোটিয়ার এর প্রতিবেদন অনুযায়ী— ইন্টারনেট সংযোগ প্রাপ্তির অধিকার মৌলিক মানবাধিকারের অংশ; কারণ — মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং অন্যান্য মৌলিক অধিকার প্রয়োগ করার জন্য ইন্টারনেট সংযোগের প্রয়োজন হয়। নাগরিকদের ইন্টারনেট সংযোগের অধিকার নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের একটি দাযি়ত্ব। কোন নাগরিকের ইন্টারনেট সংযোগের অধিকার অযৌক্তিকভাবে খর্ব করা বা সীমাবদ্ধ করার মত মানবাধিকার বিরোধী কাজ রাষ্ট্রের করা উচিত নয়।
বিবৃতিতে এ কে এম ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, এমতাবস্থায় বিএনপি সমাবেশ চলাকালীন সময়ে সরকার কর্তৃক ইন্টারনেট শাটডাউনের বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিবাদ জানাচ্ছে। বিএনপি ভবিষ্যতে ক্ষমতায় গেলে, ইন্টারনেট শাটডাউনের মাধ্যমে জনগণের মৌলিক অধিকারসমুহ খর্ব করার সাথে জড়িত ব্যাক্তিদের উপযুক্ত আদালতে বিচার করবে। একইসাথে, বিএনপি বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ সেবা প্রদানকারী সকল টেলিকম অপারেটরদেরকে ইন্টারনেট শাটডাউন করা থেকে বিরত থাকতে এবং সরকার কর্তৃক ইন্টারনেট শাটডাউন করার সকল নির্দেশ জনসম্মুখে প্রকাশ করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছে।