৫ বছরেও আলোর মুখ দেখেনি ‘ফ্লোটিং টার্মিনাল’, গচ্চা সাড়ে ৮ কোটি
দেশের মোট আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের ৯২ শতাংশ পণ্য হ্যান্ডলিং হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। সবশেষ ২০২১ সালে চট্টগ্রাম বন্দর রেকর্ডসংখ্যক ৩২ লাখ ১৪ হাজার ৫৪৮ টিইইউস কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করে।
প্রথম নিউজ, ঢাকা: ২০২১ সালে বন্দরকে আরও গতিশীল করতে বহির্নোঙরে ফ্লোটিং টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নেয় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। ২০১৭ সালে প্রায় আট কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্ট্যাডিও করা হয়। এরপর কেটে গেছে পাঁচ বছর। কিন্তু এখনো আলোর মুখ দেখেনি সেই ফ্লোটিং টার্মিনাল। এরই মধ্যে খরচ হয়ে গেছে সাড়ে আট কোটি টাকার বেশি।
২০১৭ সালের বন্দর কর্তৃপক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, প্রযুক্তিগত ও আর্থিক সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের ইতিবাচক প্রতিবেদন পেলেই দ্রুততম সময়ে এ ধরনের ভাসমান টার্মিনাল নির্মাণ করবে বন্দর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ফিজিবিলিটি স্ট্যাডিতে কী পাওয়া গিয়েছিল, আলোর মুখ দেখেনি সে বিষয়টিও।
বন্দর সূত্রে জানা যায়, ‘টেকনো-ইকোনমিক ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি অব এ ফ্লোটিং হার্বার অ্যাট দ্যা আউটার অ্যাঙ্কারেজ এরিয়া (বে অব বেঙ্গল) ইন চিটাগং পোর্ট’ শীর্ষক সমীক্ষা কাজের জন্য ২০১৭ সালের ২ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক দরখাস্ত (ইওআই) আহ্বান করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। ওই বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২৪টি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান সমীক্ষা কাজটি করতে আগ্রহ প্রকাশ করে। এর মধ্যে যাচাই-বাছাই করে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের সংক্ষিপ্ত তালিকা করে কর্তৃপক্ষ। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- নেদারল্যান্ডের পাবলিক ডোমেইন আর্কিটেক্টটেন, জার্মানির ডব্লিউটিএম ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্টারন্যাশনাল জিএমবিএইচ, দক্ষিণ কোরিয়ার য়্যুশিন ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন, ইতালির ডি’অ্যাপোলোনিয়া এসপিএ ইটালি এবং অস্ট্রেলিয়ার এসএমইসি ইন্টারন্যাশনাল প্রা. লিমিটেড।
যাচাই-বাছাই শেষে নেদারল্যান্ডসের প্রতিষ্ঠান পাবলিক ডোমেইন আর্কিটেক্টটেনকে ফিজিবিলিটি স্ট্যাডির জন্য চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত করা হয়। ২০১৭ সালের ১৪ ডিসেম্বর বন্দর কর্তৃপক্ষের সম্মেলনকক্ষে দু’পক্ষের মধ্যে সেই হয় চুক্তি। এতে বন্দর কর্তৃপক্ষের তৎকালীন চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম. খালেদ ইকবাল ও পাবলিক ডোমেইন আর্কিটেক্টটেনের প্রধান নির্বাহী পিটার বিগডর নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে চুক্তিতে সই করেন।
ফ্লোটিং টার্মিনাল নির্মাণের ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি কার্যক্রমে চুক্তির মেয়াদ ধরা হয় ছয় মাস। সমীক্ষার জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ পাবলিক ডোমেইন আর্কিটেক্টটেনকে দেয় প্রায় পৌনে ১০ লাখ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা সাড়ে ৮ কোটি টাকার বেশি। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে রাত-দিন কন্টেইনার হ্যান্ডলিং অপারেশন করার স্বপ্ন ছিল বন্দর কর্তৃপক্ষের। তথ্য অনুযায়ী, ফ্লোটিং টার্মিনাল প্রকল্পটিতে বছরে ৭ লাখ ৭৫ হাজার টিইইউস কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করার জন্য প্রাথমিক পরিকল্পনা নিয়েছিল কর্তৃপক্ষ।
সূত্রে জানা যায়, দেশের মোট আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের ৯২ শতাংশ পণ্য হ্যান্ডলিং হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। সবশেষ ২০২১ সালে চট্টগ্রাম বন্দর রেকর্ডসংখ্যক ৩২ লাখ ১৪ হাজার ৫৪৮ টিইইউস কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করে। এর আগের ২০২০ সালে ২৮ লাখ ৩৯ হাজার ৯৭৭ টিইইউস কনটেইনার হ্যান্ডলিং করেছিল চট্টগ্রাম বন্দর। ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে কার্গো হ্যান্ডলিংয়েও রেকর্ড করে বন্দর। ২০২১ সালে সর্বোচ্চ ১১ কোটি ৬৬ লাখ ১৯ হাজার ১৫৮ টন কার্গো হ্যান্ডলিং হয়। এর আগে ২০২০ সালে ১০ কোটি ৩২ লাখ ৯ হাজার ৭২৪ টন কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছিল। ২০২১ সালে চট্টগ্রাম বন্দর ৪ হাজার ২০৯টি জাহাজ হ্যান্ডলিং করে।
ফ্লোটিং টার্মিনাল বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক বলেন, ফ্লোটিং টার্মিনাল নির্মাণের জন্য ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি হয়েছিল। এরপর প্রকল্পটি আর এগোয়নি। এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বন্দরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ফ্লোটিং টার্মিনাল নিয়ে যারা ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি করেছিল, তারা প্রকল্পটি ভিজিবল বলে উল্লেখ করলেও পরবর্তীসময়ে আমরা আর এগোয়নি। কারণ সাগরের মধ্যখানে ঝড়ঝঞ্ঝা হওয়ার একটি ঝুঁকি রয়ে যায়। তাছাড়া আমাদের টার্মিনাল করার জন্য পর্যাপ্ত জমিও রয়েছে। যে কারণে আমরা ফ্লোটিং টার্মিনাল প্রকল্প থেকে ফিরে এসেছি।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: