৯ সমস্যায় প্রবাসীদের ভোটার কার্যক্রম

 ৯ সমস্যায় প্রবাসীদের ভোটার কার্যক্রম

প্রথম নিউজ, ঢাকা : নির্বাচন কমিশনের অধীনে প্রবাসীদের জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন কার্যক্রমে ৯ সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন ইসি কর্মকর্তারা। এক্ষেত্রে সমস্যাগুলো সমাধানে দ্রুত কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, সিনিয়র জেলা ও জেলা নির্বাচন অফিসাররা।

সম্প্রতি আঞ্চলিক, সিনিয়র জেলা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের সঙ্গে ‘চলমান প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটার নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান কার্যক্রম’ বিষয়ে সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার কার্যবিবরণী থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

সভায় এনআইডি মহাপরিচালক এ কে এম হুমায়ূন কবীর সভাপতিত্ব করেন। সভায় এনআইডির প্রবাসী অধিশাখা থেকে প্রবাসী নিবন্ধনের ক্ষেত্রে বিদ্যমান সমস্যার বিষয়ে আলোচনা করা হয়।

প্রবাসী ভোটার কার্যক্রমের নয় সমস্যা

১. মাঠপর্যায়ে সংশ্লিষ্ট রেজিস্ট্রেশন অফিসার (উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসার) তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আবেদন ফরম ছাড়া প্রাসঙ্গিক অন্যান্য দলিলাদি (যেমন- পাসপোর্ট, অনলাইন জন্ম সনদ) দেখতে পায় না।

২. আবেদনকারী তার আবেদনকালে দেশে তার পক্ষে সংশ্লিষ্ট রেজিস্ট্রেশন অফিসারকে বিভিন্ন তথ্য দিয়ে সহায়তা করার জন্য একজন কনটাক্ট পার্সনের নাম, ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর দিয়ে থাকেন। অনেক সময় মোবাইল নম্বর ভুল বা বন্ধ থাকার কারণে যোগাযোগ করা সম্ভব হয় না।

৩. বিদ্যমান সিস্টেমে ফরম-২(ক) ফরম আকারেই ডাউনলোড করার সুযোগ নেই।

৪. বর্তমান বিভিন্ন স্ট্যাটাস অনুসারে প্রবাসী আবেদন সংখ্যা বের করতে হলে তা ম্যানুয়ালি করতে হয়। যা শ্রম ও সময় সাপেক্ষ বিষয়।৫. বর্তমানে প্রযোজ্য দলিলাদি প্রাপ্তি সাপেক্ষে তদন্ত শেষে ভোটারযোগ্য হলে অনুমোদন ও অযোগ্য হলে বাতিল করা হয়। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে প্রযোজ্য দলিলাদি আবেদনকারী সময়মত সরবরাহ করতে পারেন না। সেগুলোকেও বাতিল হিসেবে প্রতিবেদন দেওয়া হয়, তাই জটিলতা সৃষ্টি হয়। কারণ পরবর্তী সময়ে দলিলাদি সরবরাহ করা হলেও তার আবেদনটি বাতিল হওয়ায় পুনরায় আবেদন ছাড়া তা প্রক্রিয়াকরণ সম্ভব হয় না।

৬. বর্তমানে সংযুক্ত আরব আমিরতের দুটি স্থান (আবুধাবি ও দুবাই) থেকে রেজিস্ট্রশন ও তদন্ত পরবর্তী ডাটা আপলোড হচ্ছে। সিস্টেমে শুধুমাত্র দেশভিত্তিক সার্চ করা যায়। ভবিষ্যতে বড় আকারে এ কার্যক্রম শুরু হলেও বিভিন্ন দেশরে একাধিক পয়েন্ট থেকে ডাটা আপলোড করা হলে স্মার্ট কার্ড মুদ্রণ ও সংশ্লিষ্ট দূতাবাসে পাঠানোর ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি হবে।

৭. অনেক সময় সংশ্লিষ্ট দেশে চলমান প্রবাসী নিবন্ধন কার্যক্রমের ক্ষেত্রে কি কি সমস্যা হচ্ছে তা সমন্বয়হীনতার কারণে সঠিকভাবে জানা যায় না।

৮. বিদেশে বসবাসরত অনেক বাংলাদেশি নাগরিক রয়েছেন, যারা আগে পেপার লেমিনেটেড এনআইডি কার্ড পেয়েছেন, কিন্তু স্মার্ট এনআইডি কার্ড পাননি।

৯. বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন থেকে সংশ্লিষ্ট দূতাবাসে পাঠানো জাতীয় পরিচয়পত্রসমূহ সংশ্লিষ্ট নাগরিকদের মধ্যে বিতরণের ক্ষেত্রে অব্যবস্থাপনা হতে পারে।

এর আগে, সংযুক্ত আরব আমিরাতে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকদের ভোটার নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় বর্তমান নির্বাচন কমিশন। এরই ধারাবাহিকতায় মে মাসে ইসির নিজস্ব টিমের (কারিগরি ও প্রশাসনিক) সহযোগিতায় দূতাবাস সংশ্লিষ্ট জনবলকে এ বিষয়ে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ, যন্ত্রপাতি স্থাপন, নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা, স্থানীয় মোবাইল নম্বরে এসএমএস পাঠানোসহ প্রয়োজনীয় কার্যক্রম নেওয়া হয়। এরপর জুনে আবুধাবিতে বাংলাদেশ দূতাবাস ও দুবাইয়ে বাংলাদেশ কনস্যুলেটের মাধ্যমে পরীক্ষামূলক কার্যক্রম চালু হয়।

সর্বপ্রথম ১৫ বছর আগে ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন শুরুর সময় থেকে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটার করা ও এনআইডি দেওয়ার দাবি ওঠে। দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটার নিবন্ধন নিয়ে নানা ধরনের জটিলতা পেরিয়ে কে এম নূরুল হুদা কমিশন ২০১৯ সালের নভেম্বরে মালয়েশিয়ায় অনলাইন নিবন্ধনের কার্যক্রম শুরু করেন।

পরে করোনা মহামারিতে সেই উদ্যোগ থমকে যায়। কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিশন আবার সেই কাজে গতি আনার উদ্যোগ নেয়। মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য, মালদ্বীপে পাঁচ হাজারেরও বেশি নাগরিক এনআইডি পেতে আবেদন করেছে। এর মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাতের পর পর্যায়ক্রমে প্রবাসে অন্যান্য দেশে এনআইডি সেবা দ্রুত চালুর প্রক্রিয়া চলবে।

ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ জানিয়েছিলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতে সফলভাবে পরীক্ষামূলক কাজটির পর আগামী এক বছরে অন্তত ১৫টি দেশে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য সেবা শুরুর প্রচেষ্টা হবে। এর মধ্যে বেশি রেমিট্যান্স আসে এমন দেশগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। প্রবাসে লেমিনেটেড এনআইডি দেওয়া হবে। কারণ স্মার্টকার্ড ছাপানো হবে দেশে। প্রবাসী যখন দেশে ফিরবেন তখন স্মার্টকার্ড সংগ্রহ করে নিতে পারবেন। ধীরে ধীরে ৪০টি দেশে এ সেবা চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে বিশ্বে ১৭৬টি দেশে ১ কোটি ৪৯ লাখের অধিক বাংলাদেশি কর্মরত রয়েছেন।