হজযাত্রীদের জন্য অবশ্য পালনীয় কয়েকটি বিষয়
হজের জন্য চাই বিশুদ্ধ নিয়ত। নিয়ত বিশুদ্ধ না হলে ইবাদতও বিশুদ্ধ হবে না
প্রথম নিউজ, ঢাকা : হজের জন্য চাই বিশুদ্ধ নিয়ত। নিয়ত বিশুদ্ধ না হলে ইবাদতও বিশুদ্ধ হবে না। রাসূল (সা.) বলেন, নিশ্চয় আমলের প্রতিদান নিয়তের ওপর নির্ভরশীল'। (মুসলিম, বুখারি)। তাই হজের আগে খুব ভালোভাবে নিয়ত পরিশুদ্ধ করে নিন। শুধু আল্লাহর হুকুম পালন এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হজে যাচ্ছেন। সুতরাং সতর্ক থাকুন যেন চাল-চলনে, পোশাক-আশাকে, ভাব-ভঙ্গি বা কথাবার্তায় লোকদেখানো, আত্মম্ভরিতা বা আত্মঅহংবোধ প্রকাশ না পায়।
হালাল উপার্জন
শুধু হজের জন্য নয়, বরং জীবনের সবক্ষেত্রে হালাল উপার্জন অপরিহার্য। হালাল উপার্জন ইবাদত কবুলের শর্ত।
রাসূল (সা.) বলেন, বহু লোক দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে আসে এবং অত্যন্ত ব্যাকুলভাবে দু-হাত তুলে আল্লাহর দরবারে বলতে থাকে, হে পরওয়ারদিগার! হে রব! (আমার দোয়া কবুল কর) কিন্তু যেহেতু সে ব্যক্তির পানাহার সামগ্রী হারাম উপার্জনের, পরিধেয় পোশাক-পরিচ্ছদ হারাম উৎসের এ অবস্থায় তার দোয়া কি করে কবুল হতে পারে? (মুসলিম, তিরমিজি) তাই হজযাত্রীর উচিত হজের পাথেয় হালাল নাকি হারাম-সে ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা।
মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া
আপনি যদি কারও টাকা-পয়সা বা সম্পদ আত্মসাত্ করে থাকেন বা কাউকে দৈহিক বা মানসিক কষ্ট দিয়ে থাকেন তাহলে- পাওনাদারের ক্ষতিপূরণ দিয়ে অথবা ক্ষমা চেয়ে দায়-দায়িত্ব থেকে মুক্ত হয়ে হজের উদ্দেশ্যে যাত্রা করুন। কারণ, বান্দার হক আল্লাহও ক্ষমা করেন না। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, ঋণ পরিশোধ না করা পর্যন্ত মুমিনের রুহ (আত্মা) ঋণের সঙ্গে ঝুলে থাকে। (তিরমিজি)
কোনো পাওনাদারের যদি মৃতু্য হয়ে থাকে, তবে অর্থ-সম্পদের বিষয়ে তার উত্তরাধিকারীদের সঙ্গে নিষ্পত্তি করুন। সম্ভব না হলে পাওনাদারের জন্য সওয়াবের নিয়ত করে তার পক্ষ থেকে সমপরিমাণ অর্থ সদকা করে দিন।
দেনা-পাওনা সম্পূর্ণ আদায় না হলে এ সম্পর্কিত একটি তালিকা (ওসিয়তনামা) বাড়িতে আত্মীয়স্বজনের কাছে রেখে যান। পাওনা পরিশোধ করা সম্ভব না হলে পাওনাদার থেকে অনুমতি নিন, অন্যথায় হজে যাওয়া মাকরুহ হবে।
পরিবার-পরিজন
হজে যাওয়ার আগে পরিবার-পরিজনকে তাকওয়া অবলম্বন ও দ্বীনের ওপর চলার জন্য জোর উপদেশ দিন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সঠিক সময়ে, সহিহভাবে আদায় করার জন্য তাদের সুকেৌশলে, মিষ্টি ভাষায় নসিহত করুন। তাদের সার্বিক মঙ্গলের জন্য দেশে অবস্থানকালে এবং হজে গিয়ে দোয়া করুন।
বিবাহের দেনমোহর
আমাদের সমাজে অনেকেই বিবাহের দেনমোহর পরিশোধের ব্যাপারে উদাসীন থাকেন। অথচ দেনমোহর স্বামীর ঋণ-এ ঋণের প্রাপক স্ত্রী। এ থেকে মুক্তি পাওয়ার দুটি মাত্র পন্থা, হয় ওয়াদামাফিক পরিশোধ করতে হবে, নতুবা স্ত্রী মনের খুশিতে মাফ করে দেবেন। মোহরের ঋণ নিয়ে স্বামী মারা গেলে তাকে সেজন্য জবাবদিহি করতে হবে। মোহরের ঋণ মাফ করে দেওয়ার জন্য স্ত্রীর প্রতি জোর-জবরদসি্ত করা কঠিন গোনাহের কাজ। আপনি দেনমোহর পরিশোধ না করে থাকলে হজে যাওয়ার আগে দেনমোহরের একটি সমাধান করে যান।
(মরহুম আলহাজ শেখ গোলাম মুহীউদ্দীন রচিত 'কিতাবুল হজ' অবলম্বনে)