সরকার দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির পায়তারা করছে: মির্জা ফখরুল
আজ রোববার বিকালে নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশে তিনি এই মন্তব্য করেন।
প্রথম নিউজ, ঢাকা: সরকার দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির পায়তারা করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ রোববার বিকালে নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশে তিনি এই মন্তব্য করেন। ঢাকা মহানগর বিএনপি উত্তর-দক্ষিনের যৌথ উদ্যোগে ঢাকার পল্লবীসহ সারাদেশে দলের কর্মসূচিতে পুলিশি গুলিবর্ষন ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের হামলার প্রতিবাদে এই সমাবেশ হয়।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই যে আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন শুরু হয়েছে, এই আন্দোলন শুরু হয়েছে আমাদের সাধারণ মানষের চাল-ডাল-তেলের দাম কমানোর জন্য, আমাদের আন্দোলন শুরু হয়েছে দুর্নীতি নির্মূল করার জন্য, আমাদের আন্দোলন শুরু হয়েছে ভোটের অধিকারকে রক্ষার করার জন্য তখন এই আওয়ামী লীগের সরকার তারা তাদের পেটুয়া বাহিনী নামিয়ে দিয়েছে। ওরা হত্যা করেছে ভোলা ছাত্র ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকে ও নারায়গঞ্জে যুবদলের নেতাকে। গতকাল আপনারা দেখেছেন আমাদের স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা বেগমকে আহত করেছে, আমাদের ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলুকে আঘাত করেছে, আমাদের নারী নেত্রীদেরও তারা রেহাই দেয়নি, তাদেরও তারা আঘাত করেছে। আজকে এই সরকার একটা নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে চায়। বাংলাদেশের মানুষ যখন তাদের অধিকার আদায়ের জন্য লড়াই করছে, সংগ্রাম করছে তখন তারা সন্ত্রাস, হত্যা, সভা পন্ড এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে তারা নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে চায়। যাতে করে তাদের ক্ষমতায় টিকে থাকতে সোজা হয়, সহজ হয়।
মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, আজকে বিভিন্ন জায়গায় আপনারা(ক্ষমতাসীনরা) সন্ত্রাস করছেন এবং সভা-সমাবেশ করতে অনুমতি দিচ্ছেন না। আমি বলতে চাই, এসব করবেন না। এভাবে বাংলাদেশের মানুষকে ঠেকিয়ে রাখা যাবে না, নিপীড়ন-দমন করে বাংলাদেশের মানুষ কখনো দাবিয়ে রাখতে পারবেন না। দুর্বার গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে আপনাদেরকে পরাজিত করা হবে।
রাজধানীতে চলমান কর্মসূচির সময়ে দলের গ্রেফতারকৃত নেতা-কর্মীদের অবিলম্বে মুক্তি দাবি জানান বিএনপি মহাসচিব।
সরকারের কোমড় সোজা নাই বলে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, মিয়ানমার বোমা মেরে শেষ করে দিচ্ছে। তারা সীমান্তে বোমা মারছে, আমাদের এখানে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের তারা গুলি করছে। সরকার নিরব। নিরব কেনো? আসলে এদের(সরকার) কোমড় সোজা নাই। জনগণের দ্বারা নির্বাচিত নয় বলে তারা বুক ফুলিয়ে মিয়ানমারের বোমা নিক্ষেপের প্রতিবাদ করতে পারছে না, বিশ্ব জনমতকে একখানে আনতে পারছে না। তিনি সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, এখনো সময় আছে পদত্যাগ করুন, পদত্যাগ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা দিন। সংসদ বিলুপ্ত করুন এবং একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করে নতুন পার্লামেন্ট ও সরকার তৈরি করতে হবে। আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হই। আহবান জানাব সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে, সমস্ত গণতন্ত্রকামী মানুষকে এবং দেশপ্রেমিক মানুষকে আমরা একসঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই ভয়াবহ দানবীয় শক্তি এই আওয়ামী লীগকে যারা জোর করে ক্ষমতা দখল করে আছে তাদেরকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা করি।মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ওরা মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। এই কথা বললে তাদের গায়ে আগুন লাগে, তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠে। বলে আমরা তো এই সমস্তের মধ্যে নাই। কিছু দিন আগে গুমের কথা বলা হলো তারা বললো গুম হয় না। এটা নাকী তারা নিজেরা নিজেরা গুম হয়ে যায় অথবা ভূমধ্য সাগরে পানির নিচে গিয়ে ডুবে মরে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রধান ঢাকায় এসে বলেছেন, বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে, এখানে গুম হচ্ছে, এখানে মানুষের অধিকার কেড়ে নেয়া হচ্ছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আওয়ামী লীগ গত ১৫ বছরে বাংলাদেশের অর্জন, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার ব্যস্থা, অর্থনৈতিক অবস্থাসহ সব কিছু ধ্বংস করে দিয়েছে। সর্বক্ষেত্রে তারা লটু করছে, পাচার করছে। পত্রিকায় এসেছে- জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কমিশন বলছে, বাংলাদেশে গুম বেড়ে গেছে। ৮৮ জনের ব্যাপারে অনুসন্ধান করছে। তাদের মধ্যে দুইজনকে ফিরে পেয়েছে বলে সরকার তাদের উত্তর দিয়েছে। বাকিদের ব্যাপারে বলবে কোথা থেকে, তারা নিজেরাই গুম করেছে।
আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে মানুষের অধিকারগুলো নিয়ে আন্দোলন করছি। জিনিসপত্রে দাম কমানোর কথা বলছি। কৃষক সার পাচ্ছে না। পেতে হলে বেশি টাকা দিতে হয়। শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য মজুরী পায় না। কয়েকদিন আগে চা শ্রমিকদের মজুরী ২০ টাকা বাড়িয়ে ১৭০ টাকা করা হয়েছে। দেশের শতকরা ৪২ শতাংশ মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে বাস করছে। তারা দুই বেলা দুমুঠো খেতে পায় না। এই সরকার দাবি করে তারা অনেক উন্নয়ন করেছে। তারা উন্নয়ন করেছে নিজেদের। জনগনের পকেট কেটে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। পুলিশের সিআইড বলেছে, বছরের ৭৫ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যায়। ইকোনমিস্টপত্রিকা বলছে, বাংলাদেশ একটা কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্র। গণতন্ত্রের সূচকে এর অবস্থান ১৬২তম। এ দেশে মানুষের কোনো স্বাধীনতা নেই। কথা বলা বা বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই। তিনি বলেন, সেই রাজনৈতিক দল হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এই ভয়বহ দানবীয় শক্তি এই আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের নিরব কর্মসূচিও সরকারের সহ্য হলো না। তাহলে কী দাঁড়ালো? এদেশের মানুষ কথা বলতে পারবে না। আপনারা নিপীড়ন নির্যাতন করে যাবেন আর আমরা সহ্য করতে থাকবো। আমি বলতে চাই এটা আর হবে না। যথেষ্ট হয়েছে। সারাদেশের জনগণ আজকে ফুঁসে উঠেছে, সারা বাংলাদেশের জনগন আজ রাজপথে নেমে এসেছে। সভা-সমাবেশে সরকার বাঁধা প্রদান ও অনুমতি দিচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
শনিবারে রাজধানীর বনানীতে মোমবাতি প্রজ্বলন কর্মসূচিতে হামলা প্রসঙ্গে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগ সন্তাসীরা বিএনপির একটি শান্তিপূর্ণ মোমবাতি প্রজ্বলন কর্মসূচিতে হামলা করেছে। এটা ভাবা যায় ৮০ বছর বয়সি একজন নেতা ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমানকেও তারা আহত করেছে। এতেই প্রমান করে আওয়ামী লীগ একটি সন্ত্রাসী দল। শেখ হাসিনা সরকারের সাথে ‘৭১ এর পাকিস্তানের ঘাতক সরকারের কোনো পার্থক্য নেই। অন্যদিকে, বিএনপি হচ্ছে গণতন্ত্র ও শান্তিতে বিশ্বাসীদের দল। লড়াই করে,সংগ্রাম করে আমরা দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবো।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুর পরিচালনায় সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, জয়নুল আবদিন ফারুক, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, মশিউর রহমান, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সাবেক সংসদ সদস্য ফজলুল হক মিলন, বিএনপির তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাসুদ আহমেদ তালুকদার, মুন্সিগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন, বিএনপির স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, যুব বিষয়ক সহ সম্পাদক মীর নেওয়াজ আলী, যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খান, যুব দলের সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, সাধারণ সম্পাদক মোনায়েম মুন্না, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী,সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান, কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল, ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবন, সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলসহ মহানগরের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
পরে নয়াপল্টনের সমাবেশ থেকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল এভারকেয়ার হাসপাতালে দলের আহত ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু ও তার সহধর্মিনীকে দেখতে যান। তিনি চিকিতসকদের কাছ থেকে তাদের চিকিৎসার খোঁজ-খবর নেন।