২য় দিনের মতো চলছে কর্মবিরতি, কলেজ থেকে ঘুরে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা
প্রথম নিউজ, ঢাকা : বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির ডাকে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসনসহ বিভিন্ন দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো চলছে সরকারি কলেজের শিক্ষকদের সর্বাত্মক কর্মবিরতি। এর ফলে সরকারি কলেজে ক্লাস, অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা, শিক্ষা বোর্ড ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অধীনে ভর্তি, ফরম পূরণ, সব ধরনের পরীক্ষা, প্রশিক্ষণ কর্মশালা এবং দাপ্তরিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রয়েছে। যে কারণে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমার পাশাপাশি অনেককে ক্লাস বন্ধ দেখে ঘুরে যেতে দেখা গেছে।
বুধবার (১১ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর ঢাকা কলেজে এমন চিত্র দেখা গেছে। সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, সকাল ৮টা থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণির ক্লাস শুরু হওয়ার কথা থাকলেও কোনো শ্রেণিকক্ষই খোলা হয়নি। বিভাগগুলোতেও শিক্ষকদের উপস্থিতি নেই। কর্মচারীরাও আসছেন ঢিমেতালে। তবে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। যারা এসেছেন তাদের অধিকাংশই সম্প্রতি একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া নতুন শিক্ষার্থী। ক্লাসরুম বন্ধ দেখে তাদের অনেককে গ্যালারির সামনের করিডোর, প্রশাসনিক ভবন, বিজয় চত্বর, পুকুর পাড় এবং ক্যাফেটেরিয়ায় বিক্ষিপ্তভাবে হাঁটতে দেখা যায়।
নজরুল ইসলাম নামের এক শিক্ষার্থী বললেন, আমরা নতুন ভর্তি হয়েছি। কলেজের নিয়মকানুন খুব কড়া বিধায় কর্মবিরতির কথা জানার পরও দেখতে এসেছি। যদি পার্সেন্টেজ মিস হয় তাহলে ঝামেলায় পড়তে হবে। সেজন্য কোনো ঝুঁকি না নিয়ে কলেজ থেকে ঘুরে গেলাম।
সিয়াম রহমান আরিফ নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, কর্মবিরতি জানার পরও কলেজে এসেছি। মূলত ঘুরে দেখার জন্য আসা। ভর্তি হওয়ার পর থেকে আনুষ্ঠানিক ক্লাস ছাড়া এখন পর্যন্ত কোনো ক্লাস আমরা পাইনি। হয়ত কর্মবিরতির পর একাডেমিক ক্লাস শুরু হবে।
তবে দাবি আদায় না হলে কেন্দ্র ঘোষিত পরবর্তী কর্মসূচি আরও কঠোরভাবে পালন করা হবে বলে জানান বিসিএস শিক্ষা সমিতি ঢাকা কলেজ ইউনিটের সম্পাদক ড. মো. দিললুর রহমান। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন, সুপার নিউমারারি পদে পদোন্নতি, অধ্যাপক পদ তৃতীয় গ্রেডে উন্নীতকরণ, অর্জিত ছুটি প্রদান, ক্যাডার কম্পোজিশনের সুরক্ষা, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের নিয়োগবিধি বাতিল, শিক্ষা ক্যাডার তফসিলভুক্ত পদ থেকে শিক্ষা ক্যাডার বহির্ভূতদের প্রত্যাহার ও প্রয়োজনীয় পদ সৃজনসহ বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের সব ন্যায্য দাবি পূরণ করতে হবে। আমরা বৃহস্পতিবারও (১২ অক্টোবর) সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করব। গতকালের মতো আজও আমরা শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা কর্মস্থলে উপস্থিত থেকে পাঠদান, পরীক্ষা গ্রহণ, সভায় অংশগ্রহণ ও দাপ্তরিক কাজ থেকে বিরত থাকব।
ঢাকা কলেজ শিক্ষক পরিষদ সম্পাদক ড. মো. আব্দুল কুদ্দুস সিকদার বলেন, বৈষম্য নিরসনের বিষয়টি দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত বিষয়। বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষা থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত সার্বিক শিক্ষাব্যবস্থা পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের জন্য শিক্ষা ক্যাডার সৃষ্টি হলেও শিক্ষা ক্যাডারকে বিশেষায়িত পেশা হিসেবে গড়ে তোলা হয়নি। বঞ্চনা আর বৈষম্যের মাধ্যমে এ পেশার কার্যক্রম সংকুচিত করা হয়েছে। আমরা চাই যেন সুন্দর একটি পরিবেশ তৈরি করে দেওয়া হয়। তবেই দেশের শিক্ষার অগ্রগতি আরও উন্নত পর্যায়ে পৌঁছাবে।